Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রাজধানীর পাড়া মহল্লার মোড়ে ও ক্লাবগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

উঠতি বয়সের অপরাধীদের শনাক্ত করাসহ জুয়ার স্থান ও বিভিন্ন ক্লাবের তালিকা হচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার : এবার রাজধানীর মোড়ে মোড়ে পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন ক্লাব, ফুট কোর্ট, বিপণি বিতানসহ অলি-গলির ফাস্টফুড ও বিভিন্ন যুব ক্লাবে চলছে গোয়েন্দা নজরদারি। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নতুন করে কিছু স্পট কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তরা এলাকায় উঠতি বয়সের তরুণদের গ্রুপিং ও আধিপত্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। পাশাপাশি ক্লাব ও আবাসিক হোটেল ও চায়নিজ রেস্তোরাঁতে জুয়া ও অসামাজিক কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপরাধ দমনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে নির্মাণাধীন ভবন, বিভিন্ন আবাসিক এলাকার গলির মোড়, যুব সংঘগুলো, শপিং সেন্টারের ফুড কোর্ট এবং ফাস্টফুড শপ প্রভৃতিতে চলছে অভিযান। পুলিশ বলছে, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এসব উঠতি বয়সের অপরাধী ও তাদের সহযোগীদের শনাক্ত করে তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে।
গোয়েন্দাদের হাতে থাকা তথ্য অনুসারে, রাজধানীর যুব সংঘগুলো বিভিন্ন সময়ে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকলেও প্রায় প্রতিটি সংঘের পেছনে এলাকার সিনিয়রদের ভূমিকা থাকে। এসব ‘সিনিয়র’দের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার পাশাপাশি ব্যবসায়িক কার্যক্রমও খতিয়ে দেখতে চাইছে গোয়েন্দারা। কারণ সৃজনশীল মনোভাব নিয়ে এসব ক্লাবে যোগ হওয়া কিশোররা সিনিয়রদের দ্বারা বিপথগামী হচ্ছে। আর এ ধরনের  আশঙ্কার কারণেই তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে উঠতি বয়সের সন্ত্রাসীরা। রাজধানীর উত্তরা, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মিরপুর, পল্লবী, বাড্ডা, ভাটেরা উত্তরখান, দক্ষিণখান এলাকাতেই গড়ে উঠেছে ৫ হাজার ক্লাব ও জুয়ার আসর। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে উঠতি বয়সের সন্ত্রাসীগুলোর কথিত বড় ভাইয়েরা।  গোয়েন্দারা বলছে, আধিপত্য বিস্তার এবং ক্লাবভিত্তিক সহ¯্রাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে রাজধানীতে। প্রতি মাসেই বিভিন্ন নামে গড়ে তোলা হচ্ছে ক্লাবের নামে বিভিন্ন গ্যাং। এরাই মারামারি, ছিনতাই, ডাকাতি, জুয়া খেলাসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকা-ে জড়িত রয়েছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে তরুণ যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ যৌবনদীপ্ত যুবসমাজ হচ্ছে তারুণ্যের অহঙ্কার। তারা যদি এগিয়ে না আসে তাহলে দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু তরুণদের মধ্যে এই উদ্দীপনা সৃষ্টির মাধ্যমেও ধ্বংসাত্মক কর্মের দিকে এগিয়ে নিতে পারে চতুর এবং অসৎ পথনির্দেশকরা। তাই এসব তরুণকে বিপথগামিতার হাত থেকে রক্ষা করতে প্রশাসনের নজরদারির বিকল্প নেই।
ডিএমপির মিডিয়া শাখার প্রধান উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছেন, জুয়া ও অসামাজিক কর্মকা- প্রতিরোধ করতে পুলিশের গোয়েন্দা টিম মাঠে নেমেছে। ক্লাব বা আধিপত্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাজধানীতে যেসব সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা এসব সন্ত্রাসী গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে বা সহযোগিতা করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীতে বিভিন্ন পর্যায়ের নজরদারি বাড়ানোর ফলে নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তা হলো, আগে রাজপথে প্রায়ই সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের হাতে সর্বস্ব খোয়াতে হতো সাধারণ মানুষকে। সম্প্রতি রাজধানীর রাজপথগুলোতে সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং, পুলিশের জোরালো তৎপরতা এবং নারী ও পুরুষ গোয়েন্দা দল মাঠে নামানোর ফলে ছিনতাইকারীরা রাজপথ ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের নিরাপদ আশ্রয় এখন রাজধানীর বিভিন্ন উন্নত এলাকাগুলোর গলিপথ। কিছুদিন ধরে বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে ছিনতাইকারীদের উপদ্রব বেড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে এলাকার বখাটে ছেলেদেরও ইন্ধন থাকতে পারে বলে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন। তাই কিশোরদের টার্গেট করে পরিচালিত কার্যক্রমে ছিনতাইকারী এবং তাদের ইন্ধন ও আশ্রয়দাতাদেরও খুঁজে বের করার পরিকল্পনা নিয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের স্পটে আড্ডাবাজি হয়। স্বাভাবিক আলাপ বা আড্ডা কোনো সমস্যা নয়, কিন্তু গোয়েন্দাদের নজর থাকবে, এ ধরনের আড্ডায় তরুণদের আড্ডার বিষয়বস্তু নিয়ে। বিশেষ করে উত্তরায় আদনান হত্যাকা-ের পর ‘কিশোর গ্যাং’ বিষয়টির অস্তিত্ব পাওয়ার পর। এছাড়া সম্প্রতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা জঙ্গিদেরও মূল টার্গেট থাকে তরুণরা। তাই এ ধরনের স্পটকে নজরদারিতে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সিভিল টহলের পাশাপাশি জোরদার করা হবে সিসিটিভি কাভারেজ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মিরাশ উদ্দিন বলেন, আমরা দেখেছি বন্ধু-বান্ধব মিলে বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দেয়। এটাকে কেন্দ্র করে তেমন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় না। কিন্তু সম্প্রতি উত্তরায় কিশোর বয়সীদের গ্যাং চর্চার বিষয়টি প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। অন্যান্য আবাসিক এলাকাও তাই নজরদারির আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সাধারণত রাজধানীর বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবনে জুয়া খেলা হয়। এসব জুয়ার আসর বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম ঘটানোর জন্য উসকানিদাতা হিসেবে পুলিশ শনাক্ত করেছে। পুলিশ ধারণা করছে, এসব জুয়া খেলা বা আড্ডার স্থল হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবনে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং অপরাধের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এমনিতেই মাঝে মধ্যে খবর পাওয়া যায়, কোনো পরিত্যক্ত ভবন বা নির্মাণাধীন ভবনে কোনো কিশোরী শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে। এ ধরনের স্থানে প্রায়ই যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এবার এসব স্থান পুলিশের কড়া নজরদারিতে আনা হচ্ছে।
পাশাপাশি বিভিন্ন আবাসিক এলাকার গলির মোড়, শপিং সেন্টারের ফুড কোর্ট এবং ফাস্টফুড শপগুলোতে কিশোর-তরুণদের আড্ডা জমে। এসব আড্ডা সময় কাটানো বা অন্য কোনো গঠনমূলক কাজে ব্যয় হলে সমস্যা নেই, কিন্তু কোনো ধরনের পরিকল্পনা করার জন্য ব্যবহার হলে তা শনাক্ত এবং প্রতিরোধের পরিকল্পনা রয়েছে পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।  এর পাশাপাশি নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার কিশোরদের সামাজিক সংগঠনগুলোতেও।
জানা গেছে, এরই মধ্যে স্থানীয় থানার মাধ্যমে এলাকার টিনেজদের বিষয়ে প্রাথমিক মন্তব্য গ্রহণ করার কাজ চলছে। এর মাধ্যমে গোয়েন্দারা জানতে চাইছে রাজধানীর কোন এলাকার কিশোরদের মধ্যে সংঘবদ্ধ হয়ে কার্যক্রম করার প্রবণতা রয়েছে। এক্ষেত্রে যুব সংঘগুলোও নজরদারির আওতায় আসছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানী

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২
১১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ