পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে উজ্জীবিত বিএনপি নেতাকর্মীরা। প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষও এসব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে বলে মনে করেন তারা। বিশেষ করে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ এবং ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলে লাখো মানুষের অংশগ্রহণ সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণে উৎসাহ যোগাচ্ছে নীতিনির্ধারণী নেতাদের। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে এখন সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছেন। গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় জানাতে তারা প্রস্তুত আছেন। এজন্য বিএনপিও এখন তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে এর সাথে সম্পৃক্ত করতে চায়। এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে কর্মসূচিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চায় হাইকমান্ড।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, নানা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতা সত্তেও ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ এবং ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলে ব্যাপক জমায়েতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরকারকে বার্তা দিয়েছে। একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিতে সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোটও মাঠে নেমেছে। সেদিনই আগামী ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ১০ ডিসেম্বর ও ৩০ ডিসেম্বরের মতো ১১ জানুয়ারির গণঅবস্থান কর্মসূচিতেও বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ঘটাতে চায় বিএনপি। এলক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এসব নেতাদের তত্তাবধানে প্রতিটি জেলায় প্রস্তুতি সভা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এছাড়া ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ তুলে ধরতে গত ২ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলায় সভা করছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সাংগঠনিক সম্পাদকরা। আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা ৬০টি সাংগঠনিক জেলায় এসব সভা করবেন। সেখানে বিএনপির নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষিবিদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, ধর্মীয় নেতা, সাংষ্কৃতিক কর্মী, মানবাধিকার কর্মীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করছেন। সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তাসহ সকল স্তরের মানুষের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে বুকলেট ও লিফলেট।
বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক নবী উল্লাহ নবী বলেন, আওয়ামী সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসনে সারা দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। দেশের জনগণ এ জুলুমবাজ আওয়ামী সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সারা দেশের মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। ইনশাআল্লাহ আন্দোলনের মাধ্যমেই আওয়ামী দুঃশাসনের বিদায় হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচির অনুমতি নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছে, কিন্তু সরকারের কোনো টালবাহানা কাজে আসবে না। যে কোনো অবস্থাতেই আগামী ১১ জানুয়ারির গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে হবে। এ জন্য দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে প্রস্তুত থাকতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, আগামী ১১ জানুয়ারি বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি যে কোনো মূল্যে সফল করতে হবে। গণমিছিল থেকেও গণঅবস্থান কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে অংশ নিতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, সারা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ২৭ দফা আর আন্দোলনের জন্য ১০ দফা কর্মসূচি দিয়েছে, দলের নেতাকর্মীদের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের আন্দোলনের জন্য উজ্জীবিত রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে মাঠে রাখতে চায় দলটি। এজন্য ইতোমধ্যে সরকার বিরোধী বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। গত ৩০ ডিসেম্বর যেসব দল মাঠে নেমেছিল এর বাইরে থাকা দলগুলোকে আন্দোলনে পাশে চান তারা। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং গত বুধবার মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির লিয়াজো কমিটির নেতারা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি চলমান থাকবে। একের পর এক কর্মসূচি এক সময় চূড়ান্ত কর্মসূচিতে রূপ নেবে। প্রথম কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা ও নেতাকর্মীর ঢল বিএনপি’র হাইকমান্ডসহ সবাইকে আশান্বিত করেছে। ১০ দফার দাবিতে আন্দোলন করলেও মূলত দাবি একটি। তা হচ্ছে সরকারের পদত্যাগ। এই দাবি আদায় হলেই বাকি ৯ দফা দাবি পূরণ হবে।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ১১ জানুয়ারি ঢাকার নয়াপল্টনে ৪ ঘণ্টা গণঅবস্থান করবেন নেতাকর্মীরা। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জোটও একই দিনে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিভাগীয় শহরগুলোতেও গণঅবস্থান করবে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
এদিকে এই কর্মসূচি সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছে বিএনপি। দশ সাংগঠনিক বিভাগে ওই দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হবে এ কর্মসূচি পালিত হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হলেন- কুমিল্লা বিভাগের দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। চট্টগ্রাম বিভাগের দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।
ময়মনসিংহ বিভাগের দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।
ঢাকা বিভাগের দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।
খুলনা বিভাগের দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ভাইস এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক-সম্পাদক।
রাজশাহী বিভাগের দলনেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।
ফরিদপুর বিভাগের দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার এবং সমন্বয়কারি সাংগঠনিক সম্পাদকও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।
সিলেট বিভাগের দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।
বরিশাল বিভাগের দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী-খান সোহেল এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। রংপুর বিভাগের দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর-রশিদ এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।
এছাড়াও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন- স্ব স্ব বিভাগের অধিবাসী জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতা, সাবেক এমপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি/আহবায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব, জেলা/মহানগর বিএনপির সভাপতি/আহবায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব/১ম যুগ্ম আহবায়ক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী কিছু দল ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলই সরকারের পরিবর্তন চায়। সরকার পরিবর্তনে সকল রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে। সকলেই চায় একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার। যার মাধ্যমে মানুষ তার ভোটাধিকার ফিরে পাবে এবং যার ভোট সে দিতে পারবে। সে ব্যাপারে আমরা ঐক্যমত হয়েছি।
তিনি বলেন, আগামী ১১ জানুয়ারি যুগপৎ আন্দোলনের দেশব্যাপী গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সেদিন সকল রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষকে এই কর্মসূচি অংশগ্রহণের আহবান জানান টুকু।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা আশা করছি জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে এই সরকারের পতন করে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেব। তারপর দেশের মানুষ যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেবে। এ লক্ষ্যে আমরা আন্দোলনে রয়েছি, আশা করি আমরা এই আন্দোলনে জয়লাভ করব।
গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, আমরা চলমান আন্দোলনে শরিক হয়েছি। আগামী দিনে সমস্ত জাতিকে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার আহবান জানাচ্ছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ জনগণ বার্তা দিয়েছে এই সরকার রাষ্ট্রকে মেরামত করতে পারবে না। তারা এ সরকারকে আর দেখতে চায় না। তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচি বানচাল করতে সরকার বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার করেছে। সরকার যত নির্যাতন-নিপীড়ন করুক আন্দোলনকে দমানো যাবে না। জনগণ রাস্তায় নেমেছে আর রক্ষা নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।