মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক: অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে ইসরাইলি বসতি স্থাপন বন্ধের পক্ষেই রায় দিলো জাতিসংঘ। নিরাপত্তা পরিষদে বাধাহীনভাবে পাস হলো এ সংক্রান্ত প্রস্তাব। ৮ বছরের অচল অবস্থা ভেঙে গেল ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়া থেকে বিরত থাকার কারণে। এর আগে বসতি স্থাপন বন্ধে এক প্রস্তাব হাজির করেছিল মিসর। যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইলের চাপে তারা সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার করায় জাতিসংঘে এ সংক্রান্ত ভোটাভুটি স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবর অনুযায়ী, গত শুক্রবার ১৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি তুলে ধরা হয়। ইসরাইলি বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধের ওই প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি ভূখ-ে ইসরাইল যে বসতি স্থাপন করে যাচ্ছে, তার কোনও আইনি ভিত্তি নাই। ভোট দান থেকে বিরত থাকা যুক্তরাষ্ট্র বাদে বাকি ১৪টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলে তা পাস হয়। প্রস্তাবকে আন্তর্জাতিক আইনের বিজয় এবং ইসরাইলি চরমপন্থার প্রত্যাখ্যান বলছে ফিলিস্তিন। আর ইসরাইল বলছে, তারা এর তোয়াক্কা করে না। প্রস্তাবের কোনও শর্তই মানবেন না তারা।
এর আগে, গত বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিশর একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে। তাতে দাবি জানানো হয়, পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখ-ে ইসরাইলি বসতি নির্মাণ জরুরি ভিত্তিতে ও পূর্ণাঙ্গভাবে বন্ধ করতে হবে। মিসরের ওই প্রস্তাবেও একইভাবে বলা হয়েছিল, ইসরাইলের ওইসব বসতির কোনও বৈধতা নেই। আর তা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জাতিসংঘে এ নিয়ে ভোটাভুটির কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে হঠাৎ মিসর প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ভোটাভুটি স্থগিত করা হয়। পরে নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভেনেজুয়েলা, সেনেগালের পক্ষ থেকে একই প্রস্তাব তুলে ধরা হলে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক নীরবতায় তা পাস হয়। প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিন পক্ষের প্রধান প্রতিনিধি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আজ আন্তর্জাতিক আইনের বিজয়ী হওয়ার দিন। সুসভ্য ভাষা এবং সংকট নিরসন প্রক্রিয়ার জয়। এটি ইসরাইলি চরমপস্থার সুস্পষ্ট প্রত্যাখ্যান। তিনি আরও বলেন, আন্তকর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলকে বার্তা দিয়েছে, দখল কায়েমের মধ্য দিয়ে শান্তি আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। বরং শান্তি আনতে দরকার দখল বন্ধ করা, এবং ১৯৬৭-এর সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে ইসরাইলি রাষ্ট্রের পাশাপাশি শান্তিতে থাকতে দেওয়া। ৮ বছর পরে এমন একটি প্রস্তাব পাস হলো নিরাপত্তা পরিষদে। প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেহানইয়াহুর দফতর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইল এই লজ্জাকর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে। এর কোনও শর্ত মানতে আমরা বাধ্য নই। জাতিসংঘে ইসরাইলি দূত ড্যানি ড্যানন আলজাজিরাকে বলেন, তাদের সরকার আশা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবে ভেটো দেবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নতুন মার্কিন প্রশাসন এবং জাতিসংঘের নতুর মহাসচিব এসে নতুন কিছু করবেন। ট্রাম্পের কথাতেই এর সমর্থন মিলেছে। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ২০ জানুয়ারির পর ভিন্ন কিছু ঘটতে পারে।
এর আগে ব্যক্তিগতভাবে তিনি এই প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার আহ্বান জানান। পরে ট্রাম্প মিসরীয় প্রেসিডেন্ট সিসিকে ফোন করে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি বন্ধের প্রস্তাব প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। হুমকিতে মিসর তাদের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে। তখনই জাতিসংঘে ভোটাভুটি স্থগিত হয়। ২০১১ সালে একইরকমের একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পক্ষে বলে গুঞ্জন ছিল। মার্কিন এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি মিসরের প্রস্তাব স্থগিত হওয়ার সময় জানিয়েছিলেন, জাতিসংঘে প্রস্তাবটি পাস হওয়ার সুযোগ করে দিতে ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী সরকার। তাই ট্রাম্পের প্রচেষ্টা মিসরকে থামানো গেলেও অন্যদের উত্থাপিত প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকল যুক্তরাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনিরা চায় পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে এবং পূর্ব জেরুজালেমকে এর রাজধানী বানাতে। ১৯৬৭ সালের আরব যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে। পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের অবিভাজ্য রাজধানী বলে দাবি করে থাকে ইসরাইল। অবশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯৬৭ সালের পর পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ১শরও বেশি বসতি স্থাপন করেছে ইসরাইল। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এ বসতি স্থাপনকে অবৈধ বলে বিবেচনা করা হলেও ইসরাইল তা মানতে চায় না। ১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বেশ কয়েক দফায় শান্তি আলোচনা হলেও তা ব্যর্থ হয়। বিবিসি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।