পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে প্রথমবারের মতো ভিড়ছে ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ। আগামীকাল সোমবার বন্দরের সিসিটি-১ নম্বর জেটিতে ‘কমন এটলাস’ নামের কার্গো জাহাজটিকে বার্থিং দেওয়া হবে। আর এর মধ্যদিয়ে দেশের এই প্রধান সমুদ্র বন্দরে এখন থেকে ২শ’ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ ভিড়তে পারবে। এতদিন বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যেত।
ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ফলে বন্দর চ্যানেলের গভীরতা তথা সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে বড় জাহাজ ভেড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এরফলে এক জাহাজে অনেক বেশি পণ্য আনা যাবে, তাতে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল আরো কমে আসবে। বাড়বে বন্দরের গতিশীলতা। আমদানি ব্যয় কমবে, এর সুফল পাবেন ভোক্তারা। দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব।
দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে জেটি বাড়ছে না। জেটি টার্মিনাল বাড়ানোর উদ্যোগ বাস্তবায়নও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এ অবস্থায় উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি বিদ্যমান সক্ষমতা বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সামাল দেয়ার উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২০২০ সালে কর্ণফুলী নদী এবং বন্দর চ্যানেল নিয়ে হাইড্রোগ্রাফিক ও হাইড্রোলজিক্যাল স্টাডি চালায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সমীক্ষায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচ আর ওয়েলিংফোর্ড তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেয়। বর্তমানে চ্যানেলের যে অবস্থা এবং জেটি যেভাবে রয়েছে তাতে বন্দরে ঠিক কত গভীরতা এবং দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানো যায়, বন্দরের দুই তীরের কী পরিমাণ জায়গায় জেটি বা ইয়ার্ড সম্প্রসারণ কাজে ব্যবহার করা যায় এবং কোন বিশেষ পদক্ষেপ নিলে বন্দরে সর্বোচ্চ কত গভীরতা এবং দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব। এক বছরের বেশি সময় ধরে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম বন্দরে সমীক্ষা পরিচালনা করে গত এপ্রিলে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেয়। সম্প্রতি তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তাতে বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে বন্দরে এখনই ১০ মিটার গভীরতা এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যাবে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে বহির্নোঙ্গর ও গুপ্তখালের সন্নিকটের বাঁকে কিছুটা কাজ করে নদীর দু-একটি পয়েন্টে ড্রেজিং করলে বন্দর চ্যানেলে ১১ মিটার গভীরতা ও ২২৫ মিটার লম্বা জাহাজও ভেড়ানো যাবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। মূলত এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ২০০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভেড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরে এখন সাড়ে নয় মিটার গভীরতার এবং ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারে। এরকম জাহাজগুলো সাধারণত দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টিইইউএস কনটেইনার বহন করতে পারে। তবে এবার দশ মিটার গভীরতার ও দুইশ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়লে বন্দরে তিন হাজার ৮০০ থেকে চার হাজার কনটেইনার পরিবহন করতে পারবে। এতে সুফল পাবেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। কারণ বেশি পরিমাণ পণ্য ও বেশি সংখ্যক কনটেইনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে খরচ কমে যায়। ফলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি পণ্য পরিবহন খাতে সাশ্রয় হবে কোটি কোটি ডলার।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, ড্রেজিংয়ের ফলে বন্দর চ্যানেলের সক্ষমতা বেড়েছে। এখন আগের চেয়ে বড় বড় জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে। সোমবার দুইশ মিটার লম্বা একটি জাহাজ সিসিটি-১ এর জেটিতে ভেড়ানো হবে। দুইশ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশের বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন শিপিং কোম্পানিকে খুব শিগগিরিই জানিয়ে দেয়া হবে। বন্দরের জেটিতে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়লে বর্তমানের চেয়ে বেশি পরিমাণে কার্গো পরিবহন করা যাবে। এতে বন্দরে টার্ন এরাউন্ড টাইম কমে আসবে। কারণ একটি ছোট জাহাজকে বার্থিং দিলে সেই জাহাজ জেটিতে ভিড়ানো, পণ্য উঠা-নামা করানো, এরপর আবার জোয়ারের ওপর নির্ভর করে জাহাজ ছেড়ে যাওয়া ইত্যাদির কারণে সময় বেশি লেগে যায়। পক্ষান্তরে বড় জাহাজ ভিড়লে একসাথে অনেক কনটেইনার আসবে, এতে খরচও কম হবে, বন্দরের প্রোডাক্টিভিটি ক্ষমতাও বাড়বে।
এখন বড় জাহাজ বা মাদার ভেসেলগুলো বহির্নোঙ্গরে অবস্থান করে। সেখান থেকে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাস করে আনা হয়। শিপিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহির্নোঙ্গরে একটি বড় জাহাজ থেকে পণ্য লাইটারিং বা স্থানান্তর করতে যে সময় নষ্ট, পণ্য অপচয় ও আর্থিক ক্ষতি হয় এখন তা লাঘব হবে। আমদানিকারক সরাসরি জেটিতেই জাহাজ ভিড়িয়ে দ্রুত পণ্য ডেলিভারী নিতে পারবেন। এতে বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়বে। শিপিং বাণিজ্যে বহির্বিশে^ চট্টগ্রাম বন্দর তথা বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা আরও উজ্জ্বল হবে। জানা যায়, চট্টগ্রাম জেটিতে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবার ১৯০ মিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে নয় মিটার গভীরতা ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো শুরু হয়। এর আগে এত বড় জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর সুযোগ ছিলনা। প্রায় সাত বছর পর এবার আরও বড় জাহাজ ভেড়ানোর উদ্যোগ নিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মার্সাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী দুইশ মিটার লম্বা ‘কমন এটলাস’ নামের কার্গো জাহাজটি মেঘনা গ্রুপের অপরিশোধিত চিনি নিয়ে ব্রাজিলের সান্টোস বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। গত ১০ জানুয়ারি জাহাজটি সাড়ে ৬০ হাজার টন ‘র’ সুগার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছে। জাহাজটি আগামীকাল বন্দরের জেটিতে বার্থিং করার কথা রয়েছে। এ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের আরও একটি ইতিহাসের সাক্ষী হবে। এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় জাহাজ ভেড়ানো উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রধান অতিথি থাকবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।