Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

আখেরী মোনাজাতে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি

টঙ্গী সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:৪৬ এএম | আপডেট : ১১:৪১ এএম, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩

সমগ্র মুসলিম উম্মাহর হেফাজত, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় আখেরী মোনাজাতে অশ্রুসিক্ত নয়নে ও আমিন আমিন ধ্বনিতে শেষ হলো বিশ^ তাবলীগ জামাত আয়োজিত প্রথম পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ^ ইজতেমা। বহুলকাঙ্খিত আখেরি মোনাজাত সকাল ১১টার পর শুরু হওয়ার কথা থকলেও দূরদুরান্ত থেকে আগত লাখ লাখ মুসল্লীর ফিরতি যাত্রা সহজ করার লক্ষ্যে শনিবার রাতে ইজতেমার আয়োজক কমিটির সভায় সকাল ১০টার আগে আখেরি মোনাজাত শুরু করে সাড়ে ১০টার মধ্যে শেষ করার জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই মোতাবেক আজ রোববার বেলা ৯টা ৫১ মিনিটে শুরু হয়ে ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ৩০ মিনিটব্যাপী আখেরী মোনাজাত চলে। প্রথমে আরবি ও পরে বাংলা ভাষায় আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বী বাংলাদেশের কাকরাইল জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা যোবায়ের হোসেন।
আখেরী মোনাজাতে লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লী নিজ নিজ গুনাহ মাফ, সারা দুনিয়ার কল্যাণ কামনা, আল্লাহর নৈকট্য লাভ, দুনিয়াতে হানাহানি, মারামারিমুক্ত শান্তিময় সমাজ কামনা এবং ইহ ও পারলৌকিক সুখ-শান্তি কামনা করে আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে আমিন আমিন ধ্বনিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আখেরি মোনাজাতে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যের এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপনের মধ্য দিয়ে রাব্বুল আলামিনের দরবারে ফরিয়াদ জানান।
আখেরী মোনাজাত চলাকালে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। নীরব নিস্তব্ধতা নেমে আসে গোটা এলাকায়। মাঝে মধ্যে এই নীরবতা ভেঙ্গে ‘আমিন আল্ল¬াহুম্মা আমিন, ছুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত ও প্রকম্পিত হয়ে উঠে গোটা ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকা। আখেরী মোনাজাত হাফেজ মাওলানা যোবায়ের দরুদ শরিফের পাঠর পর কালামে পাকের দোয়ার আয়াতগুলো দিয়ে মোনাজাত শুরু করেন। দীর্ঘ প্রায় ৩০ মিনিটের মোনাজাতের প্রথম প্রায় ১০ মিনিট তিনি কালামে পাকের বেশ কিছু দোয়ার আয়াত উচ্চারণ করেন। পাশাপাশি আরবিতে পরওয়ারদিগারের কাছে ফরিয়াদ জানান। এর পর মোনাজাতের বাকি অংশে তিনি বাংলা ভাষায় মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আকুতি জানান। তিনি বলেন,‘ঈমানের চেয়ে বড় দৌলত (সম্পদ) দুনিয়াতে মুসলমানের নিকট আর কিছু নেই। হে আল্লাহ, দাওয়াতে তাবলীগের মেহনতের উসিলায় ঈমানের গুরুত্ব বুঝার তৌফিক দিন। সুন্নতি জীবন গড়ার তৌফিক আমাদের দিয়ে দিন। দ্বীনের দায়ী হিসেবে আমাদের কবুল করেন। ‘হে প্রভু ! আপনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাশীল। আমাদের তাওবা কবুল করুন। মুসলমানদের হেফাজত করুন।’ বাংলায় মোনাজাতকালে তিনি মহান আল¬াহ রাব্বুল আ’লামিনের দরবারে দুনিয়া থেকে শিরক ও বিদআতের খতম কামনা করেন। বাতিলের পরাজয় ও হকের বিজয় চেয়ে বার বার আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানান। দ্বীনের হিজরত ও মেহনতকে কবুল করার আকুতি জানান। বনি আদমের হেদায়েত, উম্মতে মুহাম্মদির জান-মাল হেফাজত, সকল বিমারি থেকে আরোগ্য, সিরাতুল মুস্তাকিম ও ইবাদতে ইখলাস নসিব কামনা করেন। ইহ ও পারলৌকিক মুক্তি, দ্বীনের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার তৌফিক কামনা এবং তাবলীগের মেহনত ও ইজতেমাকে কবুল করার আকুতি জানিয়ে আখেরী মোনাজাত শেষ করেন।
আখেরী মোনাজাতে মুসল্লীদের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার :
প্রথম দফায় তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে গত শনিবার বিকেল থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইজতেমা ময়দানে আসতে থাকেন। ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জিপ, কার এবং নৌযানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে শীত ও কুয়াশা ভেঙ্গে ইজতেমা ময়দানে পৌঁছান ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা। এছাড়া শনিবার মধ্য রাত থেকে আখেরী মোনাজাতের পূর্ব পর্যন্ত রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় যানবাহনের অভাবে মুসল্লীরা ভোর রাত থেকেই দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে ইজতেমা অভিমুখে স্রোতের মতো আসতে থাকে।
আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মহিলা মুসল্ল¬ীও আগের দিন রাত থেকে ইজতেমা ময়দানের আশেপাশে, বিভিন্ন মিলকারখানা, বাসা-বাড়িতে ও বিভিন্ন দালানের ছাঁদে বসে আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়। ইজতেমায় মহিলাদের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা না থাকায় যে যেখানে পেরেছেন সেখানে বসেই লাখো মুসল্লীর সাথে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।
নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঃ
এবারের বিশ্ব ইজতেমায় নজীরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ৮ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ৭হাজারের অধিক পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি দায়িত্বরত রয়েছে সাদা পোষাকী গোয়েন্দা পুলিশ। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে আকাশে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল, নৌ-পথে স্পীড বোটে সতর্ক টহল ও নজরদারী। আকাশ ও নৌ-পথের পাশাপাশি সড়ক পথগুলোতে খালি চোখ ছাড়াও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে বাইনোকুলার দিয়ে ও ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে মুসল্লীসহ সকলের চলার পথ ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে স্থাপিত র‌্যাবের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মনিটরিং করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম জানান, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে আগামী দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শেষ হওয়া পর্যন্ত।
ইজতেমা ময়দানের উত্তর পশ্চিম কর্ণারে করা হয়েছে বিদেশী মুসল্লীদের অবস্থানের জন্য তাশকিলের কামরা। ময়দানের খিত্তাগুলো থেকে চিল্ল¬ায় নাম লেখানো ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের জামাতবন্দী করে তাশকিলের কামরায় জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। আখেরী মোনাজাত শেষে এসব মুসল্ল¬ীগণ জামাতবন্দী হয়ে তাবলীগের মুরুব্বীদের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী জামাতবন্দী হয়ে দ্বীনের দাওয়াতী মেহনতে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বেন। এসব জামাতবন্দীদের মধ্যে ৪০দিন, ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছর ও আজীবন চিল্লাধারী মুসল্ল¬ীগণ রয়েছেন। তারা বহিঃবিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে দাওয়াতি কাজে দ্বীন ও ইসলামের মেহনত করবেন।
ইজতেমায় মোনাজাতে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এড. আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, স্থানীয় সংসদ সদস্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. আজমত উল¬া খান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার, গাজীপুর পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সশরীরে অংশ নেন।



 

Show all comments
  • Al Azizur Rahman Ras ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:৫১ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি বিশ্ববাসীকে শান্তিতে রাখো
    Total Reply(1) Reply
  • Al Azizur Rahman Ras ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:৫৩ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি বিশ্ব থেকে অশান্তি ও মারামারি দূর করে দেও
    Total Reply(1) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্ব ইজতেমা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ