পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিউজউইক : তিন ঘণ্টারও বেশি আলোচনাকালে সিরিয়া ও ইউক্রেনের নাম কোনো রকমভাবে এসেছিল।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের বছর শেষের ম্যারাথন সংবাদ সম্মেলন কার্যকরভাবে রাশিয়ার রাজনৈতিক বছরের উপর পর্দা টেনে দিয়ে শেষ হয়। তিন ঘণ্টার এ অনুষ্ঠান ছিল বরাবরের মতোই রাশিয়ার নেতার ধৈর্য ও কারিশমার প্রদর্শনী, পাশাপাশি রাশিয়া ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার চাহিদা কী তারও প্রকাশ ঘটে এতে। এতে তিনি বলেন, রাশিয়া ফেডারেশন যে কারো চেয়ে শক্তিশালী। আর ট্রাম্প আমন্ত্রণ জানালে তিনি অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন।
এ সংবাদ সম্মেলনে যে সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত হন তা রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, ১৪৩৪ জন। ২০০১ সালে তিনি যখন সংবাদ সম্মেলন করেন তার চেয়ে প্রায় তিনগুণ। চেহারা ছিল একই রকম। বিবিসি ও এনবিসিসহ প্রধান সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিনিধিরা বিশাল বিস্তৃত রাশিয়ার সকল প্রান্ত থেকে আসা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে লাইন দিয়েছিলেন। তাদের কারো কারো হাতে ধরা ছিল বিমূঢ় করার মত প্রশ্ন লেখা প্ল্যাকার্ডÑ ভলগা নদী কোথায় বয়ে চলেছে?
সংবাদ সম্মেলনে কোনো ফলো-আপ প্রশ্ন করার অনুমতি ছিল না। নিউজ চ্যানেল আরবিসি-র এক সাংবাদিক খুব চেষ্টা করেছিলেন সে বাধা টপকাতে। পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ তা হতে দেননি। তিনি বলেন, এটা কোনো সংলাপ নয়।
শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্নের চাপ সৃষ্টি করেন। যেমনÑ রাশিয়ার অর্থনীতি, ক্রিমিয়া, ডোপিং, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্ভাব্য নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং পাশ্চাত্যে পুরনো রাজনৈতিক অভিজাতদের পতন। প্রথম একঘণ্টাতে এ সব প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়।
গোটা সময়টাতে সিরিয়া বা ইউক্রেনের পরিস্থিতির কথা কোনোমতে উল্লেখিত হয়। ইউক্রেন সম্পর্কে পুতিন মাত্র দু’টি প্রশ্নের জবাব দেন। সচরাচর যা হয়, অত্যন্ত জরুরি বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে রাষ্ট্রীয় মিডিয়া। দাবা ও আশ্রয়হীন কুকুরদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারেও কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বহু প্রশ্নের জবাব দেয়া এড়িয়ে যান। যেমনÑ দায়িত্ব পালনকালে তার সবচেয়ে বড় ভুলের ব্যাপারে পশ্ন এবং সাংবাদিকদের ও পেসকভের সাথে তার একই রকম রসিকতা। তার ফলে যে আনন্দ ও হাসির সৃষ্টি হয় তাতে কিছু দর্শক হয়ত বিস্মৃত হয়েছিলেন যে এটি একটি সংবাদ সম্মেলন, ওয়ান ম্যান শো নয়। পুতিনের উচ্ছলতায় তিন ঘণ্টা সময় গড়িয়ে যায় এবং তা তাকে আগের অনেক ঘটনার তুলনায় হাসিখুশি মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করে।
রসিকতার দিক দিয়ে দেখা যায়, রুশ প্রেসিডেন্ট ‘ভালো পুলিশ’-এর ভূমিকায় অভিনয় করেন আর পেসকভ যখন একজন সাংবাদিককে আর প্রশ্ন না করার জন্য বলেন তখন তিনি তাকে স্বৈরাচারীর আচরণের জন্য অভিযুক্ত করেন। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে তিনি আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাবনা দেখছেন কিনা, তার জবাবে তিনি প্রশ্নকারীকে বলেনÑ কোন দেশের কথা বলছেন? এ সময় শ্রোতা-দর্শকদের কয়েকজন হেসে ওঠেন। এমনকি পেসকভ ক্রেমলিন পুলের আরেকজন সাংবাদিককে মনোনীত করার পর তিনি তাকে হাসিমুখে আঙুলের খোঁচাও দেন।
পুতিনের বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনের অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে
রাশিয়ার শক্তি : পুতিন বলেন, রাশিয়ান ফেডারেশন যে কারো চেয়ে শক্তিশালী এবং আগ্রাসনকারীÑ এটাই হচ্ছে মূল কথা। এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ঘটনাক্রমিক কোনো বিষয় নয়। আগ্রাসনকারী বলতে কি বোঝায়? আগ্রাসনকারী হচ্ছে সে যে রাশিয়ান ফেডারেশনকে আক্রমণ করতে পারে। যে কোনো সম্ভাব্য আগ্রাসনকারীর চেয়ে আমরা শক্তিশালী। এটা বারবার বলতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি এও বলেছি কেন আমরা শক্তিশালী। এটা রাশিয়ার সশস্ত্রবাহিনীকে আধুনিকীকরণের সাথে সাথে আমাদের দেশের ইতিহাস ও ভূগোল ও রাশিয়ার সমাজের বর্তমান অবস্থার সাথে সম্পর্কিত।
মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি : বর্তমান মার্কিন প্রশাসন ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতৃবৃন্দ তাদের ব্যর্থতার দায় বাইরের ঘটনার উপর চাপাচ্ছেন। দু’জন ইলেক্টর ট্রাম্পের পক্ষে এবং ৪ জন ইলেক্টর হিলারির পক্ষে ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ডেমোক্র্যাটরা হেরে যান। তারা সবখানেই হারছেন এবং এর জন্য অন্যকে দায়ী করার চেষ্টা করছেন। আমি মনে করি এটা তাদের নিজেদের জন্য অপমানজনক। কিভাবে আনন্দের সাথে হারতে হয় তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতে, যে দলটি নিজেদের ডেমোক্র্যাটিক বলে, ঘটনা-প্রমাণে মনে হয় তারা দলের নামের প্রথম অংশটিই ভুলে গেছে। এটা সুস্পষ্ট।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎ : অবশ্যই একটি শান্ত পরিবেশ থেকে আসতে হবে। প্রস্তুতি ছাড়া কোনো বৈঠক সফল হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় হচ্ছে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ। ট্রাম্প নিজে বলেছেন যে তারা খারাপ হবেন না, সুতরাং সেগুলোকে কীভাবে ভালো করা যায় তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। ট্রাম্প যদি আমাকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানান, আমি অবশ্যই যাব।
রাষ্ট্রীয় মদতে হ্যাকিংয়ের অভিযোগ : মার্কিন ভাবি প্রেসিডেন্ট ঠিকই বলেছেন, কে জানে এ হ্যাকাররা কারা? আমার মতে, মূল কথা হচ্ছে হ্যাকাররা জনগণের মতেরই প্রতিফলন ঘটিয়েছ। তারা সত্যেরই প্রকাশ ঘটিয়েছে। হ্যাকাররা ডেমোক্র্যাটিক দলের মধ্যেই জনমতের ব্যাপারে কৌশল অবলম্বন করার বিষয় দেখিয়েছে। তারা একজনের বিরুদ্ধে ছিল আরেকজন, ছিল স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে, আর ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির প্রধান পদত্যাগ করেন।
নয়া অস্ত্র প্রতিযোগিতা : পুতিন ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির উল্লেখ করে বলেন, মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসার পর নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়। এটা স্পষ্ট। যখন একটি পক্ষ একতরফাভাবে একটি চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে এবং বলে যে এটা তাদের জন্য পারমাণবিক বিরোধী ছাতা তৈরি করবে, অন্য পক্ষ তখন অবশ্যই হয় একই ছাতা তৈরি করবে যা করা উচিত বলে কিছুতেই আমাদের মেনে নেয়া সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র : পুতিন বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সেকেলে নির্বাচন ব্যবস্থা। এটা এমনভাবে করা যেখানে অঙ্গরাজ্যগুলোর অগ্রাধিকার রক্ষিত হয়। এটা কেন এভাবে হলো, আপনাকে তা ভোটারদের জিজ্ঞাসা করতে হবে। এ সুবিধা থাকা ও তা বহাল রাখা হয়েছে বিশেষ করে হয়তো নাগরিকদের জন্যই। এটা আমেরিকার লোকদের বিষয়, আমাদের নিজের নয়।
মুখপাত্রের জন্য উচ্চতম স্থান : পুতিন বলেন, পুরনো চীনা প্রবাদে আছেÑ যে উঁচুতে থেকে সে বেশিদূর দেখে। পেসকভ যখন মাইক্রোফোন কোথায় বসবে তার নির্দেশ দিচ্ছিলেন তখন তিনি এ কথা বলেন।
রাশিয়ায় ডোপিং : পুতিন বলেন, রাষ্ট্রের মদতে কখনোই ডোপিং ব্যবস্থা চালু ছিল না। এখন অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও ডোপিং সমস্যা আছে। আমাদের অবশ্যই তা স্বীকার করতে হবে এবং তা পরিহারের জন সবকিছু করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি, ডব্লিউএডিএ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে। ডব্লিউএডিএসহ যে কোনো ডোপিং বিরোধী সংস্থার কর্মকা- হতে হবে স্বচ্ছ, স্পষ্ট ও যাচাইযোগ্য। তাদের কাজের ফলাফল সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। তিনি প্রশ্ন করেন, সবকিছুই কেন গোপনে করতে হবে, আমরা তা বুঝতে পারি না। সব কিছুই খোলামেলা হতে হবে।
রুশ রাষ্ট্রদূত নিহত হওয়ার পর তুরস্কের সাথে সম্পর্ক : আমি সততার সাথে বলব যে তুরস্কের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অনুমতি ছাড়া আমাদের জঙ্গি বিমানকে গুলি করা হয়েছেÑ এ তত্ত্বের ব্যাপারে আমি সন্দিহান ছিলাম। আমার ধারণা হয় যে এরা রুশ-তুরস্ক সম্পর্কের ক্ষতি করতে চাইছে। কিন্তু এখন রুশ রাষ্টদূতের উপর স্পেশাল সার্ভিসের একজন লোক কর্তৃক হামলার পর আমি আমার ধারণার পরিবর্তন করতে শুরু করেছি এ কারণে যে যে কোনো কিছুই ঘটা সম্ভব এবং পুলিশ ও সামরিক বাহিনীসহ রাষ্ট্রকাঠামোতে ক্ষতিকর লোকদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এটা কি রুশ-তুর্কি সম্পর্কের ক্ষতি করেছে? পুতিন বলেন, আমি এ সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারি না।
ইসলামিক স্টেট শব্দ ব্যবহারে মিডিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা : এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রশ্নকারী সাংবাদিককে পুতিন বলেন, আমি কি আপনার কোনোকিছু করা নিষেধ করতে পারি? আমি মনে করি, এটা একোরেই নিরর্থক। আমি চাইব সন্ত্রাসের সাথে ইসলামকে উল্লেখ না করা হোক।
আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন : কোন দেশে সেটা? (হাসি) আমি বলব যে এটা সম্ভব, কিন্তু পরামর্শ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচন করা ও না করা : আপনি উস্কানি দিচ্ছেন। জবাব হচ্ছে সাধারণ। যখন সময় হবে আমি দেখব দেশে কি ঘটছে, বিশে^ কি হচ্ছে এবং আমাদের অর্জন কী, আমরা কী অর্জন করতে পারি। তারই ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ করা না করা নির্ভর করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।