নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার : বঙ্গবন্ধু সিনিয়র মেনস সেন্ট্রাল জোন ইন্টারন্যাশনাল ভলিবল টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। গতকাল মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের ফাইনালে লাল-সবুজরা ৩-০ সেটে (২৫-২২,২৫-২২ ও ২৫-৬ পয়েন্টে) কিরগিজস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। আর এ জয়ে ভলিবলের কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে প্রথম শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। তাই তো ফাইনাল শেষে উচ্ছ¡সিত বাংলাদেশ অধিনায়ক সাঈদ আল জাবির। তিনি বলেন, ‘এ জয় শুধু আমাদেরই নয়, পুরো দেশের। কেন না, ভলিবলে এর আগে কখনো আমরা আন্তর্জাতিক সাফল্য পাইনি।’
ফাইনালটি ঠিক ফাইনালের মতোই খেলেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের প্রথম সেট থেকেই যেন অপ্রতিরোধ্য ছিল লাল-সবুজরা। তাই শুরু থেকেই আধিপত্যটা ছিল তাদেরই। প্রথম সেটে বাংলাদেশ ২৫-২২ পয়েন্টে হারায় কিরগিজস্তানকে। দ্বিতীয় সেটে আরো চড়াও হয়ে খেলতে থাকে আল জাবির বাহিনী। তাদের চোখে ছিল জয়ের নেশা। তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ এই সেট ২৫-২৩ পয়েন্টে জিতে নেয় স্বাগতিকরা। ফলে ২-০ সেটে এগিয়ে যায় তারা। টুর্নামেন্ট সেরা হতে বাংলাদেশের দরকার ছিল তৃতীয় সেটে জয়। তাহলেই সরাসরি চ্যাম্পিয়ন হবে লাল-সবুজরা। সে লক্ষ্যেই তৃতীয় সেটে খেলতে থাকেন জাবিররা। ম্যাচে যখন ৭-৬ পয়েন্টে এগিয়ে বাংলাদেশ। ঠিক তখনি কিরগিজস্তানের লিবারু (মাঠ ঘুরে খেলে থাকা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়) তকতয়েভ নুরমোখম্মেদ আহত হয়ে কোর্ট ছেড়ে বাইরে যেতে বাধ্য হন। খেলা বন্ধ হয়ে যায়, এরপর আর ম্যাচে ফেরা সম্ভব হয়নি কিরগিজস্তানের পক্ষে। পর্যাপ্ত লিবারুর অভাবে খেলা চালাতে অস্বীকৃতি জানায় তারা। ফলে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে ওঠেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে উপস্থিত কয়েক হাজার বাংলাদেশ সমর্থক। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে ইনডোরের ভেতরে লেপ অব অনার দেন আল জাবির, মাসুদ হোসেন, রাশেদ খান মেননরা। উল্লাস করতে করতে দলের ইরানি কোচ আলীপোর আরোজিকে শূন্যে তুলে ধরেন তারা। আন্তর্জাতিক কোনো আসরে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দটা এভাবেই ভাগ করে নেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এই কিরগিজস্তানের কাছেই ৩-০ সেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। তিনমাস পর সেই দলটিকে সমান ব্যবধানে হারিয়ে প্রতিশোধ নিল বাংলাদেশ। কেবল প্রতিশোধনই নয়, চ্যাম্পিয়নও হলো। তবে লিবারুর সঙ্কটেই এমনভাবে হার মেনেছে কিরগিজরা। ১২ জন থাকার কথা থাকলেও আটজন খেলোয়াড় নিয়ে ঢাকায় আসে কিরগিজস্তান। আগেরদিন পা মচকে আহত হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন চালমাশবেকভ তালগট। কাল তকতয়েভ নুরমোখাম্মেদও আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন। ফলে দুই লিবারুই মাঠ ছাড়ায় খেলা চালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় কিরগিজস্তান এবং হার মেনে নেয়। টুর্নামেন্টের সের খেলোয়াড়া নির্বাচিত হন বাংলাদেশের হরষিত বিশ্বাস এবং ফাইনালে সেরার পুরস্কার পান অধিনায়ক সাঈদ আল জাবির। ফাইনাল শেষে বাংলাদেশের হাতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন বিভাগের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এমপি, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি বাদল রায়, ভলিবল ফেডারেশনের সভাপতি আতিকুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু উপস্থিত ছিলেন।
সাফল্য পেয়ে বাংলাদেশের ইরানি কোচ আলীপোর আরোজি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। আমার ছেলেরা খুব ভালো পারফরমেন্স করেছে। এ সাফল্য ধরে রাখতে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের। আমি বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনকে অনুরোধ করব দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে।’ অধিনায়ক আল জাবিরের কথা, ‘শুরু থেকে আমরা বলে আসছিলামÑ লক্ষ্য ফাইনালে খেলা। গতকালও (পরশু) অনেকে জানতে চেয়েছেন, ফাইনালে কি লক্ষ্য? দেশের মাটিতে খেলা, দর্শকও আমাদের পক্ষে ছিলÑ আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল শিরোপা জেতা। আমরা অনেক অনেক চেষ্টা করেছি এবং সাফল্য পেয়েছি। এ জয়ের আনন্দ আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’ তিনি যোগ করেন, ‘কিরগিজ ভলিবল সম্পর্কে আমরা বেশি কিছু জানি না। এই টুর্নামেন্টেই আমরা অন্য দেশগুলোর খেলা সম্পর্কে জেনেছি। গত ম্যাচে কিরগিজস্তানের কাছে আমরা হেরেছিলাম। হারের পর ম্যাচটি আমরা পর্যালোচনা করেছি, দেশের মাটিতে জিতব, এ আশা নিয়ে আজ (কাল)।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।