Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তুরস্কে ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের ঠিকাদারদের গ্রেফতার করা হচ্ছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:০০ পিএম

তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, গত সোমবারের ভূমিকম্পে ধসে যাওয়া অনেক ভবনের নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১১৩টি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তুরস্কের পুলিশ এরই মধ্যে ভবন নির্মাণ ঠিকাদারসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে দক্ষিণ তুরস্কে বিক্ষোভের কারণে অনেক এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে।

তুরস্ক এবং সিরিয়ায় এই ভূমিকম্পে এপর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তুরস্কে আরও কিছু মানুষকে গ্রেফতার করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে অনেকে মনে করছেন, এই বিপর্যয়ের সার্বিক দায় অন্যের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ এসব করছে। বহু বছর ধরেই বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছিলেন যে, ব্যাপক দুর্নীতি এবং সরকারি নীতির কারণে তুরস্কে নতুন যেসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলো মোটেই নিরাপদ নয়।

যেসব ঠিকাদার ভবন নির্মাণের নিয়ম-কানুন না মেনে কাজ করেছে, তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল এই সরকারি নীতির আওতায়। এর উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কের নির্মাণ খাত যেন ভালো ব্যবসা করতে পারে। তুরস্কের ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলেও এটা করা হয়েছিল। কিন্তু ভূমিকম্পে হাজার হাজার ভবন ধসে পড়ে। এরপর প্রশ্ন উঠে, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এত বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হলো কি না।

প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান ক্ষমতায় আছেন প্রায় বিশ বছর ধরে। কিন্তু তুরস্কে এখন একটি নির্বাচন আসন্ন, এবং এই ঘটনায় প্রেসিডেন্ট এরদোগান তোপের মুখে আছেন। তিনি তার সরকারের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু দুর্যোগ-কবলিত এলাকায় এক সফরের সময় তিনি এই বিপর্যয়ের জন্য ভাগ্যকেই দোষারোপ করেন। ‘এরকম ঘটনা সবসময় ঘটেছে, এটি নিয়তির অংশ’, বলেছেন তিনি।

এদিকে ভূমিকম্পের ছয় দিন পর তুরস্কে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। শনিবার হাতাই প্রদেশে দুটি অজ্ঞাতনামা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের পর সেখানে জার্মান এবং অস্ট্রিয়ান উদ্ধার-কর্মীদের কাজ বন্ধ রাখতে হয়। অস্ট্রিয়ান উদ্ধারকর্মী দলের লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিয়ের কুগেলওয়েইস বলেন, “সেখানে এখন যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তার মধ্যে কারও জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ।”

তুর্কি সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় সেখানে আবার উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। দক্ষিণ তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়া জুড়ে লাখ লাখ মানুষ এখন গৃহহীন। প্রতিরাতেই সেখানে তাপমাত্রা এখন হিমাংকের নিচে নেমে যাচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে, দুর্যোগ কবলিত এলাকায় আট লাখের বেশি মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। অন্যদিকে সেখানে কর্মরত জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন যে, এই ভূমিকম্পে শেষ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা এখনকার দ্বিগুণে পৌঁছাতে পারে।

সিরিয়ায় এখন নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার। তবে শুক্রবারের পর আর নতুন করে নিহতের সংখ্যা জানানো হচ্ছে না। নতুন কাউকে জীবিত উদ্ধারের আশা কমছে। যদিও এরই মধ্যে বেশ কিছু অবিশ্বাস্য উদ্ধার অভিযান সফল হয়েছে। শনিবার গাজিয়ানটেপ প্রদেশে একটি পরিবারের পাঁচ জনকে উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে হাতাই প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের নিচে ১৩২ ঘণ্টা আটকে থাকার পর সাত বছরের এক মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।

জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার প্রধান এই ভূমিকম্পকে ঐ অঞ্চলে গত একশো বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প বলে বর্ণনা করেছেন। শনিবার তিনি তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। বিবিসির লিস ডুসেটকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘ কর্মকর্তা মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, ‘আমার মনে হয় এটি আমার দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং যে ধরনের আন্তর্জাতিক সাড়া আমরা পেয়েছি সেটাও খুব অসাধারণ।’ সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেফতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ