নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
চার বছর আগে আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে তার যোগ দেওয়াটাকে খুব একটা স্বাগত জানাননি কেউ। অনেকেই বেশ হতাশ হয়েছিলেন লিওনেল স্কালোনিকে কোচ করায়। কাল সেই স্কালোনিই ঠাঁই করে নিলেন ইতিহাসে। গত বছর আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতিয়েছিলেন ২৮ বছর পর। আর এখন তো তিনি ঢুকে পড়েছেন আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসেই। সিজার লুইস মেনোত্তি ও কার্লোস বিলার্দোর পর স্কালোনিই হলেন আর্জেন্টিনার আরেক বিশ্বকাপজয়ী কোচ।
শুরুর দিনগুলো কঠিন ছিল। প্রয়াত ডিয়াগো ম্যারাডোনাও স্কালোনির নিয়োগ মেনে নিতে পারেননি। খুব কঠিন মন্তব্য করেছিলেন। আসলে ২০১৮ বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পর গোটা আর্জেন্টিনাই এমন একজন কোচ চাইছিল, যিনি দলের অভিভাবক হবেন। সেই সঙ্গে সেই কোচ হবেন তারকাও। যিনি নিজের জ্যোতিতেই দলকে দিকনির্দেশনা দেবেন। এগিয়ে নিয়ে যাবেন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের দিকে। স্কালোনি তেমন কেউই ছিলেন, এটা বিশ্বাস করেননি কেউ।
খেলোয়াড় স্কালোনিও খুব হাই প্রোফাইল কিছু ছিলেন না। আর্জেন্টিনায় নিওয়েজ ওল্ড বয়েজ আর স্পেনে দেপোর্তিভো লা করুনার পর সেভিয়াতে খেলেছেন। আর্জেন্টিনার জার্সিতে খেলেছেন, তবে বড় কোনো তারকা ছিলেন না। ২০০৬ বিশ্বকাপ, যেটি লিওনেল মেসির প্রথম বিশ্বকাপ, স্কালোনি ছিলেন সে দলে। খেলা ছাড়ার পর কোচ হিসেবে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের যুব কার্যক্রম দেখভাল করেছেন। সেই তিনিই পাবলো আইমার আর ওয়াল্টার স্যামুয়েলকে সহকারী বানিয়ে আর্জেন্টিনা দলটাকে বদলে দিলেন ভোজবাজির মতো।
যুব কার্যক্রমে কাজ করছিলেন বলেই ভবিষ্যতের দল গড়ার দিকে স্কালোনির মনোযোগ ছিল, সফলও হয়েছেন। তিনি বুঝেছিলেন, কেবল মেসির ওপর নির্ভর করে সাফল্য পাওয়া যাবে না। তাই লিয়ান্দ্রো পারেদেস, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, হুলিয়ান আলভারেজদের তিনি গড়ে তুলেছেন দারুণভাবে। সঙ্গে নিজেকে প্রমাণ করেছেন দারুণ এক ট্যাকটিশিয়ান হিসেবে।
এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে একেক ম্যাচে একেক কৌশলে খেলিয়েছেন। কাল রাতে ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষেই যেমন রাইট উইঙ্গার আনহেল দি মারিয়াকে লেফট উইংয়ে খেলিয়ে প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা এলোমেলো করে দিলেন। দি মারিয়াই যতক্ষণ মাঠে থাকলেন বাঁ দিক দিয়ে ফ্রান্সকে কী বেগটাই না দিলেন! বিশ্বকাপ ফাইনাল শুরু হতেই সেই ‘অখ্যাত’, ‘সাধারণ মানে’র কোচই কোচ, খেলোয়াড়, দুই পরিচয়েই বিশ্বকাপ জেতা ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশমকে বিরাট ব্যবধানে হারিয়ে দিলেন।
বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ফাইনাল জিতেই আর্জেন্টিনা স্কালোনিকে অর্ঘ্য দিল। মেসি, ডি মারিয়া, আলভারেজ, রদ্রিগো দি পল, এনজো ফার্নান্দেজরা কোচের কৌশলের সার্থক প্রতিফলন করে দেখালেন মাঠে। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ৩-৩ সমতার নাটকীয় ম্যাচে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ এনে দিলেন তারা। স্কালোনি শুধু আর্জেন্টাইন ফুটবলা ইতিহাসেই তৃতীয় বিশ্বকাপজয়ী হিসেবে স্থান করে নিলেন না, ঠাঁই করে নিয়েছেন লাতিন ফুটবল ইতিহাসেও। ব্রাজিলের মারিও জাগালো আর কার্লোস আলবার্তো পাহেইরার পর তিনি তৃতীয় লাতিন কোচ, যিনি কোপা জয়ের সঙ্গে বিশ্বকাপও জিতলেন।
কোপা জয়ের পর আর্জেন্টিনা দলের নাম ‘আল বিসেলেস্তে’ থেকে বদলে অনেকেই দিয়েছেন ‘লা স্কালোনেতা’, মানে স্কালোনির দল। কাতার বিশ্বকাপ জিতে আর্জেন্টিনা এখন শুধু মেসিরই দল নয়, আক্ষরিক অর্থেই স্কালোনিরও দল। অবিশ্বাস্য এই সাফল্যের নেপথ্যের এই নায়ক তাই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি, কেঁদেছেন শিশুর মতো, তবে মুখ লুকিয়ে। ম্যাচশেষে তাই আবেগ লুকোতে পারলেন না তিনিও, ‘পুরোই পাগল করে দেওয়ার মতো ম্যাচ ছিল। আমি জানি আমরা ভালো একটি ম্যাচ কাটিয়েছি, প্রথম ৯০ মিনিটেই আমরা জিততে পারতাম। জীবনের সবচেয়ে সেরা অনুভূতি হচ্ছে আমার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কিভাবে আমরা এটা (বিশ্বকাপ জয়) অর্জন করলাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।