Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আত্মরক্ষায় কারাতে

| প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. আলতাফ হোসেন : জুডো, কুংফু ও কারাত একটি অপরটির পরিপুরক। কুংফু হচ্ছে এক প্রকারের কারাতে বা মার্শাল আর্ট। জাপানি ভাষায় ‘জুদো’- যার বাংলায় অর্থ ‘ধীরপথ’। ভাষাগত কারণে আমরা এটাকে বলি জুডো। এটি একটি আধুনিক মার্শাল আর্ট। যুদ্ধ বিষয়ক অলিম্পিক খেলা। যে খেলার উৎপত্তি ১৮৮২ সালে, জাপানে, জিগরো কানোর মাধ্যমে। জুডোর বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় দিকটি হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক উপাদান।
যেখানে লক্ষ্য থাকে প্রতিপক্ষকে মাটিতে নিক্ষেপ করা বা আছাড় মারা। প্রতিপক্ষকে আঁকড়ে ধরা অথবা প্রয়োগে গিট আবদ্ধের মাধ্যমে বা শ্বাস রোধের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে আত্মসম্পর্ণ করতে বাধ্য করা। হাত ও পায়ের মাধ্যমে আঘাত করা এবং ধাক্কা অধিকন্ত প্রতিরক্ষা জুডোর অংশ। আর কারাতে অর্থ খালি হাতে খেলার একটি পদ্ধতি। শারীরিক সুস্থতার জন্য এবং শারীরিক ফিটনেসসহ ওজন কমানোর উপায় হিসেবে মার্শাল আর্ট ও কুংফু কারাতে খুব কার্যকরী ব্যায়াম। কারাতে শিক্ষার মাধ্যমে আত্মরক্ষা করতে শিখে আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায়। খালি হাতে যুদ্ধ করার কলা কৌশলকে কারাতে বা মার্শাল আর্ট বলে। জুডো, কুংফু, কারাতে বা মার্শাল আর্ট যে নামেই ডাকা হোক না কেনো- এ খেলার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ একই। প্রিয়পাঠক ‘আত্মরক্ষায় কারাতে’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের অষ্টম পর্বে আজ থাকছে ‘উসাঠাকিরী’ অর্থাৎ ব্যাক কিক বা লাথি।
উসাঠাকিরী.....
কিক বা লাথি ইভেন্টে বেশ ক’টি আইটেম আছে। যার মধ্যে অন্যতম কিঙ্গারি, উসাঠাকিরি উল্কাগিরি, মাউশিগিরি ও ইটাগিরি। আজকের পর্বে আমরা শিখবো উসাঠাকিরি অর্থাৎ ব্যাক কিকের ব্যবহার। যে কোনো কঠোর প্রশিক্ষণের পূর্বে ওয়ার্মআপ ও ব্যায়ামের প্রয়োজন। আর ওয়ার্মআপের মাধ্যমেই শরীরকে ব্যায়ামের উপযোগী করে নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করতে হয়। তাছাড়া ওয়ার্মআপ বা ব্যায়াম ছাড়া কারাতে প্রশিক্ষণের জন্য হবে অনুপযোগী। শরীরকে প্রশিক্ষণের উপযোগী করেই অনুশীলন করতে হবে। অনুশীলনের আগে ওয়ার্মআপ বা ব্যায়াম না করলে তা হবে শারীরের জন্য বিপজ্জনক। আর মনে রাখতে হবে, প্রতিটি ব্যায়ামের ওয়ার্মআপ কিন্তু ভিন্ন রকম হতে পারে। তাই কারাতে প্রশিক্ষণের পূর্বে এর উপযোগী ব্যায়াম করে নিলে ভালো হয়। ঠিক পূর্বের ন্যায় ছালাম বো, কিবাডাসি পজিশনে থেকে অনুশীলন শুরু করতে হবে। নতুন লেসনের সাথে পুরানো লেসনগুলোও অনুশীলন করতে হবে। যাতে দক্ষতা বাড়ে। আর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়েই রপ্ত করে নিতে হবে কারাতে প্রশিক্ষণের প্রতিটি কৌশল ও লেসন। উসাঠাকিরি অনুশীলন বা প্রশিক্ষণের সময় অবশ্যই কিবাডাসি অবস্থায় থাকতে হবে এবং হাত দুটি মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় কোমড়ের দুই পাশে থাকবে। প্রথমে ডানপায়ে উসাঠাকিরি করার সময় একই সাথে কোমড়ে থাকা মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত বুক বরাবর ডান হাতের উপরে বাম হাত ক্রস অবস্থায় চলে যাবে এবং সেই সঙ্গে ডান পা মাটিতে রেখে বাম পা দিয়ে সোজা পেছনের দিকে সজোরে লাথি বা কিক করতে হবে অর্থাৎ উসাঠাকিরি মারতে হবে। মারার সময় টো দিয়ে কিক করতে হবে হোইস শব্দের মাধ্যমে। উসাঠাকিরি মারার সময় ঘাড় একটু ডান দিকে ঘুরে আড়– চোখে কিক করতে হবে। আনার সময় কিবাডাসি অবস্থায় যাওয়ার পুর্বে হাটুটি একটু ঘুড়িয়ে তারপর কিবাডাসি পজিশনে যেতে হবে। তেমনি ভাবে কিবাডাসি পজিশনের আসার পর আবার একই কায়দায় ঠিক ডানপায়ে উসাঠাকিরি করার সময় যেমন হাত দুটি ক্রোস করা হয়েছিল এখন ঠিক তার বিপরীত। এবার বামপায়ে যখন উসাঠাকিরি করা হবে তখন বাম হাতের ওপরে ক্রোস অবস্থায় ডান হাতটি থাকবে সেই সাথে হাটুটি ভেঙে সোজা পেছনের দিকে টো দিয়ে লাথি মারতে হবে অর্থাৎ উসাঠাকিরি মারতে হবে। এবারও মারার সময় বাম দিকে ঘাড়টি একটু ঘুরে আড় চোখে মারতে হবে। আনার সময় হাটুটি একটু ঘুড়িয়ে আবার কিবাডাসি পজিশনে চলে যেতে হবে। এভাবে একবার ডান পায়ে একবার বাম পায়ে উসাঠাকিরি করতে হবে। মারার সময় অবশ্যই হাতের ও পায়ের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে হবে। তা না হলে আর্ট অসুন্দর হবে এবং শিক্ষার্থীর উসাঠাকিরি সহজেই আয়ত্বে আসবে না।
উসাঠাকিরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীর হাত ও পায়ের ভারসাম্য ঠিক হয়। পেছনে শত্রæ পক্ষকে আঘাত করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে এ উসাঠাকিরি। এছাড়াও পায়ের শক্তি ও বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। যে যতো বেশি অনুশীলন করবে, সে তত বেশী আয়ত্বে আনতে পারবে উসাঠাকিরি। যতক্ষণ পর্যন্ত সঠিক না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রশিক্ষণার্থীকে উসাঠাকিরি অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। এদিকে প্রশিক্ষকের তীক্ষè নজর থাকবে। কারণ সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই প্রতিটি শিক্ষণার্থীকে রপ্ত করে নিতে হবে তার প্রতিটি লেসন। তা না হলে একজন দক্ষ বা অভিজ্ঞ ফাহটার হতে পারবে না সে। পরবর্তী ধাপগুলোতে পৌঁছাতে হলে প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থীকে সঠিকভাবে তার লেসন শিখে নিয়ে অনুশীলন করতে হবে। তবেই সে তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে অর্জন করে নিতে সক্ষম হবে এ কারাতে প্রশিক্ষণের প্রতিটি ধাপ।
পৃথিবীতে যারা বিখ্যাত মার্শাল হিরোর আসনে অলঙ্কৃত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ব্রæসলি ও জেকি চ্যাঁন এর নাম উল্লেখযোগ্য। তাঁদের অনুস্মরণ করে আমাদের জীবনের সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কারাতের সর্বোচ্চ আসনে নিজেকে একজন যোগ্য দক্ষও অভিজ্ঞ মার্শাল হিরো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তুলতে হবে। ছেলেদের পাশাপাশি এখন মেয়েরাও বিভিন্ন মার্শাল আর্ট স্কুলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মার্শালআর্ট একদিকে শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য রক্ষাকবজ অপর দিকে শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে, আত্মবিশ্বাস অর্জনে এবং আত্মরক্ষায় কারাতের কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ, কারাতে কোচ ও চেয়ারম্যান, মানিকগঞ্জ গ্রীণ ক্লাব



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন