পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। আদালত এলাকায় জুড়ে থাকা সবুজের স্নিগ্ধতা ভাস্কর্যটি যেন এক অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী, নান্দনিকতার এক অনন্য নিদর্শন ও মুগ্ধতার ভিন্ন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। সুপ্রিমকোর্টের মূল ভবনের সামনে ফোয়ারার মধ্যে এটি স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাস্কর্যের সৌন্দর্যের বর্ধনে নানা কারুকার্যের কাজ শেষ হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে এই প্রথম কোনো ভাস্কর্য স্থাপন করা হলো। নতুন বর্ষের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, প্রধান বিচারপতির অনুমতিক্রমে ভাস্কর্যটির স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। কাজ সম্পন্ন করতে আরো কিছু দিন লাগবে। আশা করছি নতুন বছরের শুরুতে প্রধান বিচারপতি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।
গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সারা দেশে থেকে বিচারপ্রার্থীরা আদালত অঙ্গনে এসে ভাস্কর্যটির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। আবার অনেকে মোবাইলে ক্যামারায় তুলে নিচ্ছেন ছবি। নারী ভাস্কর্যটি দাঁড়িয়ে আছে; তবে চোখ দুটি বাঁধা, তার ডান হাতে তলোয়ার, বাম হাতে দাঁড়িপাল্লা। তলোয়ারটি নিচের দিকে নামানো। দাঁড়িপাল্লা উপরে ধারণ করে আছেন। ভাস্কর্যটি শাড়ি পরানো হয়েছে। তবে কোনো নাম দেয়া হয়নি। নামফলক এখনও দেয়া হয়নি। ভাস্কর্যটির কাজ প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামীতে এর একটি নামও দেয়া হবে। এরপর প্রধান বিচারপতি উদ্বোধন করবেন।
সূত্রে জানা যায়, আইন অন্ধ তাই প্রতিকৃতির চোখ দুটি বাঁধা, এটা ধনী-গরিব সবার জন্য সমান। ডান হাতে তলোয়ার। এর অর্থ হলো, অন্যায়কারীকে একজন বিচারক দ- প্রদান করবেন। প্রতিকৃতির বাম হাতে দাঁড়িপাল্লা আছে। এর অর্থ হলো, একজন বিচারক সবার মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।
একজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, দেশের আদালত প্রাঙ্গণে এটি প্রথম কোনো ভাস্কর্য। যতটুকু জেনেছি এটা ন্যায় বিচারের প্রতীক। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ভাস্কর্যের গায়ে স্কার্ফ পরা থাকলেও এখানে শাড়ি পরানো হয়েছে। এটা আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে করা হয়েছে বলেও জানা যায়। তিনি আরো বলেন, এই ধরনের একটি ভাস্কর্য ইংল্যান্ডের ওল্ড বেইলি ক্রিমিনাল কোর্ট ভবনের সামনে স্থাপিত রয়েছে। এটি হলো গ্রিকদের ন্যায় বিচারের প্রতিকৃতি। তার আদলে দেশের আদালত প্রাঙ্গণে এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্টার অফিস সূত্রে জানা যায়, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর বিচার বিভাগের বিচারিক সেবা বৃদ্ধি ও মামলা জট কমাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে বিচারকার্য পরিচালনায় কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার নিষ্পত্তিতে বিচার বিভাগের কর্মরত কর্মকর্তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কর্মস্থলে উপস্থিতি, বিচার বিভাগের অভিযোগ ও পরার্মশ জানাতে সুপ্রিমকোর্টের দপ্তরের সামনে অভিযোগ বাক্স স্থাপন উল্লেখযোগ্য। একই সঙ্গে সারা দেশের বিচার অঙ্গনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও আদালত প্রাঙ্গণের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়। তারই ধারাবাকিতায় ২০১৫ সালের শেষদিকে প্রধান বিচারপতি অনুমতিক্রমে সুপ্রিমকোর্ট এলাকার আরো দৃষ্টিনন্দন করতে ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনা নেয় সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।
বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের ফুল কোর্টে আলোচনাও হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা যায়। সেখানেও ভাস্কর্য স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত আসে। এরপর ভাস্কর্যটি নির্মাণে দেশের স্বনামধন্য ভাস্কর মৃণাল হককে দায়িত্ব দেয়া হয়। চলতি বছর শুরুর দিকে ভাস্কর্যটির নমুনা সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনকে দেখান ভাস্কর মৃণাল হক। সুপ্রিমকোর্ট বিষয়টি দেখে অনুমোদন দেয়ার পর গত ১৮ ডিসেম্বর কোর্টে মূল ভবনের সামনে ফোয়ারার মধ্যে এটি স্থাপন করা হয়। গত ২৪ ডিসেম্বর বিচার বিভাগীয় সম্মেলন ২০১৬ এর সাজ সজ্জায় স্থান পায় ভাস্কর্যটির। মূল মঞ্চের দু’পাশে দুটি ভাস্কর্য বসানো হয়।
ভাস্কর্যটি বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। স্টেইলনেস স্টিলের বিভিন্ন আকারে পাইপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ভাস্কর্যটির রাতের অন্ধকারে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হবে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে ভাস্কর্যটি সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিলে এর একটি নাম দেয়া হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। জানা যায়, আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ভাস্কর্য এই প্রথম। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সামনে নেই কোনো ভাস্কর্য।
এই প্রতিকৃতির ভাস্কর মৃণাল হক সাংবাদিককের বলেন, সারা বিশ্বেই এটি বিচার বিভাগের প্রতীক। অন্যান্য দেশে স্থাপিত ভাস্কর্যের সাথে আমাদের দেশের ভাস্কর্যের একটু পার্থক্য রয়েছে। ভাস্কর্যের গায়ে স্কার্ফ পরা থাকলেও এখানে শাড়ি পরানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দেশে পায়ের নিচে সাপ থাকলেও এখানে এটি বাদ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) সাব্বির ফয়েজ ইনকিলাবকে বলেন, ভাস্কর্যটি ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে করা হয়েছে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে এটি আদালত প্রাঙ্গণের নান্দনিকতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।
উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, রোমানদের কাছে এই ‘লেডি জাস্টিস’ ন্যায় বিচারের প্রতিকৃতি। গ্রিক মিথ অনুযায়ী সারা বিশ্বেই এটি বিচার বিভাগের প্রতীক রূপে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতিকৃতির চোখ বাঁধা রয়েছে। এর অর্থ হলো- একজন বিচারক পক্ষপাতিত্ব করবেন না। তার কাছে সবাই সমান। আইন অন্ধ তাই প্রতিকৃতির চোখ দুটি বাঁধা, এটা ধনী গরিব সবার জন্য সমান। ডান হাতে তলোয়ার। এর অর্থ হলো, অন্যায়কারীকে একজন বিচারক দ- প্রদান করবেন। প্রতিকৃতির বাম হাতে দাঁড়িপাল্লা আছে। এর অর্থ হলো, একজন বিচারক সবার মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।