Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জানুয়ারিতে একদিনও বিশুদ্ধ বাতাস পায়নি রাজধানীবাসী

ঢাকার বাতাস গতকালও ছিল বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

এক সময়ের তিলোত্তমা নগরী রাজধানী ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহর হিসাবে পরিচিত হচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত একদিনও বিশুদ্ধ বাতাসে নিশ্বাস নিতে পারেনি ঢাকাবাসী। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) স্কোর ২৮৫ নিয়ে গতকালও ঢাকা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের শীর্ষে। এই স্কোরে বাতাসের মান খুব অস্বাস্থ্যকর। ভারতের দিল্লি, কিরগিজস্তানের বিশকেক যথাক্রমে একিউআই ১৯৩ ও ১৯০ স্কোর নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে।
চলতি বছরের শুরুর দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি একিউআই স্কোর ১৭৭ নিয়ে ঢাকা ছিল বিশ্বের দূষিত বাতাসের তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থানে। ২ ও ৩ জানুয়ারি ২০২ ও ২০১ স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা ছিল দ্বিতীয় স্থানে। এরপর ৪, ৫, ৬, ৮, ১১ এবং ১৩ জানুয়ারি ঢাকা ছিল বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের শীর্ষ স্থানে। এর মধ্যে ৫ এবং ১৩ জানুয়ারি বাতাসে একিউআই স্কোর ছিল ৩০১ ও ৩০৬। ৯ এবং ১০ জানুয়ারি ঢাকা ছিল দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় তৃতীয় স্থানে এবং ৭ জানুয়ারি ছিল চতুর্থ স্থানে।
বিশ্বে বায়ু দূষণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশের মধ্যে বার বার শীর্ষে উঠে আসছে বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের মতে, ঢাকার বায়ুদূষণের পরিমাণ বছরে ১০ শতাংশ করে বেড়ে চলেছে।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ২০০ হলে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ একিউআই স্কোরকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয় এবং ৩০১ থেকে ৪০০ একিউআই স্কোরকে ‹বিপজ্জনক› হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
দূষণের ৫ বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয়। সেগুলো হলো, বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও ২, সিও, এসও ২ ও ওজোন (ও৩)।
দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণে ভুগছে ঢাকা। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠে এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। ২০১৯ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার বায়ু দূষণের ৩ প্রধান উৎস ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণস্থানের ধুলা।
প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত সে সম্পর্কে তথ্য দেয়। পাশাপাশি, সেই শহরের বাসিন্দাদের জন্য কোন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে তা জানায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের গবেষণায় বলা হয়েছে, শীত মৌসুমে সাধারণত বায়ুদূষণ সূচক বাড়ে। কমে আসে জুন জুলাইয়ে। শুষ্ক ঋতু হওয়ায় শীতকালে ধুলাবালির পরিমাণও বেড়ে যায়। এর সঙ্গে সিমেন্ট কারখানার ধুলা বা ইটভাঁটার ধোঁয়ার মিশ্রণ হলে বায়ুদূষণের মাত্রাও আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে শিল্প কারখানা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, কয়লা ও জৈব জ্বালানি পোড়ানোর ধোঁয়ার মিশ্রণ হলে আরও ভয়াবহ হয়।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের জন্য ২০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে, ইটভাটা, রাস্তা নির্মাণ, পুন:নির্মাণ ও মেরামত, সেবা সংস্থাগুলোর নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ,বড় উন্নয়ন প্রকল্প (এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল), সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, সড়ক বা মহাসড়কের পাশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন ও সংগ্রহ, ট্রাক বা লরিতে বালু, মাটি, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী উন্মুক্ত অবস্থায় পরিবহন, রাস্তায় গৃহস্থালি ও পৌর বর্জ্য স্ত‚পাকারে রাখা ও বর্জ্য পোড়ানো, ড্রেন থেকে ময়লা তুলে রাস্তায় ফেলে রাখা, ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে গিয়ে ধুলাবালি ছড়ানো, বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা অনাবৃত স্থান, ফুটপাত ও রাস্তার আইল্যান্ডের মাঝের ভাঙা অংশের মাটি ও ধুলা, ফিটনেসবিহীন পরিবহন থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর ধোঁয়া, বিভিন্ন যানবাহনের চাকায় লেগে থাকা কাদামাটি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কলোনির ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো, বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ভবনের আবর্জনা ও ধুলাবালি রাস্তায় ফেলে দেওয়া, ঢাকা শহরের দূষণপ্রবণ এলাকার ধুলা, হাসপাতালের বর্জ্য রাস্তায় ফেলা, অধিক সালফারযুক্ত ডিজেল ব্যবহার এবং জনসচেতনতার অভাব।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটি গঠন করেছে সরকার। এ কমিটি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে পরামর্শ দেবে। এছাড়া বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করবে এ কমিটি। ২৭ সদস্যের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও দপ্তর-সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (দূষণ নিয়ন্ত্রণ/পরিবেশ) কমিটিতে সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ কমিটি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে পরামর্শ দেবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দূষিত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ