পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : রাত বাড়ার সাথে সাথে রাজধানী নিস্তব্ধ হতে থাকে,পথ চলতি মানুষের সংখ্যা কমতে থাকে, শুধু বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়ে তীব্র শীতের রাতে ফুটপাতে শুয়ে থাকা ঘরহীন মানুষদের। এসব অসহায়-সম্বলহীন মানুষ কেউবা বিছানা ছাড়া, আবার কেউবা হালকা বিছানা পেতে ঘুমায় সড়ক দ্বীপে, ফুটপাতে অথবা গাছের তলায়। এদের মধ্যে কেউবা দিনভর কাজ করে ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়েছেন। মাদকাসক্ত হয়ে ফুটপাতে কেউবা বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছেন নেশার ঘোরে। আবার অনেকে টাকার অভাবে স্থান নিয়েছেন ফুটপাতে। এছাড়া অনেকে বিভিন্ন ব্যবসার জন্যও রাজধানীর রাস্তায় থাকে।
হাইকোর্ট চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের আশপাশ, পলাশী মোড় ও শাহবাগ এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে বহু মানুষকে তীব্র শীতের রাতেও ফুটপাতে ঘুমাতে দেখা গেছে। এ সময় তাদের সাথে কথা বলে তাদের জীবন চিত্র সম্পর্কে জানা গেছে। বিচিত্র তাদের কর্মকা-। তবে একটি জায়গায় সবাই এক। এদের কারোরই ঘর নেই। প্রত্যেকেরই রয়েছে আলাদা আলাদা গল্প। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সব জীবন কাহিনী।
গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টা। তিন নেতার মাজারের সামনে ফুটপাতে গভীর রাতে নামাজ পড়ছেন জাহানারা বেগম। কেউ ভাববেই না ঘুরতে ঘুরতে এমনও মানুষকে পেয়ে যেতে পারেন। তবে এই ধরনের মানুষের দেখা প্রায় সময়ই মেলে। নামাজ শেষে কথা হলে তিনি বলেন, স্বামী হারানোর পর থেকে জীবনটাই তার কাটছে বিভিন্ন মাজারে মাজারে। তিনি ধর্ম পালনে খুবই দায়িত্বশীল বলেও জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় ৭০ বছরের মো: আব্দুল্লাহ নামের অসুস্থ এক বৃদ্ধর সাথে কথা হয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম। এলাকায় তাঁর পাঁচ ছেলে আছে। ছেলেরা তার দায়িত্ব নেয়নি। তাই ঢাকা শহরের ফুটপাতেই ১০ বছর ধরে জীবনযাপন করছেন। এখন কাজও করতে পারেন না। তাই দিনের বেলায় ভিক্ষা করেন। আর রাতের বেলা ফুটপাতে ঘুমান। শীতের সময় অনেক কষ্ট করে থাকতে হয় বলেও তিনি জানান।
রমনা ও উদ্যানের মাঝামাঝি দিয়ে শাহবাগের দিকে যে রাস্তা চলে গেছে, ওখানে বেশকিছু মহিলা সবাই সেজেগুজে রয়েছেন। এত রাতে দাঁড়িয়ে আছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, দেহ ব্যবসা করি। পাশেই এক টুকরো পলিথিন দিয়ে ছোট্ট তাঁবুর মত। জানালেন এটাই তাদের অফিস। তাদের মধ্যে নীলা (ছদ্মনাম) নামের একজন জানালেন, দশ বছর আগে স্বামী তালাক দেওয়ার পর থেকেই এ পথে। তবে কয়েকবার এ পথ ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অন্য কাজ না পেয়ে আবার এই পথে চলে এসেছি। তারা আরো জানান, মাঝে মাঝে হঠাৎ করে একদল যুবক এসে মারধর করে এবং ভেঙ্গে দেয় তাদের রাতের অফিস। পরে রাতে আবার ব্যথা ভুলে নতুন করে অফিস খুলে জীবিকার সন্ধানে নেমে পড়ে এই ভাসমান যৌন কর্মীদের দল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরের সামনে যেখান দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢোকার ফটক, সেখানে সারি সারি অনেকগুলো ভ্যানগাড়ি। দিনের বেলায় এই গাড়িগুলো চটপটি-ফুচকার দোকান। রাত্রি বেলায় প্রতিটি এক একটি আবাসিক ভবন। একটি ভ্যানের ওপর কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন মাসুম হোসেন। তিনি বলেন, এখান থেকে যে পরিমাণ টাকা পায়, তাতে করে রুমে নিয়ে থাকার কোন সুযোগ হয় না।
বাংলা একাডেমীর সামনে উদ্যানের দেয়ালের সাথে বেশ কয়েকজন শীতের কারণে রাতে আগুনের তাপ নিচ্ছে আর নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করছে। পাশে দুই কিশোর শুয়ে আছে। তাদের সাথে কথা হলে তাদের মধ্যে রবিন নামের এক যুবক বলেন, জন্ম থেকেই ফুটপাতে আছি। বাবা-মা এখন বেঁচে আছে কি তাও জানি না। তারা আর কথা বলতে রাজি হয়নি। এছাড়া একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যায়, একটি মহিলা নেশা জাতীয় দ্রব্য বিত্রিু করছে।
শাহবাগ এলাকায় মধ্য বয়সী মো: হান্নান নামের একজনের সাথে কথা হলে সে বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ৩ মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছি। অনেক টাকার দরকার। তাই দিনে মানুষের কাছে সাহায্য চায়। রাতে পথে পথেই কেটে যায়।
ঢাকায় খোলা আকাশের নিচে কি পরিমাণ মানুষ বসবাস করছে, তার স্পষ্ট কোন হিসেব নেই। তবে গত আট বছর ধরে শহুরে ছিন্নমূলদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন সাজিদা ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, চল্লিশ হাজারের মত মানুষ রয়েছে ঢাকায়, যাদের একেবারেই ঘরবাড়ি কিছু নেই। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দু-তিন প্রজন্মও কাটিয়ে দিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। অনেকেরই জন্ম হয়েছে ফুটপাতে, মৃত্যুও সেখানে।
সরেজমিনে আরো কিছু ফুটপাতবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাত নারী আর শিশুদের জন্য আতঙ্কের। প্রায় সময় যৌন হয়রানি শিকার হতে হয়। এছাড়া অসহায়ত্ব আর দারিদ্র্যের সুযোগ নেয় অপরাধীরা। নানা সময় প্রলোভন আর ভয়-ভীতি দেখিয়ে নানা কাজ করতে বাধ্য করা হয় নারী, কিশোর-কিশোরী ও শিশুদের। এ সব কাজের মধ্যে রয়েছে. যৌনকর্ম, মাদক বেচাকেনা, অস্ত্র ব্যবসা, খুন। এছাড়া ময়লা ও মলমূত্র থেকে তাদের ছড়ায় নানা রোগ। তারা আরো জানান, মাঝে মাঝে পুলিশ খুব বিরক্ত করে। আবার মারধরও করে। তখন সারারাত হয় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে না হয় কোথাও বসে থাকতে হয়।
শহরের ঐতিহ্যবাহী সদরঘাট, লঞ্চ টার্মিনাল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সবখানেই দেখা যাবে ঘরছাড়া ছিন্নমূল মানুষ যারা পথ, ফুটপাত কিংবা টার্মিনালের পাটাতনকেই বানিয়েছে শয্যার জায়গা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঝুড়ি বা টুকরির ভেতরও প্রতি রাতে ঘুমায় শত শত মানুষ। কমলাপুর রেলস্টেশনের ছিন্নমূল মানুষের ঘুমের একটা পুরাতন জায়গা, পুরান ঢাকার কিছু গলি। মিরপুরসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় রিকশা দাঁড় করিয়ে তার মধ্যে ঘুমায় অনেক মানুষ। এছাড়া সব ওভারব্রিজে রাতে আশ্রয় নেয় ছিন্নমূল নগরবাসী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।