পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষের ভোগান্তির এক নাম যানজট। এতে পড়ে নগরবাসীর নষ্ট হয় লাখ লাখ কর্মঘণ্টা। দুর্বিষহ যানজটের কারণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে গণপরিবহনে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পেশাজীবী, শিক্ষার্থীসহ সবাই প্রতিদিন কোথাও না কোথাও যাতায়াত করেন। তাই তাদের ভোগান্তি চরম বিরক্তির পর্যায়ে গিয়ে পড়ে।
নগরবাসীর সেই ভোগান্তিতে আশার আলো দেখিয়েছে মেট্রোরেল। নগরীতে মেট্রোরেল চালুর মাধ্যমে খুলেছে আধুনিক যোগোযোগের আরেক দুয়ার। মেট্রোরেল চালুর পর ঢাকার রাস্তায় নিত্য যাতায়াতকারীদের একটি অংশ অন্তত স্বস্তি পাচ্ছেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মেট্রোরেল মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে অফিসগামী মানুষদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে না, যা সরাসরি দেশের অর্থনীতিতে ভ‚মিকা রাখবে। মেট্রোরেল ব্যবহারের মাধ্যমে যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় সফলতা আনার জন্য পারিপার্শ্বিক অন্যান্য সেবা বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। জানা যায়, মেট্রোরেলে মোট ১৬টি স্টেশন থাকবে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব এবং মতিঝিল। তবে আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্তই চালু হয়েছে। পরবর্তীতে তা মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করবে। প্রথমে চালু হওয়া অংশে মেট্রোরেলের স্টেশন থাকছে মোট ৯টি। পুরো মেট্রোরেল পথের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল জুনে পরীক্ষামূলক চালুর কথা রয়েছে। অন্যদিকে মেট্রোরেল কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার স¤প্রসারণ করা হবে। আর এই রুট তথা উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। এরইমধ্যে গত ২৮ ডিসেম্বর ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দিয়াবাড়ি-আগারগাঁও অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে যাত্রী সাধারণের জন্য। উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের কাজ প্রায় শেষ। পরীক্ষামূলক চলাচলে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। আগামী জুন মাসে আগারগাঁও-মতিঝিল রুটে পরীক্ষামূলক চলবে ট্রেন। এ রুটে উড়ালপথে মেট্রোরেলের মোট ১৭টি স্টেশন রয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নয়টি, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সাতটি এবং মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত একটি স্টেশন রয়েছে। এর আগে উত্তরা-আগারগাঁও অংশের উদ্বোধনের পরদিন সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও দিয়াবাড়ি ও আগারগাঁও ছাড়া এই অংশের বাকি ৭টি স্টেশন চালু করা হয়নি। ২০১৬ সালের ২৬ জুন এমআরটি-৬ শীর্ষক এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর নির্মাণের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ২০১৭ সালের ২ আগস্ট। বর্তমানে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রুটের কাজ শুরু হয়েছে। যা শেষ হবে ২০২৫ সালে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগারগাঁও-মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হবে আগামী জুন মাসে। এর আগেই শেষ করা হবে বিদ্যুতের লাইন বাসানোর কাজ। ধাপে ধাপে নানা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে ট্রেনগুলো চ‚ড়ান্ত চলাচলের প্রস্তুতি নেবে। আপাতত এ রুটে চলবে ২৪ সেট ট্রেন। এরমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে ২২ সেট। দেশে পৌঁছানোর অপেক্ষায় বাকি দুই সেট।
এমআরটি সূত্রে জানা যায়, যাত্রী সাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার আগে-কয়েকটি ধাপে করতে হয় পরীক্ষামূলক চলাচল। প্রথমে ট্রেনের গতি রাখা হয় এক কিলোমিটার। এর পর আস্তে আস্তে গতি বাড়ানো হয়। এছাড়াও কোথাও বাঁক থাকলে সেখানে কি গতিতে চলবে, তা নির্ধারণ করতে হয়। সব তথ্য যুক্ত করা হয় নির্ধারিত সফটওয়্যারে। যে তথ্যর উপর ভিত্তি করে পরবর্তী সকল ট্রেন চলাচল করবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আগারগাঁও-মতিঝিল পর্যন্ত সাতটি স্টেশনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বসানো হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজ। চলতি মাসেই বাকি বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজ শেষ হবে। যার মধ্যে দিয়ে এ রুটে পরীক্ষামূলক চলাচলে আর বাধা থাকবে না।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, তার বাসানোর কাজ শেষ হয়ে গেলে, বিদ্যুতের সংযোগ দিতে হয়। সংযোগ দেওয়া হলেই ট্রেন চলাচল কারার উপযোগী হবে। প্রথমে আমরা পারফর্মেন্স টেস্ট করে থাকি। পরবর্তীতে করা হয় সিস্টেমিটিগেশন টেস্ট। জুনে আগারগাঁও-মতিঝিল রুটে পরীক্ষামূলক চলাচল করবে মেট্রোরেল।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, মেট্রোরেল মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। গণপরিবহন সেক্টরে গুণগত পরিবর্তন আসবে। সংশ্লিষ্টদের বলবো মেট্রোরেলের ভাড়ার বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। ভাড়া বেশি থাকলে সাংবিধানিক বৈষম্য সৃষ্টি হবে। ভাড়া যাতে নিয়ন্ত্রনে রাখা হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। ভাড়া কমাতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক এবং যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, একটি মেট্রো পুরো শহরের যানজট নিরসন করতে পারবে না। মেট্রো প্রকৃতপক্ষে সেবাধর্মী ও একটি শহুরে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এটা ঘনঘন বিভিন্ন স্টেশনে থামবে এবং শহরের মাঝেই সেবা দেবে। কিন্তু এটার একটি নেটওয়ার্ক যখন হবে তখন মূল্যায়নটা করা যাবে। তবে মেট্রোরেল করিডোরে যারা বসবাস করছেন তারা অবশ্যই যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য ও নির্ভরতা পাবেন। তারা স্বাচ্ছন্দ্যে দ্রæত গতিতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।