Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লোহাগড়ায় শুকনো মৌসুমেও মধুমতির গ্রাসে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

| প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নড়াইল জেলা সংবাদদাতা : শ্বশুরির আমলে ধানি-পানি গিরেস্ত ছিলাম। সাত-আট পাহি (একর) জমি সব নদীতি গেছে। ভিটেডাও আগে একবার নদীতি গেছে। পরে তিন কানি (৯ শতাংশ) জমিতি বসবাস করতিছিলাম। কয়দিন আগে তাও এই নদীতি খাইছে। আরাকজনের খলোটে ছাবড়া পাতে রইছি। হ্যান্যে পেটের জ্বালায় ভিক্ষে করতিও বারই।
এভাবে একটানা নিজের সংসারের দুরবস্থার কথা বলছিলেন রুবিয়া বেগম (৫৫)। পাশে দাঁড়ানো প্রতিবেশী আয়েশা বেগম (৫৮)। তিনি একই ধাঁচের জীবন কাহিনী তুলে এ প্রতিনিধিকে বললেন যার জাগায় ছাবড়া তুলিছি সে লোক হ্যান্যে চলে যাতি কচ্ছে। কোন জাগা যাব?
গত শুক্রবার মধুমতি নদীর তীরে কথা হচ্ছিল এ দুই নারীর সঙ্গে। তাদের দীর্ঘশ্বাস এবং চোখের পানি যেন একাকার হচ্ছিল। দু’জনের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামে। তাদের দুরবস্থা মধুমতি নদীভাঙনের কারণে।
ওই এলাকায় ঘুরে জানা গেল, শুধু ওই দুই নারীর পরিবারই নয়। গত ১৫ দিনে এ ইউনিয়নের মাকড়াইল, কাশিপুর, রামচন্দ্রপুর, কাতলাশুর, নওখোলা, আজমপুর, শিয়রবর ও রামকান্তপুর গ্রামে অন্তত ১৭টি বসতভিটা নদীগর্ভে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়ে আতঙ্কে অনেকে বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ অন্যের জায়গায় ছাপড়া তুলে, কেউবা অত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব গ্রামের মানুষ বারবার নদীভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেমাটি, গাছপালা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব থেকে নিঃস্ব হচ্ছেন। তারা মানবেতর দিনযাপন করছেন। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, সড়ক এবং অন্যান্য সামাজিক স্থাপনাও বিলীন হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন জনপদ।
১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদী থেকে এখন দূরত্ব ৩০ ফুটের মতো। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: মইনুল হোসেন বললেন, গত ১৫ দিনেই অন্তত ৩০ ফুট এগিয়ে এসেছে নদী। গত বর্ষায়ও বেশ খানিকটা ভেঙেছে। এবার বুঝি বিদ্যালয় টিকবে না। প্রায় ২০ একার জমিজুড়ে ছিল শিয়রবর বাজার। গত বর্ষায় বাজারের ৫৫টি গুদামঘরসহ ১০২টি দোকানঘর নদীতে গেছে। এ সময় বাজারসংলগ্ন ২২টি পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ী শ্যামা প্রসাদ কুÐু কাঁদছিলেন তার সর্বস্ব হারিয়ে। তার চারটি গুদামঘর, বাজারসংলগ্ন বসতবাড়ির তিনটি পাকা ঘর ও দু’টি টিনের ঘর গত বর্ষায় নদীতে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, এখন অন্যের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানুষ

২৭ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ