পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বায়ুদূষণের পাশাপাশি বর্জ্যদূষণে ঢাকার পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে। বর্জ্যদূষণ বিশেষ করে করোনা বর্জ্য রাজধানীবাসীর জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার চলতি বছরের ৩০ মে ঘরের বাইরে সবখানে সবার মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে। স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যবহার করছেন, গ্লাভস ও পিপিই। এসবই ব্যবহারের পর হয়ে যায় কোভিড বা করোনা বর্জ্য। বাসাবাড়ি ও চিকিৎসাকেন্দ্রে করোনা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হচ্ছে না। করোনা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা নির্দেশিকা ও গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও কোথাও এর বাস্তবায়ন নেই।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা বর্জ্যরে মাত্র ছয় দশমিক ছয় ভাগের সঠিক ব্যবস্থাপনা হয়। বাকি ৯৩ ভাগই যত্রতত্র পড়ে থাকছে। পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংগঠন বলছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দৈনিক গড়ে ২০৬ দশমিক ২১৭ মেট্রিক টন করোনা বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এ সব বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। পরিবেশ নিয়ে কর্মরত নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশের (এনসিসিবি) রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি অফিসার মাহবুবুর রহমান অপু বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় দৈনিক গড়ে ২০৬ দশমিক ২১৭ মেট্রিক টন করোনা বর্জ্য উৎপাদিত হয়। দেশের গৃহস্থালি করোনা বর্জ্যরে পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং অফিস-আদালতের করোনা বর্জ্য মিলিয়ে বিশাল এ অপচনশীল ও সংক্রামক বর্জ্য গণস্বাস্থ্যর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে এ বর্জ্য রাজধানীর পরিবেশর জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর পরিবেশ সুরক্ষায় মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দ্রæত আধুনিকায়ন ও সমন্বিত নীতিমালা প্রয়োজন। আর শুধু নীতিমালা করলেই হবে না এর সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য পরিবেশ অধিদফতরের নেতৃত্বে, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ে নাগরিক সমাজ, গবেষক এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদের যুক্ত করে একটি ‘সংক্রামক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মনিটরিং সেল’ গঠন জরুরি।
মেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে কাজ করে বেসরকারি সংগঠন-প্রিজম বাংলাদেশ। করোনার শুরুর দিকে এ সংগঠনটি বিভিন্ন হাসপাতাল এবং বাসাবাড়িতে জমা হওয়া বর্জ্যরে জন্য দুই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করছিল। কিন্তু শুরুর দিকে এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের তৎপরতা থাকলেও এখন আর তাদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। ঢাকার সরকারি-বেসরকারি ২৭টি হাসপাতালের সঙ্গে কাজ করছে প্রিজম বাংলাদেশ। এগুলো থেকে কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ হয় প্রায় দুই হাজার কেজি।
জানা যায়, কোভিড হাসপাতালগুলো তাদের উৎপন্ন বর্জ্য বায়োসেফটি ব্যাগ ব্যবহার করে বাতাসনিরোধী (এয়ারটাইট) অবস্থায় সংরক্ষণ করে এবং প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন-এর কর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংরক্ষণকৃত বর্জ্যরে ব্যাগে প্রথমে শক্তিশালী জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেয়। তারপর বিশেষায়িত কাভার্ড ভ্যানে সেগুলো নিয়ে যায় মাতুয়াইলে অবস্থিত মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টে। ইনসিনারেটরে উচ্চ তাপমাত্রায় (১২০০-১৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় ওই বর্জ্য।
গবেষণায় দেখা গেছে, সারাদেশে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। যার মাত্র ৩৫ টন ব্যবস্থাপনার আওতায় আছে। এর অধিকাংশই ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। মাস্কসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করছে ৭১ ভাগ মানুষ। তাদের মাস্ক ও অন্যান্য করোনা বর্জ্য পুরোটাই গৃহস্থালি বর্জ্যরে সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। খিলগাঁয়ের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী সুমন জানায়, প্রায় সব বাড়ি থেকেই গৃহস্থালি বর্জ্যরে সঙ্গে মাস্ক ও গøাভস পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল ইনকিলাবকে বলেন, গত বছর বেশিরভাগ সময় ঢাকা পৃথিবীর শীর্ষ বায়ুদূষণের শহরের একটি ছিল। ভারতের ‘গ্যাস চেম্বার’ আখ্যা পাওয়া দিল্লির বাতাসের চেয়েও বেশি দূষিত হয়ে পড়ে ঢাকার বাতাস। বায়ুর মান নিয়ে গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী টানা তিনদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকার শীর্ষে ছিল ঢাকা। মার্চে করোনা মহামারির কারণে অঘোষিত লকডাউন শুরু হলে ঢাকার বাতাসের মান ধীরে ধীরে ভালো হতে শুরু করে। জুন-জুলাইয়ে এ শহরে বাতাসের মান ছিল স্বাস্থ্যসম্মত। এরপর লকডাউন শিথিল হওয়ার পর কলকারখানা চালু এবং যানবাহন চলাচল শুরু হলে ঢাকার বাতাস আবার দূষিত হতে শুরু করে। তবে এবার বায়ুদূষণের পাশাপাশি করোনা বর্জ্যে ঢাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপণার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ বন্ধ না করলে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।