গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
শুরু হলো মেট্রোরেল-৬ প্রকল্পের মতিঝিল-কমলাপুর অংশের কাজ। চলতি মাসের শুরু থেকে এই অংশের পাইলিং চলছে। এজন্য মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত ৪৬টি স্থাপনা সরাতে হবে। আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হবে পিলার।
এদিকে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের উত্তরা-মতিঝিল অংশের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৯২ দশমিক ৫২ ভাগ। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৯৮ দশমিক ৭৫ ভাগ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯১ দশমিক ০২ ভাগ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে উদ্বোধন হবে উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত দেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত দ্রুতগতির মেট্রোরেলের ২১ কিলোমিটার অংশ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এমআরটি লাইন-৬-এর আওতায় উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার রেলপথের আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথ চালু হয় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর। এ পথে ৯টি স্টেশনের দুটিতে থেমে নিয়মিত ১০টি ট্রেন চলছে। কমলাপুর পর্যন্ত মোট স্টেশন হবে ১৭টি। ভাড়া ১০০ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। তখন তিন মিনিট পরপর ছাড়বে ট্রেন। দিনে চলবে ২৪টি। ঘণ্টায় যাত্রী পরিবহন করা যাবে ৬০ হাজার। পুরো রেলপথ চালু হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আসতে সময় লাগবে ৩৮ মিনিট। একটি ট্রেনে বসে ও দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন।
রাজধানীর যানজট নিরসনে প্রথমে উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত প্রকল্পকটি নেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে তা কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়। দীর্ঘ সময় প্রকল্পের অন্য অংশে কাজ হলেও মতিঝিল-কমলাপুর অংশের কাজ নানা জটিলতায় থেমে ছিল। সব বাধা পেরিয়ে এবার কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৫ সালে এই অংশ চালুর কথা জানিয়েছে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ।
উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত যুক্ত হওয়ায় এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে, আর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। মতিঝিল থেকে কমলাপুর
পর্যন্ত লাইন সম্পর্কে ম্যাস ট্রানজটি কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল নেওয়ার জন্য আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। ইতোমধ্যে এই লাইন যেদিক দিয়ে যাবে সেখানকার ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়ে গেছে। এসব জায়গার ৪৬টি স্থাপনা সরাতে হবে। আমরা আশা করছি, ২০২৫ সালের জুন মাসে কাজ শেষ করে প্রকল্পটি পরিপূর্ণভাবে উদ্বোধন করতে পারব।’ এ ছাড়া মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটারের বর্ধিত কাজের জন্য গত ২৮ নভেম্বর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
প্রকল্পের নথি থেকে জানা গেছে, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ৭৯ ভাগ। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এক দশমিক ১৬ কিলোমিটার অংশের নির্মাণকাজ এগিয়ে নিতে গত ২৮ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
এদিকে, রাজধানীতে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) আরও ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণ দিচ্ছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী (১ ডলারে ৮৬ টাকা) এর পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।
সম্প্রতি এ বিষয়ে জাইকার সঙ্গে ঋণ চুক্তি করেছে সরকার। মতিঝিল ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার লাইন বাড়িয়ে প্রকল্পটির সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সেখানে প্রকল্পটিতে নতুন করে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
মেট্রোরেলের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (সিভিল) আব্দুল বাকী মিয়া বলেন, গত নভেম্বরে কমলাপুর অংশের কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মেট্রো কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয়েছে। ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড ইতোমধ্যে চুক্তি অনুযায়ী এই অংশের কাজ শুরুর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করি, ২০২৫ সালের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে।
তিনি জানান, কমলাপুর স্টেশনের ‘পশ্চিম পাশে’ মেট্রো স্টেশন নির্মাণ হবে। এতে ঢাকা রেলস্টেশনের নকশায় কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ কমলাপুরে অবস্থিত ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে মেট্রোরেল স্টেশনের দূরত্ব ৩০ মিটার।
কমলাপুর অংশের পাইলিংয়ের কাজ শুরুর কথা জানিয়ে ডিএমটিসিএল সচিব মো. আবদুর রউফ বলেন, সেখানে পুরোদমে কাজ চলছে। আস্তে আস্তে পিয়ার দৃশ্যমান হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে মতিঝিল অংশের উদ্বোধনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ডিসেম্বর মাসে উত্তরা থেকে মতিঝিল লাইন চালু করা। সেজন্য পুরোদমে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
মতিঝিল অংশে ট্রেনের লাইন পরিবর্তনে কোনো সমস্যা না হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, লাইন পরিবর্তনে কোনো সমস্যা হবে না। লাইন শিফট না করেও ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা রয়েছে। তা ছাড়া আসা-যাওয়ার লাইন ভিন্ন ভিন্ন থাকছে। তাই কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রো স্টেশনের প্রস্তুতির সঙ্গে উত্তরা থেকে মতিঝিল ট্রেন চলাচলের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি স্থানে সড়কের মাঝখানে বেড়া দিয়ে মাটি খোঁড়ার কাজ চলছে। বাগান এলাকায় করা হয়েছে সাইট অফিস। রাস্তায় পুরোদমে ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ শুরু হলে যানজট বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।