Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খুলনায় ভূমি কর্মকর্তাকে বেধড়ক মারপিট টাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ লুট

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খুলনা ব্যুরো : খুলনার কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে লুটপাট, ভাঙচুর ও ভূমি কর্মকর্তাকে বেধড়ক মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যার এঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনকে আসামী করে কয়রা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। হামলাকারীরা সিন্ধুক থেকে খাজনা কর্তন বাবদ সরকারি অর্থ ৫৫ হাজার ৮৫৬ টাকা, ক্যাশ রেজিস্ট্রার (া), উলা মৌজার রেজিস্ট্রার (১ ও ২) সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। হত্যা চেষ্টাকারীদের ভয়ে কয়রা থেকে শ্যামনগর-সাতক্ষীরা হয়ে পালিয়ে খুলনা শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন ভূমি কর্মকর্তা জাকির হোসেন। কয়রা উপজেলার উলা মৌজার এসএ-১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ২৩, ২৫ ও ২৭ দাগে আনুমানিক দুই কোটি টাকা মূল্যের দুই একর খাসজমির খাজনা দাখিলা কাটার অবৈধ সুযোগ না দেবার জেরধরে এ হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত ওই সম্পত্তিতে খুলনা যুগ্ম-জেলা জজ ৪র্থ আদালতে দেওয়ানী মামলা চলমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে কয়রার উলা মৌজার ওই খাসজমির খাজনার দাখিলা কাটার জন্য আমাদী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আসে জায়গীরমহলের বাসিন্দা আবুল হোসেন সরদারের ছেলে সায়ায়েত (৩০), মৃত সন্তোষ দাশের পুত্র দীপঙ্কার দাস (২৮), রহমত মোল্যার ছেলে রবিউল (২৫), ওমর আলী মোল্যার ছেলে এয়াকুব (২৫), আমাদীর বাসিন্দা মৃত জাহাঙ্গীর শেখের ছেলে রাকিব (২৫), আব্দুর রহিমদ সরদারের ছেলে ইউনুস (৩০), শুকুর সরদারের ছেলে সাইফুল (২৮)সহ অজ্ঞাত আরো ৫/৬ জন। তারা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেনকে কয়রা উপজেলার উলা মৌজার এসএ-১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ২৩, ২৫ ও ২৭ দাগে আনুমানিক দুই কোটি টাকা মূল্যের দুই একর খাসজমির খাজনা দাখিলা দিতে বলে।
এরপর গত ১০ জানুয়ারি কয়রা উপজেলা উন্নয়ন মেলায় এসেও একদফায় হুমকি দেয় ওরা। এ অবস্থায় গত ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উক্ত আসামীরা ভূমি অফিসে এসে বিরোধীয় জমির খাজনার দাখিলা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এসময় আসামীরা ভূমি কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেনকে বেধড়ক মারপিট শুরু করে। একপর্যায়ে তার গলায় থাকা মামলার শক্ত করে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে আসামীরা। এরমধ্যে অফিসে খাজনা কর্তন বাবদ সিন্দুকে রক্ষিত ৫৫ হাজার ৮৫৬ টাকা, ক্যাশ রেজিস্ট্রার (া), উলা মৌজার রেজিস্ট্রার (১ ও ২) সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও মালামাল লুটপাট করে নিয়ে নেয়। পরে স্থানীয়রা ও ভূমি অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরা এসে ভূমি কর্মকর্তা জাকির হোসেনকে উদ্ধার করেন। সম্পূর্ণ ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে কয়রা থানার ওসিকে জানালেও কোন ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ ভূমি কর্মকর্তা জাকির হোসেনের। পরে অতিগোপনে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আশ্রয়ে এসে তাঁর পরামর্শ মোতাবেক গত ১৭ জানুয়ারি রাতেই কয়রা থানায় এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু মামলাটি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান ওসি। উল্টো তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে বলে ভয়-ভীতি দেখানো হয় বলে অভিযোগ ভূমি কর্মকর্তার। পরদিন ১৮ জানুয়ারি কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বদিউজ্জামান মামলার এজাহারটি সংযুক্ত করে দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কয়রা থানার ওসিকে অনুরোধ জানান। যার অনুলিপির মাধ্যমে সরকারি অর্থ লুট ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কে অবহিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শমসের আলী বলেন, ঘটনার সময় এস আই ইকবাল উপস্থিত ছিল না। সে ছিল স্থানীয় ফাঁড়িতে। ঘটনাটি শুনে, আমি তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। মামলা হয়েছে, আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এখনো কিছুই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ নাজমুল আহসান বলেন, ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। সরকারি অর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র উদ্ধারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ