Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ডান্ডাবেড়ি পরে মায়ের জানাজায়, সেই আলীর বাড়িতে যাচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৪৯ পিএম

বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজমের বাড়িতে যাচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে তার বাড়ি ইউনিয়নের পাবুরিয়াচালা গ্রামে যান।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কারাবন্দি আলী আজমের মায়ের মৃত্যুতে তার পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নিতে এবং সমবেদনা জানাতে যান কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের নেতাকর্মীদের বিপদ আপদে তাদের পাশে থাকার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে প্রতিনিধি দলটি তার বাড়িতে যান।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজম খানকে পুলিশ যে মামলায় গ্রেফতার করেছিল সে মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। একজন সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ১ ডিসেম্বর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরদিন গাজীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠায়। তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। তবে আদালতে রিমান্ড শুনানি হয়নি বলে জানিয়েছেন কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর খান।

এদিকে এজাহারভুক্ত আসামি না হয়েও বিএনপি নেতা সভাপতি আলী আজম খানকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে তার মায়ের জানাজায় অংশ নেওয়াকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা এ ঘটনাকে চরম অমানবিক হিসেবে দেখছেন। আলী আজমের ভাই মো. আতাউর রহমান জানান, তার ভাই ঘটনার সময় ওই স্থানে ছিলেন না। মিথ্যা মামলায় তার ভাইকে জড়ানো হয়েছে। সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তার রিমান্ডও চাওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, ভাইয়ের রাজনৈতিক জীবনে এটাই প্রথম জেলে যাওয়া। ভাই কারাগারে থাকায় এবং জামিন না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে মা সাহেরা বেগম রবিবার বিকেলে মারা যান। জানাজার দিন সকাল সোয়া ১০টার দিকে পুলিশ আলীকে উপস্থিত করে। তাকে পরানো ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া খুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ তা খোলেনি।

আতাউর অভিযোগ করে বলেন, আলী ভাই মায়ের জানাজা নামাজের ইমামতি করেন। নামাজ শেষে অল্প সময়ের মধ্যে লাশ কবরস্থানে নেওয়া হয়। মাটি দেওয়া শেষ না হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে ভাইকে আরেকটু সময় থাকার এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ চাইলেও দেওয়া হয়নি। পানি খেতে চাইলেও তাকে সে সুযোগও দেয়নি পুলিশ।

আলীর ভাই বলেন, বড় ভাই দুই সন্তানের জনক। তিনি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তার বড় মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। ছেলে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। শিশু সন্তান এবং এলাকার সাধারণ মানুষ ও মুসল্লিদের সামনে দাগী আসামিদের মতো ভাইকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে উপস্থাপন মারাত্মকভাবে হেয় করা হয়েছে।

২৯ নভেম্বর কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোড় এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ের কেয়ারটেকার মো. আব্দুল মান্নান শেখ বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে কার্যালয়ের সামনে বিএনপির একটি মিছিল থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে মিছিলের ভেতর থেকে পরপর কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে অবিস্ফোরিত পাঁচটি ককটেল জব্দ করে।

মামলায় এজাহারভুক্ত ১১ আসামির মধ্যে এ পর্যন্ত বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিন ও সারোয়ার হোসেন ওরফে আকুলকে গ্রেফতার করা হয়। আর সন্দেহভাজন হিসেবে এ মামলায় আলী আজম খানসহ ১৬জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার বাদী আবদুল মান্নান শেখ কসম সাংবাদিকদের বলেছিলেন তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। মামলাও করেননি। এর দুদিন পর সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নিজেই বাদী হয়ে মামলা করেছেন বলে জানান। তিনি ঘটনাস্থলেও ছিলেন। সাংবাদিকদের কাছে আগে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা সঠিক ছিল না।

এ বিষয়ে কালিয়াকৈর থানার ওসি মো. আলী আকবর খান বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসের কেয়ারটেকার আব্দুল মান্নান শেখ নিজেই বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। এ জন্য পুলিশের কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণও আছে। এদিকে, ডান্ডাবেড়ি নিয়ে বিএনপি নেতার মায়ের জানাজা পড়ানো কারাবিধি মোতাবেক হয়েছে, এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি বলে জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দসহ সংশ্লিষ্টরা।

জেল সুপার জানান, প্যারোলে মুক্তির আদেশের আবেদনপত্রে আসামির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসআই কামাল হোসেন ‘ডান্ডাবেড়ি প্রয়োজন’ বলে উল্লেখ করে আবেদন করেন। তবে পুলিশ আবেদন না করলেও জেল কোড অনুযায়ী তিনি ডান্ডাবেড়ি লাগাতেন। কারণ, জানাজা থেকে আসামি উধাও হয়ে গেলে দায়-দায়িত্ব জেল কর্তৃপক্ষের ওপরই বর্তাবে। ওই বিবেচনায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। তাছাড়া প্যারোলে মুক্তি পাওয়া কোনো আসামিকে এ পর্যন্ত তিনি ডান্ডবেড়ি ছাড়া মুক্তি দেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ