রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : রূপগঞ্জ উপজেলায় সচরাচর দেখা মেলে না খেজুর গাছিদের। গ্রামের আনাচে-কানাচে অযতœ-অবহেলায় বেড়ে ওঠা দুএকটি খেজুর গাছ থাকলেও গাছি সংকটে এসব খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। কয়েক গ্রামের ব্যবধানে দুএকজন গাছি পাওয়া গেলেও গাছ তুলনামূলক কম থাকায় রস সংগ্রহের কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে রূপগঞ্জে খেজুরের রসের দাম আকাশছোঁয়া। সুস্বাদু এই প্রাকৃতিক মধূ খেজুরের রসের স্বাদ নিতে ২শ টাকা কেজি দরেও পর্যাপ্ত রস কিনে পরিবারের লোকজন নিয়ে খেতে পারছেন না। ফলে এক সময়ের ঐহিত্যবাহী শীতের নবান্ন উৎসবের খেজুরের রসের ক্ষির রান্না, শীতের পুলি পিঠা, রসের মন্ডা মিঠাইসহ নানা মুখরোচক খাবার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। স্থানীয়রা জানায়, কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে পিঠা-পায়েশের ঐতিহ্য খেজুর গাছ। কোথাও বাড়ির ও রাস্তার ধারে অযতœ-অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছগুলোতে গাছি সংকটে রস সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। ফলে গাছিদের আগের মতো ছোটাছুটি চোখে পড়ে না। রূপগঞ্জ উপজেলার ২টি পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নের শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারের আবাসন কোম্পানীর হানায় ইতোমধ্যে খেজুর গাছসহ অন্যান্য গাছ নিধন করা হয়েছে। ফলে রূপগঞ্জ সদর, দাউদপুর ও কায়েতপাড়ায় চোখে পড়ে না খেজুর গাছ। তবে একই উপজেলার ভোলাব, গোলাকান্দাইল, মুড়াপাড়া জমিদারবাড়ি এলাকায়, কাঞ্চন পৌরসভার বিরাব এলাকায় দেখা গেছে বেশ কিছু খেজুরের গাছ। এসব গাছের বেশিরভাগই রয়েছে পতিত। গাছি সংকটে রস সংগ্রহের কাজ করতে পারছে না। তবে মুড়াপাড়ায় দেখা গেছে এর ব্যতিক্রম। মঙ্গলখালী গ্রামের বাসিন্দা মৃত মানিক তালুকদারের ছেলে ষাট বছরোর্ধ্ব আবুল কালাম তালুকদার তার নিজ গাছে ওঠে খেজুর রস সংগ্রহ করছেন। রস পেরে নিচে নামাতেই খেজুর রসপ্রেমিকরা মুহূর্তেই কিনে নিলেন। এক গ্লাস ৫০ টাকায়। তার দুটি গাছে রস হয় ৫ থেকে ৭ কেজি। শীতের মৌসুমে প্রতিদিনি খেজুরের রস বিক্রি করে হাজারের বেশি টাকায় আয় তার। তবু সম্ভাবনাময় এই খেজুর গাছিদের আগের মত দেখা মেলে না। কথা হয় আবুল কালাম তালুকদারের সাথে। এ সময় তার পাশে থাকা ছেলে সিপন তালুকদার তার বাবাকে সহযোগিতা করছিলেন। খেজুর রস বিষয়ে তারা জানায়, খেজুর রসের সংগ্রহের কাজটি একটু কষ্টদায়ক ও পরিশ্রমসাধ্য। প্রশিক্ষণ না থাকলে গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। বরং গাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বয়সভারে অন্যদের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেও যাননি তিনি। তার ছেলে এই কাজটি শিখতেও চান না। তাই তিনি মনে করছেন খুব শীঘ্রই গাছির অভাবে খেজুর রস থেকে বঞ্চিত হবে এই এলাকার মানুুষ। এসব বিষয়ে কথা হয় শিমুলিয়া এলাকার কৃষক রোমান মিয়ার সাথে। তিনি জানান, খেজুর রসের চাহিদা ব্যাপক। শিশু বাচ্চারাও এ রস পান করার বায়না করে। কিন্তু বাজারে এখন আগের মত খেজুর রস বিক্রি করে না। দুএকজন বিক্রি করলেও চরা দামের কারণে ও স্বল্প রস থাকায় পাওয়া যায় না এই রস। স্থানীয়রা জানায়, গ্রামের আনাচে-কানাছে বেড়ে ওঠা খেৎুর গাছগুলো অবাধে নিধন করা হচ্ছে। এসব গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বাড়ির রান্না ঘরেও ইটভাটায়। ফলে ভয়াবহ সংকটের মুখে খেজুর গাছ। এই গাছ রক্ষায় কারো উদ্যোগ না থাকায় এক সময় তা হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা। স্থানীয় জিন্নাত আলী মিয়া জানান, এক সময় এই শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামগঞ্জে খেজুরের গাছ বিশেষ কৌশলে কেটে রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা ব্যস্ত সময় পার কতেন। সকালের নাস্তায় সুস্বাদু খেজুরের রসের ক্ষির ছিল ঐতিহ্যবাহী খাবার। এখন আর আগের মতো গাছিদের ছুটাছুটির দৃশ্য চোখে পড়ে না। সড়কের দু’ধারের সাড়িসাড়ি খেজুর গাছগুলোতে সকালে প্রতিযোগিতা করে গাছিদের রস সংগ্রহের দৃশ ছিল চোখে পড়ার মত। আবার বিকেল হলেই গাছে হাড়ি দিয়ে যেত গাছিরা ফের সকালে রস আবার আশায়। অনেক হাড়ি ভর্তি হয়ে রস গাছের নিচে পড়ে রসে ভিজে থাকত ঐ গাছের নিচের জায়গায়। ঐ দৃশ্যও এখন স্মৃতি প্রায় বলে মনে করেন তিনি। সূত্র জানায়, উপজেলায় প্রায় এখনো প্রায় শতাধিক গাছি পুরো বছরের খাবার জোগার করে এ পেশা থেকে। আগে যেসব গুড় ব্যবসায়ীরা খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাত। কাঁচা রসের দাম ভাল পাওয়ায় এখন সে রস দিয়ে গুড় তৈরী করছেন না তারা। তবে স্থানীয়রা মনে করেন, রূপগঞ্জে যে কয়টি গাছ এখনো আছে তা সংরক্ষণ ও গাছ বৃদ্ধির জন্য নতুন চারা লাগালে এ সংকট দূর হবে। ফলে ঐতিহ্যবাহী এ মধুরস থেকে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ রস সংগ্রহ করে শীত মৌসুমে ২০ থেকে ৩০ মণ গুড় তৈরি করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতে পারবে। এখন গাছ কমে যাওয়াতে যে রস পায় তা দিয়ে পরিবারের সম্পূর্ণ চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।