Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতজনিত রোগে ১৩ জনের মৃত্যু

শিশুরা বেশি কাবু হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : দেশব্যাপী জেঁকে বসেছে শীত। চলতি শীত মৌসুমে দেশে শীতজনিত রোগে এ পর্যন্ত শিশুসহ ১৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে এআরআই বা ঠা-াজনিত শ্বাসকষ্টে ৯ জন, ডায়রিয়ায় তিনজন এবং অন্যান্য রোগে একজন মারা যান। এই সময়ে সারাদেশে এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪৯ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালের সরণাপণ্য হয়েছেন। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরো বেশি বলে মনে করেন রোগী সংশ্লিষ্টরা। এদিকে দেশব্যাপী শৈত্যপ্রবাহে শিশুরাই বেশি কাবু হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের সময় মানব শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিল কঠিন রোগব্যাধী দেখা দেয়। এর মধ্যে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ, সর্দি-কাশি, জ্বর, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি ও নিউমোনিয়া অন্যতম। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. খোরশেদ তালুকদার বলেন, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে প্রচুর শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।    
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের নভেম্বর ১ থেকে ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত দেশের এলাকায় শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় এই সময়ে এআরআই বা ঠা-াজনিত শ্বাসকষ্টে মোট আক্রান্তের সংখ্যা আটহাজার ৮১৩ জন, ডায়রিয়ায় ২৮ হাজার ৮৭৮ জন এবং অন্যান্য রোগে ১১ হাজার ৬৮৮ জন। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে এই মৌসুমে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটেছে।
রাজধানীর আইসিডিডিআরবি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত আটদিনে এই হাসপাতলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন বয়সের মোট দুই হাজার ৮৫৩ জন ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হয় ৯ জানুয়ারি ৪২৩ জন। গতকাল রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত এখানে ভর্তি মোট ৮৮জন। তবে এ বছর তুলাণামূলক রোগী কম বলে জানিয়েছেন আইসিডিডিআরবি মহাখালী হাসপাতালের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ বছর তেমন শীত না পড়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ কম, তাই রোগীও কম।   
সরেজমিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আইসিডিডিআরবি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে আগত রোগীদের মধ্যে ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌসুমী এসব রোগের সাথে বাড়ছে এলার্জির প্রকোপসহ বিভিন্ন চর্মরোগ। অন্য দিকে এই সময়টাতে রোটা ভাইরাসের কারণে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ভাইরাল ডায়রিয়ায়। বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় বাতাসে অতিমাত্রায় ধূলোবালি বাড়তে থাকে, সইসাথে বাড়তে থাকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া। এ ধরনের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তবে এসব ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে এ ধরনের ঠা-াজনিত রোগ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. খোরশেদ তালুকদার বলেন, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে প্রচুর শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অনেক শিশুর ইনফেকশন সৃষ্টি হয়। অনেকে নিউমনিয়া মনে করলেও বেশিরভাগ শিশুই একিউট ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত। এ রোগের ক্ষেত্রে শিশুদের ভুল চিকিৎসা হলে মৃত্যুও হতে পারে। তিনি বলেন, এ রোগে শিশুদের অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। তাই দু’এক দিন হাসপাতালে রেখে অক্সিজেন দিলে শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে। এসব রোগ এড়িয়ে চলার জন্য শিশুদের পর্যাপ্ত শীতের পোশাক পরানো,ধূলোবালিতে না নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
শীতজনিত রোগে থেকে নিরাপদ থাকতে সচেতনতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডা. মো. টিটো মিয়া। তিনি বলেন, শীতে সাধারণত ঠা-াজনিত, খাদ্য বাহিত এবং বায়ুবাহিত রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং শিশুরা। যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তাদের অবশ্যই ধূলোবলি, ফুলের রেনু এবং কুয়াশা এড়িয়ে চলা উচিত। এ ক্ষেত্রে ঘরের বাইরে যত কম যাওয়া যায়, ততোই ভালো। কারণ এসময় বাইরে প্রচুর পরিমাণ ধূলোবালি থাকে। এসব থেকেই শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা শুরু হয়। এ ছাড়া এ সময় কিছু ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেগুলো থেকেও রোগ-ব্যাধী ছড়ায়। শীতের কারেণ স্ট্রোকের সংখ্যাও বাড়ে। এ ছাড়া যেদের ব্রঙ্কাইটিস বা অ্যাজমার সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে রিসপেরটরি অ্যাটাক হতে পারে। এসব রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীত

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩
৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ