মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
২০০২ সালে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনায় গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে তৈরি করা বিবিসির ডকুমেন্টারির প্রদর্শন করায় ভারতীয় পুলিশ শুক্রবার নয়াদিল্লিতে ২৪ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে।
তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী নিয়ে কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নর্থ ক্যাম্পাসের দলিত ছাত্র সংগঠন ভীম আর্মি স্টুডেন্ট ফেডারেশন ও এনএসইউআই-এর যৌথ উদ্যোগে শুক্রবার দুপুরে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টি চত্ত্বরে বিতর্কিত তথ্যচিত্রটির প্রদর্শনীর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। তথ্যচিত্র প্রদর্শনী নিয়ে এদিন বাম-কংগ্রেস ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীদের উপর দফায় দফায় হামলা চালায় গেরুয়া ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। বাইরে থেকেও বহু বহিরাগতরা দিল্লি ক্যাম্পাসে গিয়েছিল বলে উঠেছে অভিযোগ।
অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রটোকল ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে দিল্লি পুলিশের বিশাল বাহিনী। কেটে দেয়া হয় বিদ্যুৎ, বন্ধ করে দেয়া হয় জনসংযোগ, এমনকি বন্ধ করে দেয়া হয় তথ্যচিত্র প্রদর্শনী। ছাত্র সংগঠনের বহু নেতাকে রীতিমতো চ্যাংদোলা করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া হয়। অন্যদিকে প্রদর্শনীর বিরোধিতায় ক্যাম্পাস জুড়ে তাণ্ডব চালায় বিজেপি সমর্থিত অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সমর্থকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে চলে ভাঙচুর, অবাধ লুটপাট। আর্টস ফ্যাকাল্টি ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।
এদিন দিল্লি পুলিশের সঙ্গেও হাতাহাতিতে জড়ান শিক্ষার্থীদের একাংশ। অনেকে এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে বিতর্কিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে পুলিশ সূত্রে। তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করায় ডিইউ প্লাজা গেট থেকে প্রায় ২৪ জন ছাত্রকে আটকও করে পুলিশ। ছাত্র সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, বিষয় যাই থাকুক, তথ্যচিত্র দেখা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাতে বাধা দিচ্ছে৷
অন্যদিকে, এবিভিপি-র দাবি, দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে নির্মিত এই তথ্যচিত্র প্রদর্শনী তারা হতে দেবেন না। তাদের দাবি, দেশের শিক্ষাপ্রাঙ্গনকে রাজনৈতিক আখাড়া রূপে প্রজেক্ট করতে দিতে তারা নারাজ। এদিন ডিইউ-এর চিফ প্রক্টর ডা. রজনী আব্বি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর জন্য ছাত্র সংগঠনের তরফে কোনও অনুমতি নেয়া হয়নি৷’ তবে কংগ্রেস সমর্থিত এনএসইউআই-র সাধারণ সম্পাদক দীনেশ কুমার বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট তথ্যচিত্রের প্রদর্শনীর আগেই অনুমতি চেয়েছিলাম। পুলিশ বা প্রশাশন কেউ তাতে অনুমতি দেয়নি। বাধ্য হয়েই, মৌলিক অধিকারের প্রেক্ষিতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করার উদ্যোগ নেয়া হয়।’
এ বিষয়ে ডিসিপি (নর্থ) দিল্লি পুলিশ, সাগর সিং কলসি বলেছেন, ‘কেন্দ্রের তরফে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিতর্কিত এই তথ্যচিত্র প্রদর্শনী। তাও ক্যাম্পাসের এই তথ্যচিত্র দেখানোর চেষ্টা চালানো হয়। তা নিয়ে সহিংসতা ছড়ায় ক্যাম্পাসে। বাধ্য হয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।’
শুধু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দিল্লির আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়েও ‘মোদি কোয়েশ্চন’ প্রদর্শনী নিয়ে এদিন উত্তেজনা ছড়ায়। বাম ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (এসএফআই) র তরফে আম্বেদকর ক্যাম্পাসে এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শনীর পরিকল্পনা করা হয়। সেখানেও ব্যাপক উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। এবিভিপি-র সঙ্গে বচসায় জড়ান বাম ছাত্র সংগঠনের সমর্থকেরা৷ এখানেও প্রদর্শনী আটকাতে কেটে দেয়া হয় বিদ্যুৎ। এরপর ছাত্র সংগঠনের তরফে ল্যাপটপে দেখানো হয় বিতর্কিত এই তথ্যচিত্র৷
ছাত্র সংগঠনের তরফে অভিযোগ আনা হয়, প্রশাসন চূড়ান্ত অসহযোগীতা করেছে তাদের সঙ্গে। ক্যাম্পাসের গেট বন্ধ করে দেয়া হয়, বসে পুলিশ পিকেট৷ সংবাদমাধ্যমকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি ক্যাম্পাসে৷ প্রদর্শনী পণ্ড করতে এবিভিপি-র তরফে উচ্চৈঃস্বরে চালানো ধার্মিক সংগীত, ভজনকীর্তন। কিন্তু শেষমেশ এই তথ্যচিত্র দেখতে সফল হয় দিল্লির আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷
প্রসঙ্গত, ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টুইটার এবং ইউটিউবকে বিবিসি ডকুমেন্টারি ‘ইন্ডিয়াঃ দ্য মোদি কোয়েশ্চন’ সম্বন্ধিত লিঙ্কগুলিকে ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে, দাবি করা হয়েছে তথ্যচিত্রে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক বিষয়কে ‘প্রপাগান্ডার অংশ’ এবং তথ্যচিত্রে ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে, একাধিক ছাত্র সংগঠন এবং বিরোধী দলগুলির যুব শাখা বিভিন্ন রাজ্যের কলেজ ক্যাম্পাসে তথ্যচিত্র স্ক্রীনিং করাকে তাদের সরকার বিরোধী কার্যকলাপের অংশ বলেই ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। সূত্র: ডন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।