যেভাবে ৫০০
ক্লাব ফুটবলে গোলের প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে। এবার সেই লিওনেল মেসি উঠে গেলেন আরেক উচ্চতায়। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ৫০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মেসি।
দেখতে দেখতে স্মৃতির পটে হারিয়ে যাচ্ছে আরেকটি বছর। বিদায় নেয়ার পথে ২০১৬ সাল। অপেক্ষা নতুন বছর ২০১৭ সালকে স্বাগত জানানোরা। ক্রীড়াঙ্গণেও সেই বিদায়ের সুর। চলছে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব-নিকেষ। সত্যিই তো কেমন কাটলো এবছরটি? কার ঝুলি সমৃদ্ধ হলো কতোটা? কিংবা, নতুন কোন চমক নিয়ে হাজির ছিলেন কী কেউ? ব্যাট বা বল হাতে কে কারা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছেন আলো? দল হিসেবেই বা কাদের অর্জনটা ছিল সবচেয়ে বেশি? তারই খতিয়ান তুলে ধরতে দৈনিক ইনকিলাবের পাঠকদের জন্য ২০১৬ সালটিকে আরেকবার স্মৃতিচারণ করাতে ধারাবাহিক আয়োজন ‘সালতামামি’। বিশ্ব ক্রিকেটের খবরা-খবর নিয়ে সংখ্যাটি সাজিয়েছেন ইমামুল হাবিব বাপ্পী
দেখতে দেখতে কালের গর্ভে হারিয়ে গেলো আরো একটি বছর। কেমন কাটল ক্রিকেটারদের জন্য বছরটা? ব্যাট বা বল হাতে কে কারা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছেন আলো? দল হিসেবেই বা কাদের অর্জনটা ছিল সবচেয়ে বেশি?
বাংলাদেশিদের জন্য বছরটা কেটেছে আনন্দ আর হতাশায় গড়া মিশ্র অভিজ্ঞতায়। এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হতাশাজনক সেই হারের ক্ষত কি সহজেই শুকোবার? কিংবা অল্পের জন্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হার, অথবা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে জয়ের খুব কাছে গিয়েও মাত্র ২২ রানে হারের সেই ক্ষত? এরপরও অল্পতেই তুষ্ট এই আমরা হয়তো সেই হতাশা ভুলেছি পরের ম্যাচেই ঢাকায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজের জাদুময়ী সেই ঐতিহাসিক জয়ে।
দল হিসেবে সবচেয়ে সফল বলতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। দুই দুটি আন্তর্জাতিক শিরোপা উঠেছে তাদের শোকেসে। ভারতে অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ আইসিসি টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপ শিরোপা ও পঞ্চম আইসিসি নারী টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপ শিরোপা- দুটিই দখলে নেয় ক্যারিবিয়রা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে শেষ ওভারে ১৯ রানের হিসাব মিলিয়ে নিয়েছিল ড্যারেন স্যামির দল। বেন স্টোকের সেই ওভারের প্রথম চার বলে টানা চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে ইংলিশদের কাঁদিয়েছিলেন কার্লেস ব্রেথওয়েট। যার স্বীকৃতী স্বরূপ আইসিসির বেস্ট টি-টোয়েন্টি পাফর্ম্যান্সের পুরষ্কার ওঠে ব্রেথওয়েটের হাতে।
ওয়ানডেতে বছরটা সুখকর না হলেও গেল বছরে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে ছড়ি ঘুরিয়েছে ভারত। দুই ফর্মেটেই সর্বোচ্চ জয়ের হার তাদের। ১২ টেস্টে হার নেই একটিও, জয় ৯টি। জয়ের হার ৭৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৫.৫৫ শতাংশ জয় দক্ষিণ আফ্রিকার। ৯ ম্যাচে তাদের জয় ৫টি, দুটি করে হার ও ড্র। এই সময়ে যেখানে ইংল্যান্ড খেলেছে ১৭টি টেস্ট সেখানে বাংলাদেশ খেলেছে মাত্র ২টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২টি ম্যাচ খেলেছে ভারত। তবে টেস্টে ভারতের সফলতার অন্যতম কারণ বলা যেতে পারে অধিকাংশ ম্যাচই তারা খেলেছে ঘরের মাঠে।
সর্বোচ্চ সংখ্যক ম্যাচ খেলতে পারার সুবিধার পাশাপাশি ধারাবাহীক পাফর্ম্যান্সের কারনে বছরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাকের তিনজনই ইংলিশ। সর্বোচ্চ ১৪৭৭ রান করেন জো রুট। তার পরেই আছে জনি বেয়ার’শ (১৪৭০) ও অ্যালিস্টার কুক (১২৭০)। তবে ম্যাচ সংখ্যায় সবচেয়ে আলোকিত ছিল ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের ব্যাট। মাত্র ১৮ ইনিংসে কোহলির ব্যাট থেকে আসে ১২১৫ রান। এর মধ্যে আছে দেশের হয়ে এক বছরে ৩টি দ্বিশতক গড়ার রেকর্ড। এছাড়া হাজার রান পূর্ণ করেছেন স্মিথ, আজহার আলী, মঈন আলীও।
তবে বল হাতে তাদের চেয়েও উজ্জ্বল নৈপুণ্যের কারণে আইসিসির বর্ষসেরা ক্রিকেটার ও বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের খেতাব জেতেন রভিচন্দ্রন আশ্বিন। ব্যাট হাতে রিবাট কোহলির প্রদর্শনী ও বল হাতে আশ্বিনের বিধ্বংসী রুপ দুইয়ে মিলেই টেস্টে ভারত কাটিয়েছে সফলতম একটা বছর। আইসিসি টেস্ট র্যাংকিংয়ের সেরা দলও তারা। এসময়ে ঘুর্ণী জাদুতে ১২ ম্যাচ আর ২৩ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৭২টি উেিকট নেন এই অফ স্পিনার।
একই সময়ে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম আসরেও ১০৬.৮৩ গড়ে সর্বোচ্চ ৬৪১ রান এসেছে কোহলির ব্যাট থেকে। টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ জয়ের হারও তাদের। ২১ ম্যাচের ১৫টিতেই জয় তুলে নেয় মাহেন্দ্র সিং ধোনির দল। ১০ ম্যাচের ৮টিতে জিতে ৮০ শতাংশ জয় নিয়ে সবার ওপরে নিউজিল্যান্ড। বিষ্ময় জাগানিয়া হলেও এই তালিকার তৃতীয় নামটি আফগানস্তানের! ১৫টি ম্যাচের মধ্যে ১১টিতেই জয় তুলে নেয় ক্রিকেট নবীন এই দলটি।
ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি সফল ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়াকে তাদেরই মাটিতে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিয়ে আসে প্রটিয়ারা। সব মিলে ১৭ ম্যাচের ১১টিতে জয় পাওয়া আফ্রিকানদের জয়ের হার ৬৮.৭৫ শতাংশ। এক ম্যাচ বেশি খেলে সমান সংখ্যক জয় ইংল্যান্ডের। গেল বছর সর্বোচ্চ ২৯টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় অস্ট্রেলিয়া, জয় ১৭টিতে। ৯ ম্যাচে এসময় বাংলাদেশের জয় ছিল মাত্র ৩টি।
একদিনের ক্রিকেটে ব্যাট হাতে গেল বছর বসচেয়ে বেশি ধ্বংসাত্মক ভুমিকায় দেখা গেছে অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে। ২৩ ম্যাচে ১০৫.৪৭ স্ট্রাইক রেট আর ৬৩.০৯ গড়ে এসময় তার ভ্যাট থেকে আসে ১৩৮৮ রান। এর মধ্যে শতকই ৭টি! টেস্টের পাশাপাশি ওয়ানডেতেও এক বর্ষ পঞ্জিতে এক হাজারের বেশি রান করেন স্টিভেন স্মিথ। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলÑ ওয়ার্নার বা স্মিথ নয়, আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে খেলোয়াড়ের খেতাব জেতেন দক্ষিণ আফ্রিকান মিডিলঅর্ডার কুইন্টন ডি কক। গত সেপ্টেম্বরেই স্মিথ-ওয়ার্নারদের বিপক্ষে ১৭৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন ডি কক। এসময়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮৫৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। বছরের সাত মাসই চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকা কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হওয়াটাও কম আশ্চর্ষের ছিল না। ‘দ্য ফিজ’-এর হাত ধরেই এই প্রথম কোন বাংলাদেশী বর্ষসেরা আইসিসি খেতাব অর্জন করে।
গেল বছরেই মাত্র এক সপ্তার ব্যবধানে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দেখেছে দুই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বরেকর্ড। নটিংহামের ছোট্ট মাঠে ওয়ানডেতে এক ইনিংসে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ড। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেদিন ৩ উইকেটে ৪৪৪ রান করেছিল ইংলিশরা। এক দশক আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আমস্টেলভেনে গড়া শ্রীলঙ্কার ৪৪৩ রানের রেকর্ড ভেঙে নতুন এই রেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ড।
এর ঠিক ৬ দিনের মাথায় টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেটের এই সংস্করণেও রেকর্ডটি ছিল শ্রীলঙ্কার দখলে। লঙ্কানদের জন্য আরো বড় দুখের বিষয় হল তাদের বিপক্ষে ও তাদের মাঠেই রেকর্ডটি গড়ে অজিরা। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে জোহানোসবার্গে কেনিয়ার বিপক্ষে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৬০ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। পেল্লেকেলেতে তাদের টপকে ৩ উইকেটে ২৬৩ রানের নতুন রেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়া।
শুরু হয়েছে নতুন বছর। চলতি বছরেও হয়তো অনেক ঘটনাই জায়গা করে নেবে ইতিহাসের পাতায়। রেকর্ড ভেঙে গড়বে নতুন রেকর্ড। তামীম-সাকিব-সাব্বররা হয়তো নিজেদের করবেন আরো আলোকিত। আরো পরিপক্ক আরো শানিত হয়ে উঠবেন মিরাজ-মোসাদ্দেক-মোস্তাফিজরা। হারের হতাশায় বছর শুরু করা বাংলাদেশও নিশ্চয় ধীরে ধীরে খুঁজে পাবে সঠিক পথের দিশা।
২০১৬ আইসিসি বর্ষসেরারা
আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটার
রবিচন্দ্রন অশ্বিন (ভারত)
বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার
রবিচন্দ্রন অশ্বিন (ভারত)
বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটার
কুইন্টন ডি কক (দক্ষিণ আফ্রিকা)
বর্ষসেরা টি-২০ ক্রিকেটার
কার্লোস ব্রাফেট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
সহযোগী দেশের সেরা ক্রিকেটার
মোহাম্মদ শাহজাদ (আফগানিস্তান)
বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার
মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)
বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটার
সুজি বেটিস (নিউজিল্যান্ড)
বর্ষসেরা নারী টি-২০ ক্রিকেটার
সুজি বেটিস (নিউজিল্যান্ড)
স্পিরিট অব ক্রিকেট অ্যাওয়ার্ড
মিসবাহ-উল-হক (পাকিস্তান)
বর্ষসেরা আম্পায়ার
মারাইস ইরাসমাস (দক্ষিণ আফ্রিকা)
বর্ষসেরা টেস্ট দল
ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
অ্যালিস্টার কুক, অধিনায়ক (ইংল্যান্ড)
কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড)
জো রুট (ইংল্যান্ড)
জনি বেয়ারস্টো, উইকেটকিপার (ইংল্যান্ড)
বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)
রবিচন্দ্রন অশ্বিন (ভারত)
রঙ্গনা হেরাথ (শ্রীলঙ্কা)
মিচেল স্ট্রার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
ডেল স্টেইন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
স্টিভ স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)
বর্ষসেরা ওয়ানডে দল
ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
কুইন্টন ডি কক (দক্ষিণ আফ্রিকা)
রোহিত শর্মা (ভারত)
বিরাট কোহলি, অধিনায়ক (ভারত)
এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)
জস বাটলার (ইংল্যান্ড)
মিচেল মার্শ (অস্ট্রেলিয়া)
রবিন্দ্র জাদেজা (ভারত)
মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
সুনিল নারিন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ইমরান তাহির (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।