পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আসলাম পারভেজ, হাটহাজারী : হাটহাজারী উপজেলার সদর থেকে শুরু করে গ্রাম অঞ্চল পর্যন্ত ফসলী জমিতে ইটভাটা, বাড়ি ও প্লট নির্মাণ, পাহাড় কাটা আর খাল ও ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে ভৌগলিক পরিবেশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ও জনজীবনে হুমকির আশঙ্কা বিরাজ করছে।
জানা যায়, বিগত ২০ বছর ধরে হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ফসলী জমিতে ইটভাটা ও প্লটসহ বাড়ি নির্মাণ, পাহাড় কাটা, জলাশয় ভরাট, জমি ভরাট করে ভিটা নির্মাণ এমনকি পাহাড়ি বনজ সম্পদ (কাঠ) কাটা। পাশাপাশি চারুকল বসানোর কারণে হাটহাজারীর প্রাকৃতিক পরিবেশ যেন দিন দিন দ্রæত পরিবর্তন হচ্ছে। উপজেলার ৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা পরিদর্শন করে এক নজরে দেখা যায়, হাটহাজারীর প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক পরিবেশ পরিবর্তনের সূচনা নজরে পড়ে। গত ২০ বছরে উপজেলার সদরসহ গ্রাম অঞ্চলে যেসব জমিতে নানা প্রজাতির সোনালী ধানের শীষ নজর কেড়েছে সেই জমিগুলোতে এখন ইটভাটা আর আবাসিক প্রকল্পসহ বাড়ি ও ভিটা নজরে পড়ছে। নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার ফলে এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্যের পাশাপাশি ভৌগলিক অবস্থাও মারাত্মক রূপ ধারণা করেছে। এই সব প্রাকৃতিক শক্রদের ছোবল থেকে রেহায় পাচ্ছেনা। উপজেলার একটি পৌরসভা ১৪টি ইউনিয়নের অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ। স্বাধীনতার পর থেকে সরকারি বনজ ও ফলদ সম্পদের গাছগুলোকেও বাঁচতে দিচ্ছে না প্রাকৃতিক শক্ররা। উপজেলার এগার মাইল ও নাজির হাট বনবিটের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় পাহাড় থেকে শিশুগাছসহ সব ধরনের কাঠ কেটে বনসম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি উজাড় করছে পাহাড়। পাহাড়ের মাটি দিয়ে ইট তৈরি ও কয়লার পরিবর্তের পাহাড়ের কাঠ পোড়ানো, পুকুর, ডোবা, খাল, ফসলী জমি ভরাট সহ নিয়ম নীতি ছাড়া ভবন নির্মাণ স্থানে স্থানে অবৈধ করাত কল স্থাপন করার ফলে এলাকার পরিবেশের এই নেতিবাচক পরিবর্তন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের চোখের সামনে এই কাজ চলতে থাকলেও আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না কোনো দফতরের কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় কোটিপতিদের কালো টাকার ছোঁবলে দেশের আইনকে যেন পাত্তাই দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। উপজেলার জলবায়ুকে নেতীবাচক প্রভাব বৃদ্ধি পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এলাকার জনজীবন। ৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে দক্ষিণে মদুনা ঘাট, উত্তরে নাজিরহাট ব্রিজ, পূর্বদিকে সত্তারঘাট, পশ্চিমে পাহাড়ি এই এলাকার মধ্যে বৈধ ও অবৈধভাবে মিলিয়ে অন্তত শতাধীক ইটভাটা, ২০টির উপরে চারুকল মিশিন, পাঁচ শতাধীকের উপর করাতকল, তিন শতাধীকের মতো পুকুর ও ডোবার ভরাট, শত শত হেক্টর ধানী জমিতে বাড়ি, ভবন ও পট তৈরি করে যাচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলার মদুনাঘাট থেকে হাটহাজারী নাজিরহাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার অরক্ষিত হয়ে পড়েছে হালদা নদী। হালদা নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে শত শত ট্রাক বালু উত্তোলন, পাহাড় থেকে গাছ কাটায় হাটহাজারী উপজেলার জলবায়ুর পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
হাটহাজারীতে সড়কের পাশে ও খাল, ছড়া নদীগুলো দখল করার জন্য প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। এসব আবর্জনাগুলো দুর্গন্ধে ও ডোবা ভরাট করার ফলে জলবায়ু ও ভৌগলিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে পৌঁছেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খাল, নদী, ডোবা, পুকুর, ধানী জমিতে প্রকল্প নির্মাণ, পাহাড়ী মাটি দিয়ে ইট তৈরি বনসম্পদে শিশু গাছ কাটা, ইটভাটা চারুকল স্থানে স্থানে অবৈধ করাত কল, খালের ও ছড়াসহ রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলার কারণে ছড়াগুলোর পানির চলাচল বন্ধ। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন টাঙ্গানোসহ নানা কারণে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এদিকে উপজেলা জুড়ে বেশ কয়েকটি কোম্পানি শত শত একর ধানী জমিতে প্রকল্পে প্লট তৈরি করে ব্যবসা শুরু করলেও ধানের জমির সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়াতে পরবর্তীতে হাটহাজারীতে ব্যাপক খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।