পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম অঞ্চলে একের পর এক অস্ত্র উদ্ধার হলেও উৎসে হাত পড়ছে না। অক্ষত থেকে যাচ্ছে পাচারকারিদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। এরফলে সীমান্ত পথে আসা এবং পাহাড় জঙ্গলে তৈফর দেশি অস্ত্র নিরাপদেই চলে যাচ্ছে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, ডাকাত, দুর্বৃত্ত আর অপরাধীদের হাতে। দেশে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে।
কক্সবাজার ও বান্দরবান থেকে এক সপ্তাহের মাথায় ৩২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার হয়েছে। এলিট বাহিনী র্যাবের অভিযানে সর্বশেষ মঙ্গলবার বান্দরবান জেলার সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির তুমবরু থেকে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৮৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়। এসব অস্ত্রের মধ্যে পাঁচটি অস্ত্র টেকনাফের আনসার ক্যাম্প থেকে লুট করা।
গত বছরের ১২ মে গভীর রাতে টেকনাফের নয়াপাড়ায় রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে আনসার বাহিনীর শালবন ক্যাম্পে দুর্বৃত্তরা হামলা করে। তারা ক্যাম্প থেকে ১১টি অস্ত্র (দুইটি এসএমজি, চারটি এম-২ রাইফেল এবং পাঁচটি চায়না রাইফেল) ও ৬৭০ রাউন্ড গোলাবারুদ লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় আনসার ক্যাম্পের দায়িত্বরত কমান্ডার পিসি আলী হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করতে তুমবরুর গহীন অরণ্যে এ অভিযান চালায় র্যাব ও আনসারের সদস্যরা। লুণ্ঠিত পাঁচটি অস্ত্র ছাড়াও সেখানে পাওয়া যায় একটি বিদেশি পিস্তল, একটি বন্দুক ও তিনটি ওয়ান শুটারগান এবং গোলাবারুদ।
এর আগে চার জানুয়ারি কক্সবাজারের মহেষখালীতে একটি অবৈধ অস্ত্র কারখানার সন্ধান পায় র্যাব। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ২২টি অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ গুলি ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম। ওই ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ততথ্য মতে মহেষখালীর পাহাড়ী এলাকায় অন্তত ছোট বড় ১০-১৫ অবৈধ অস্ত্রের কারখানা আছে। এসব কারখানায় তৈরি অস্ত্র মহেষখালী, কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীদের কাছে চলে যাচ্ছে।
এর আগে জেলার চকোরিয়া থেকে আরো একটি অবৈধ অস্ত্রের কারখানা খুঁজে পায় র্যাব। সেখান থেকেও বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়। কক্সবাজারের মহেষখালী ছাড়াও চকোরিয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতেও বেশ কয়েকটি অবৈধ অস্ত্রের কারখানা আছে। বিভিন্ন সময়ে এসব এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারও হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এরপরও উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চল মহেশখালীর দুর্গম পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র তৈরি ও বেচা-কেনা থেমে নেই। গোপন কারখানায় তৈরি এসব অবৈধ অস্ত্রের মূল ক্রেতা চিংড়িঘের দখলদার, সাগরে নৌদস্যু ও প্যারাবন নিধনকারীরা। পেশাদার ডাকাত, সন্ত্রাসীরাও এসব অস্ত্র কিনে নিচ্ছে।
দোনলা বন্দুক ও পিস্তল ছাড়াও রাইফেল তৈরিতে ওই সব কারখানার কারিগররা দক্ষ। তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করছে। এসব অস্ত্র অপেক্ষাকৃত কমদামে বিক্রি হচ্ছে। গত ১০ বছরে র্যাব-পুলিশের অভিযানে অন্তত ১২টি অস্ত্রের কারখানার সন্ধান পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেফতারও হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন অস্ত্র কারিগর।
তবুও থামেনি অস্ত্র তৈরি ও বেচা-কেনার জমজমাট এই ব্যবসা। জামিনে বের হয়ে নতুন এলাকায় ফের কারখানা গড়ে তুলেছে তারা। চার জানুয়ারির অভিযানে গ্রেফতার হয় আবদুল মাবুদ ও আবু তাহের। এদের মধ্যে আবদুল মাবুদ দুইবছর আগে অস্ত্র তৈরির কারখানা থেকে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় অস্ত্র তৈরিতে জড়িয়ে পড়ে সে। গত এক বছরে মহেষখালীতে থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে অর্ধশত আগ্নেয়াস্ত্র। এর বেশিরভাগ অস্ত্র দেশে তৈরি।
কারখানা উদ্ধারের পর কিছু লোক গ্রেফতার হচ্ছে। তবে তাদের সহযোগীদের গ্রেফতারে আর কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয় না। ফলে অবৈধ কারখানার সাথে জড়িতরা নতুন করে কারখানা গড়ে তুলে বলে দেশি অস্ত্রের এসব উৎস বন্ধ হচ্ছে না।
সীমান্ত পথে আসা ভারী অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে নিয়মিত। র্যাব পুলিশের অভিযানে গত এক বছরে এই অঞ্চলে কয়েশ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তবে এসব অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িতের সনাক্ত করা যাচ্ছে না। অস্ত্র উদ্ধারের সময় বহনকারী ধরা পড়ে। পরবর্তীতে তদন্তে এর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা যায় না। অনেক সময় বহনকারীরাও প্রকৃত ব্যবসায়ীর নাম ঠিকানা বলতে পারে না। ফলে তারা আড়ালেই থেকে যায়।
অস্ত্র চোরাকারাবারি ও কারিগরদের নেটওয়ার্ক ভাঙতে না পারায় অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন সন্ত্রাসীগ্রুপ এবং রাজনৈতিক দলের ক্যাডার মাস্তানদের কাছে এখন ভারী অস্ত্রের মজুদ গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন সময়ে র্যাব-পুলিশের হাতে এসব অস্ত্র ধরাও পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।