Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইসিসি’র বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার মুস্তাফিজ

| প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ ক্রিকেটের তরুণ পেস সেনসেশন ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান ২০১৫-১৬ মৌসুমে আইসিসি’র বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হয়েছেন। এ বছর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল)-এ সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে অসামান্য নৈপুণ্য দেখিয়ে আইপিএল-এর উদীয়মান ক্রিকেটার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। অবশ্য ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই এই ক্রিকেটার তার প্রতিভার দ্যুতি ছড়াচ্ছিলেন। বিশ্ব ক্রিকেটে তার আগমন জানান দিয়েছিলেন অভিষেক ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট, ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ার মধ্য দিয়ে। তার সময়ে বিশ্বের আর কোনো দলের ক্রিকেটার তার মতো প্রতিভার এমন স্ফুরণ ঘটাতে পারেননি। ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সময়সীমার মধ্যকার পারফরমেন্স বিবেচনা করে আইসিসি তাকে বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হিসেবে নির্বাচন করে। বিশ্ব সেরা ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক পারফরমেন্সের কারণে বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটের সম্মান অর্জনের বিষয়টি তার জন্য অনেকটা অনিবার্যই ছিল। শুধু মুস্তাফিজ ব্যক্তিগতভাবেই এই স্বীকৃতি পেলেন না, তিনি দেশের ক্রিকেটের উন্নতিরও স্বীকৃতি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরলেন। কারণ, বাংলাদেশের ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি’র কোনো বর্ষসেরা পুরস্কার জয়ের ঘটনা এটিই প্রথম। বর্ষসেরা ক্রিকেটার হয়ে মুস্তাফিজের আনন্দ হওয়া স্বাভাবিক। তার সাথে সমগ্র জাতিও আনন্দিত। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মুস্তাফিজ বলেছেন, প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে এ পুরস্কার জিতে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য বিরাট স্বপ্ন। আমাকে যারা সহায়তা করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আইসিসি’র বর্ষসেরা ক্রিকেটার হওয়ায় আমরা মুস্তাফিজকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের যে কয়টি অর্জন রয়েছে, তার অগ্রভাগে রয়েছে ক্রিকেট। ক্রিকেটে আমরা এখন পরাশক্তির কাতারে। বলা যায়, উদীয়মান ক্রিকেট শক্তি। বিশ্বের যে কোনো দলকে হারানোর সক্ষমতা অর্জন করেছি আমরা। ক্রিকেটের এই অসাধারণ উন্নতি-অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সময়োচিত ও যথাযথ পদক্ষেপ এবং পরিকল্পনা প্রণয়নের কারণে। আন্তরিকতা ও উদ্যোগ থাকলে যে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়, তা আমাদের ক্রিকেট বোর্ড দেখিয়েছে। ক্রিকেটারদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, বিশ্বমানের কোচ, ফিজিও, ট্রেইনার থেকে শুরু করে ক্রিকেটকে উন্নত করতে যা কিছু প্রয়োজন তার সবই বিসিবি করেছে এবং করে চলেছে। বিসিবি’র এই প্রচেষ্টার ফলে প্রতিনিয়ত প্রতিভাবান ক্রিকেটারের আবির্ভাব ঘটছে। বাস্তবতা এখন এমন যে, জাতীয় দলে ঠাঁই পাওয়ার জন্য অনেক দক্ষ ও যোগ্য ক্রিকেটারদেরও সাইড লাইনে বসে থাকতে হয়। যারা প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে উজ্জ্বল পারফরমেন্স দেখাতে পারছেন, তারাই কেবল জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছেন। মুস্তাফিজ তারই জ্বলন্ত উদাহরণ। একেবারেই একসেপশনাল মেধা দিয়ে তিনি জাতীয় দলে যেমন সুযোগ পেয়েছেন, তেমনি বিশ্ব ক্রিকেটেও আলোড়ন তুলেছেন। পরিণত হয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেট তারকায়। বিশ্বের নামকরা টুর্নামেন্টে তাকে নেয়ার জন্য দলগুলোর মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয়। এটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য অত্যন্ত গৌরবের, দেশের জন্যও সম্মানের। অবশ্য ক্রিকেট প্রতিভা দিয়ে ইতোমধ্যে সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকারসহ আরো অনেক ক্রিকেটার বিশ্ব ক্রিকেটে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। তাদের পথ ধরেই আসছে একের পর এক প্রতিভাধর ক্রিকেটার। সমৃদ্ধ করছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। ২০০৪ সালে আইসিসি’র বর্ষসেরা পুরস্কার চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত উদীয়মান বর্ষসেরা ক্রিকেটার হয়েছেন ১২ জন। ঠিক ১২ বছরের মাথায় বর্ষসেরা ক্রিকেটার হয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। বিশ্বের বিভিন্ন দলে অসংখ্য নামী-দামী ক্রিকেটারের মধ্যে বর্ষসেরা হওয়া অত্যন্ত কঠিন। আইসিসি’র নিরপেক্ষ কমিটির মাধ্যমে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এ পুরস্কার নির্ধারণ করা হয়। সবার ভোটে নির্বাচিত হওয়া অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। তবে নির্বাচকম-লী সন্দেহাতীতভাবেই মুস্তাফিজকে নির্বাচিত করেছে। ২০১৫ সালে ৯ ওয়ানডে ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়ে আইসিসি বর্ষসেরা ওয়ানডে দলেও জায়গা পেয়েছিলেন মুস্তাফিজ। তারপর সাফল্যের ধারাবাহিকতা দেখিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে সেনশেসনে পরিণত হন। বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের আতঙ্কে পরিণত হন। ইনজুরির কারণে বিগত ছয় মাস ক্রিকেট থেকে দূরে না থাকলে হয়ত মুস্তাফিজ আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতেন। বলা যায়, ২০ মাসের ক্যারিয়ারে মাত্র ১৪ মাস তিনি খেলতে পেরেছেন। এই স্বল্প সময়ে তার পারফরমেন্স কতটা তীক্ষè ও ধারালো ছিল, তা বলা বাহুল্য। এর বদৌলতেই তিনি আইসিসি’র বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হিসেবে পুরস্কার লাভ করেছেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন বিশ্বের যে কোনো দলের কাছেই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন আর দলটিকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। এটা সম্ভব হয়েছে, ক্রিকেটের প্রতি বিসিবি’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে। পাশাপাশি ক্রিকেটারদের একাগ্রতা, নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ক্রিকেট দলকে পরাশক্তিতে পরিণত করেছে। খেলাধুলা যে বিশ্বে একটি দেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যায়, বাংলাদেশের ক্রিকেট তার অন্যতম উদাহরণ। উদাহরণ হয়ে থাকবেন মুস্তাফিজও। অসাধারণ নৈপুণ্য ও সাধনা দিয়ে নিজেকে বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করার এমন দৃষ্টান্ত দেশের অন্যান্য উদীয়মান ক্রিকেটারের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে। তবে মুস্তাফিজকে এ পুরস্কারের আনন্দে ভেসে গেলে চলবে না। পুরস্কার যেমন অনুপ্রাণিত করে, তেমনি পুরস্কারের মর্যাদা ধরে রাখতে দায়িত্বও বাড়িয়ে দেয়। তাকে মনে রাখতে হবে, দেশ তাকে আজ বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছে। তিনি এখন দেশের সম্পদ। এ সম্মান ধরে রাখতে তাকে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে যেতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুস্তাফিজ


আরও
আরও পড়ুন