Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপরূপ সৌন্দর্যের টানে সীতাকুন্ড ইকোপার্কে দর্শনার্থীর ঢল

| প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে : সবুজ পাহাড়, ঝরনা, প্রাকৃতিক লেক ও সমুদ্র কে না ভালোবাসে? প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে বিধাতার এসব অপরূপ সৃষ্টি বরাবরই বাড়তি আকর্ষণ। এ কারণে যেখানেই পাহাড়ের বুকে ঝরনার উত্তাল ঝরে পড়া রূপ সেখানেই প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের ভিড়। একইভাবে প্রাকৃতিক লেক, সমুদ্র, বন্য জীবজন্তুসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলোর টান কিছুতেই এড়ানো যায় না। ফলে এসব সৌন্দর্য দেখতে প্রতিনিয়তই ছুটছেন দর্শনার্থীরা। আর কোথাও গিয়ে যদি একই সাথে পাহাড়, ঝরনা, প্রাকৃতিক লেক, সাগর দর্শনের সুযোগ থাকে সেখানে না গিয়ে কি পারা যায়? যায় না বলেই প্রকৃতির এই লীলাভূমি দর্শনে প্রতিদিন সীতাকু- বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কে ছুটে আসছেন অগণিত দর্শনার্থী। তাদের মতে, শহরের একঘেঁয়ে যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তির স্বাদ পেতে অন্তত একটি দিনের বিনোদনের জন্য সীতাকু- ইকোপার্কের বিকল্প কই? এখানে বেড়াতে এসে প্রকৃতির রূপ দেখে বিমোহিত এক যুবতী চন্দনাইশের বাসিন্দা চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ মহিলা কলেজের ছাত্রী আছমা আক্তার বলেন, সীতাকু- ইকোপার্কের নাম অনেক শুনেছিলাম। কিন্তু এর আগে আসা হয়নি। এবার হঠাৎ সুযোগ পেয়ে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের নিয়ে পরিকল্পনা করে ফেললাম সীতাকু- ইকোপার্ক দেখব। যেই ভাবা সেই কাজ। সবাই মিলে চলে এলাম। এখানে এসে কেমন লাগছে প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে আছমা বলেন, খুবই ভালো। নির্জন সবুজ পাহাড়ের মাঝে ঝরনা বিরামহীন ঝরে পড়ছে। আছে প্রাকৃতিক লেক, আছে নাম জানা-অজানা অসংখ্য বৃক্ষরাজি, বাতাবাহার, গোলাপ বাগান, অর্কিড হাউজ, ঔষধি গাছ। গেটের কাছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মুরালটিও চমৎকার। সেখানেই ছোটদের জন্য গড়ে তোলা শিশুপার্কের দোলনায় চড়েছি আমিও। অপরূপ লেগেছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠে। এই টাওয়ার থেকে সোজা পশ্চিমে তাকালে চোখে পড়ে বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলের নীল জলরাশি। আর চারদিকে যেন পাহাড় আর মেঘের মিতালী! আছমার মতে, যারা এখনো সীতাকু- ইকোপার্কে আসেননি তারা যে কত কিছু মিস করছেন তা বলে বোঝানো যাবে না। তাই আর দেরি না করে সবাই যেন একটি দিনের জন্য হলেও এখানে এসে বেড়িয়ে যান সেটাই তার চাওয়া। এই পাহাড়ের সেরা আকর্ষণ সহ¯্রধারা ঝর্ণার কাছে গিয়ে পর্যটকদের প্রাণোচ্ছ্বাস দেখা যায়। সেখানে কেউ ঝরনার জলে অবগাহন করছে, কেউ বা প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যকে স্মৃতি বন্দি করতে নানান কায়দায় ছবি তুলছেন। এখানেই কথা হয় ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা যুবক মোঃ আরিফ, মোঃ সোহেলের সাথে। তারাও সীতাকু- ইকোপার্কে আসতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। আরিফ বলেন, এখানে না এলে সত্যিই একটা কিছু মিস হয়ে যেত। শহরের একঘেঁয়ে কর্মব্যস্ত জীবনে যখন নিজের ওপরই বিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম ঠিক তেমনি সময়ে ইকোপার্কে এসে পাহাড়, ঝরনা, লেক ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে পশ্চিমের সাগর দেখে যেন নতুন করে বাঁচার শক্তি পেলাম। তার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে ঝরনা ও সবুজ পাহাড়ের প্রকৃতি। অর্কিড হাউস ও গোলাপ বাগানটিও দেখার মতো। এভাবে ইকোপার্কে এসে আনন্দ প্রকাশ করেছেন আরো বহু দর্শনার্থী। সবার এক কথা যেখানে কবি নজরুল এসে মুগ্ধ হয়ে রচনা করেছিলেন ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ’ ‘সেই পাহাড়ের ঝরনায় আমি উদাও হয়ে রই’-এর মতো বিখ্যাত গান। সে স্থান (সীতাকু- ইকোপার্ক) দর্শন করে মুগ্ধ হবেন না এমন দর্শনার্থী কই? জানা যায়, ১৯২৫ সালে জাতীয় কবি নজরুল চট্টগ্রামে বেড়াতে এসে সীতাকু-ের ফকিরহাট এলাকায় নয়নাভিরাম পাহাড়ি ঝরনার কথা শুনে এখানে আসেন। তিনি ঝরনার ওই রূপ দেখে এত মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, এখানে বসে রচনা করে ফেলেন উপরোক্ত গানটি। এর দীর্ঘসময় পর ২০০১ সালের ১৭ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্থানটির ১৯৯৬ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেন সীতাকু- বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। সেই থেকে আর পিছু তাকাতে হয়নি। এখানে প্রকৃতির রূপ ও জীববৈচিত্র্য দেখতে প্রতিদিনই ছুটে আসে অগণিত দর্শনার্থী। তবে যে কোনো ছুটির দিনে এই ভিড় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এবারো ব্যতিক্রম হয়নি। এ মৌসুমেও প্রকৃতির এই লীলাভূমি দর্শনে ছুটে আসছেন অগণিত দর্শনার্থী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইকোপার্কের ইজারাদার মোঃ সাহাব উদ্দিন বলেন, প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ এখানে এলেই মুগ্ধ হবেন। এখানে রয়েছে সুপ্তধারা, সহ¯্রধারা ঝরনা, মিনি শিশুপার্ক, গোলাপ চত্বর, অর্কিড হাউস, প্রাকৃতিক লেক, ৩টি ভ্যালি ব্রিজ, ১৫টির মতো পিকনিক স্পট, দর্শনার্থীদের বসার জন্য চেয়ার, গোলচত্বর, সুবিশাল গাড়ি পার্কিং এরিয়া, শিমুল তলী ব্রিজ, নজরুলের মুরাল, গোলাপ বাগান, পদ্মপুকুর, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ বহু কিছু। পাহাড়ের নির্জন স্থানে গেলেই দেখা মেলে বানর, হনুমান, বন মোরগ, মেছো বাঘ, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণসহ হাজারো রকম পাখ-পাখালির। ফলে এসব দেখে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। এখন পর্যটন মৌসুম। তাই দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা। আমাদের কর্মীরা সারা দিন পাহাড়ে কড়া পাহারা দিচ্ছে। ফলে যারা এখানে আসেন তারা নির্বিঘেœ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করে ফিরে যেতে পারেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় থানা ও উপজেলা প্রশাসনও তাদেরকে সহযোগিতা করছে। সাহাবউদ্দিন বলেন, সীতাকু- ইকোপার্ক ছাড়া আর কোথাও একই সাথে পাহাড়, ঝরনা, লেক, জীববৈচিত্র্য, সাগর দেখার সুযোগ নেই। যারা এখানে বেড়াতে আসবেন তাদের সবার ভ্রমণ সত্যিই আনন্দময় হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ