Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ধুলায় কাহিল জনজীবন

চট্টগ্রামে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগ হ বাড়ছে রোগবালাই

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পাইলিং। সড়কেই রাখা মাটি, বালুর স্তুপ। যানবাহনের চাকায় বাতাসে উড়ছে ধুলাবালু। রাস্তায় নেমেই নাকাল হচ্ছে পথচারী। ধুলাবালু থেকে রেহাই পাচ্ছেন না গণপরিবহনের যাত্রী এবং আশপাশের বাসিন্দারা। চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান সড়কের পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এমন দুর্ভোগ এখন নিত্যদিনের। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি আর উন্নয়নের ধীরগতিতে নগরীর বেশিরভাগ এলাকার চিত্র এখন এমনই বেহাল। যেসব সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি নেই সেখানেও উড়ছে ধুলাবালু। এর সাথে যোগ হয়েছে যানবাহন ও কল-কারখানার কালো ধোঁয়া।

মহানগরীর অদূরে গড়েওঠা ইটের ভাটা থেকেও মারাত্মক দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। উন্নয়ন কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়িতে উঠে আসা ধুলাবালু প্রতিরোধে নিয়মিত পানি ছিটানোর কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এর ব্যাপারে অনেকটাই নির্বিকার সিটি কর্পোরেশন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর। ফলে দিনে দিনে নগরীর পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে। তাতে বাড়ছে রোগবালাই। বায়ু দূষণের ফলে শিশু এবং বৃদ্ধরা চর্মরোগ, শ^াসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতের প্রকোপ বাড়তেই হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ।

নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে এখন ধুলা উড়ছে। বিশেষ করে পতেঙ্গা থেকে ইপিজেড, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট হয়ে লালখান বাজার পর্যন্ত এলাকার অবস্থা বেশি নাজুক। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের খোঁড়াখুঁড়ি চলছে দীর্ঘদিন থেকে। পাইলিংয়ের মাটি রাখা হচ্ছে রাস্তায়। আবার ইট, কঙ্করের সাথে রাখা হচ্ছে বালুও। যানবাহনের চাকার সাথে বাতাসে উড়ছে এসব ধুলাবালু। ভোরের কুয়াশায় কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ধুলাবালুর উৎপাত বাড়তে থাকে। মাস্ক পরেও ধুলাবালু থেকে রেহাই মিলছে না। গণপরিবহনের দরজা-জানালা দিয়ে বালুর সাথে কঙ্করও ঢুকে পড়ছে। আশপাশের ভবন, দোকান পাট, ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র ধুলায় বিবর্ণ। ওই এলাকার বাসিন্দাদের জীবন এখন দুর্বিষহ। সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ, রিকশা, ঠেলাচালক, ফুটপাতের হকারসহ পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

মহানগরীর আরও কয়েকটি এলাকায় চলছে উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ি। সেখানেও ধুলায় নাকাল হচ্ছে নগরবাসী। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন সড়কে সংস্কার কাজ চলছে। কাজের জন্য আনা বালু রাখা হচ্ছে সড়কে। কোথাও সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পরও রাস্তায় রাখা হচ্ছে অবশিষ্ট বালু। এর ফলে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতায় দূষণের মাত্রা আরও বাড়ছে। পরিবেশ ছাড়পত্র অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক পরিবেশবান্ধব বেষ্টনী দেয়ার পাশপাশি ধুলাবালু প্রতিরোধে নিয়মিত পানি ছিটানোর কথা রয়েছে। কিন্তু তা কেউ মানছে না।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এলাকায় মাঝেমধ্যে পানি ছিটাতে দেখা গেলেও অন্যান্য এলাকায় ঠিকাদারেরা একেবারেই নির্বিকার। নগরী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। অথচ বেশিরভাগ সড়কে ময়লা-আবর্জনা বিশেষ করে ধুলাবালুর স্তুপ জমে থাকলেও তা পরিষ্কারের উদ্যোগ নেই। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর সড়কগুলোতে ধুলাবালু প্রতিরোধে সুইপিং ও ঝাড়ু দেয়ার জন্য বিশেষ যানবাহনও কেনা হয়েছিল। তবে কোথাও এসব যানবাহনের কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। ধুলাবালুর সাথে যোগ হয়েছে যানবাহন ও কল-কারখানার কালো ধোঁয়া। নগরীতে চলাচলকারী বেশিরভাগ যানবাহনের নেই ফিটনেস সার্টিফিকেট। আবার নগরীর প্রাণকেন্দ্র আবাসিক এলাকাতে গড়ে উঠেছে কল-কারখানা। এসব কল-কারখানায় ধোঁয়ায় বায়ু দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, শীতকালে বাতাসে আদ্রতা কমে যায়। আর তখন ধুলাবালুর সাথে রোগ-জীবাণুর আধিক্য বেড়ে যায়। এতে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি ও সর্দি, কাশির মত রোগের প্রকোপ বাড়ে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও বাড়তে শুরু করেছে। ধুলাবালুর প্রকোপ থেকে রক্ষায় মাস্ক এবং মাথায় ক্যাপ পরার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বাসায় ফিরে ভালোভাবে হাত-মুখ ধোঁয়া এবং পারলে গোসল করে ফেলারও পরামর্শ তাদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ