Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিচারকদের অপসারণ আইনের বিষয়ে বিভক্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি

প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিচারকদের অপসারণের খসড়া আইনের বিষয়ে বিভক্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। এই বিষয়ে পাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন সমিতির আওয়ামীপন্থী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীগণ। সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন-২০১৬ পাস হলে তা সংবিধান পরিপন্থী হবে। এটি স্বাধীন বিচারকার্য পরিচালনায় বাধার সৃষ্টি করবে।
এদিকে সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আইনজীবী সমিতির পক্ষে এমন মতামত দেয়া কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ব্যারিস্টার খোকন ব্যক্তিগত মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ধরনের তদন্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করবে বলে আমি মনে করি না। তাছাড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় মাত্র নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট বারের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এটি পাসের মাধ্যমে সরকার পুরোপুরি বিচারপতিদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এই পুরো প্রক্রিয়াটিই ভীতিকর। চাপ সৃষ্টি করার জন্য, ন্যায়বিচার যেন না করতে পারে, সরকারের বিপক্ষে যেন রায় দিতে না পারেÑএজন্য এমন একটি আইন পাসের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এই আইন পাস করার আগে জনমত যাচাই করা উচিত। এ ব্যাপারে যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, অর্থাৎ, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সিনিয়র আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের আইন বা নীতিমালা প্রণয়নের দাবির সঙ্গে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে বিচার বিভাগ সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান মাহবুব উদ্দিন খোকন।
পরে এ বিষয়ে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের (তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও ) কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৭২ সালের সংবিধানেও এই বিধানটি ছিল। কিন্তু তখন কোনো বিচারককে অপসারণ করা হয়নি। সরকারী প্রত্যেক কর্মকর্তাদের আচরণবিধি আছে। সুতরাং এই ধরনের তদন্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করবে বলে আমি মনে করি না। তাছাড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় মাত্র নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। এখনো অনেক প্রক্রিয়া বাকি আছে। সংসদে পাস হওয়ার পরও এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে।’ সমিতির পক্ষে সাধারণ সম্পাদকের সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘তিনি তার ব্যক্তিগত মতামত দিতেই পারেন। তবে সমিতির পক্ষে বক্তব্য দিতে হলে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের জানা থাকতে হবে। সভাপতি হিসেবে আমি এ ধরনের কোনো সংবাদ সম্মেলনের কথা জানি না। আগে বিষয়টি দেখে তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন-২০১৬-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ বা অসামর্থ্য-সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে দাখিল করতে হবে। ১০ জন সংসদ সদস্যকে নিয়ে স্পিকার একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা নিরূপণ করবেন। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে স্পিকার বিষয়টি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির কাছে পাঠাবেন। তদন্ত গোপনে করতে হবে। প্রাথমিক তদন্ত শেষ করতে হবে সাত দিনের মধ্যে। কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন সাবেক একজন প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের একজন সাবেক বিচারপতি। এ ছাড়া ওই কমিটিতে সাবেক একজন অ্যাটর্নি জেনারেল এবং একজন সম্ভ্রান্ত নাগরিককে রাখার কথা বলা হয়েছে। তদন্ত-প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত ফলাফল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। এরপর সংবিধানের ৯৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারককে অপসারণ-সংক্রান্ত প্রস্তাব জাতীয় সংসদের মোট সদস্যসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় গ্রহণ করতে হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি ওই বিচারককে অপসারণ করবেন। আইনে অভিযুক্ত বিচারকদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রাখা হয়েছে। কেউ ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক অভিযোগ করলে দুই বছর এবং অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিচারকদের অপসারণ আইনের বিষয়ে বিভক্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ