নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ভামোস, ভামোস আর্জেন্টিনা, ভামোস, ভামোস আ গানার ( চলো, চলো আর্জেন্টিনা শুরু করা যাক, আমরা যাচ্ছি, আমরা জয় করতে যাচ্ছি)- এই কথাগুলো এখন বিশ্বের সব দেশের ফুটবল পাগল মানুষের মুখে মুখে। বিশেষ করে যারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা সমর্থক তারা তো এখন কথায় কথায় বলছেন,‘ভামোস, ভামোস’। ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটলো। তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি জিতল আর্জেন্টিনা। দেশটির রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে মেসিদের উষ্ণ সংবর্ধনা দিতে এখন অপেক্ষমান কোটি আর্জেন্টাইন জনতা। তবে তার আগেই কাতারের দোহায় ভক্তদের সঙ্গে ট্রফি নিয়ে ছাদখোলা বাসে চড়ে আনন্দ উদযাপনে মাতলেন লিওনেল মেসি, ডি মারিয়া, এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, এনজো ফার্নান্দেজরা। আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে উদযাপনের জন্য রোববার রাতে কয়েক লাখ সমর্থক লুসাইল সিটিতে ভিড় জমান। মেসিদের সামনে থেকে এক নজর দেখতে তারা অপেক্ষা করতে থাকেন।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে শুধু দোহা নয়, পুরো কাতারেই ছড়িয়ে পড়েছিল উৎসব। জনজীবন স্থবির হয়ে যায়। মধ্যরাতে মেসিদের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন আর্জেন্টিনার সমর্থকসহ স্থানীয় জনগণরা। অবশ্য তাদের হতাশ হতে হয়নি। ছাদখোলা বাসে চড়ে ‘ট্রফি ট্যুর’ করেছেন মেসিরা। সেই বাসের দ্বিতীয় তলায় ট্রফি ও পতাকা নিয়ে আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা সমর্থকদের দিকে হাত নেড়ে পথ চলতে থাকেন। মেসিদের ছাদ খোলা বাসের পেছনে লেখা ছিল ‘চ্যাম্পিয়ন’। ছাদ খোলা বাসের পাশাপাশি আতশবাজিও ছিল। সেই আতশবাজিতে লুসাইল সিটি হয়ে উঠেছিল রঙিন। বাস ধীরে ধীরে চলার সময় সমর্থকরা হাত নেড়ে বলতে থাকেন, ‘ভামোস, ভামোস’। সে এক নজরকাড়া দৃশ্য।
এদিকে লুসাইল ছাপিয়ে উৎসব ছড়িয়েছে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সসহ সারা বিশ্বে। বছরের পর বছর ধরে অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে থাকা আর্জেন্টিনার মানুষ দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে একটি স্বপ্নকে অবলম্বন করে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করে আসছেন। রোববার বিশ্বকাপ জয়ের মধ্য দিয়ে তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তাই তো তারা কষ্ট ভুলে উল্লাসে মাতলেন বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে। তারা বলেছেন, কষ্টকে এক পাশে সরিয়ে উল্লাস করার উপলক্ষ খুঁজে পেয়েছেন।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়, রোববার আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের ঐতিহাসিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জড়ো হয়ে মানুষকে বিজয় উল্লাস করতে দেখা গেছে। আতশবাজির ঝলকানির সঙ্গে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে আর্জেন্টাইন জনতা উল্লাস করেছেন। তাদের গায়ে জড়ানো ছিল নীল-সাদা রঙের পতাকা। বুয়েন্স আয়ার্সের বিভিন্ন রাস্তায় গান গেয়ে, নেচে নেচে এবং পতাকা উড়িয়ে বিজয় উদ্যাপন করেছেন লাখো আর্জেন্টাইন।
প্রায় দুই লাখ মানুষ বুয়েন্স আয়ার্সের ওবেলিস্ক স্তম্ভ এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন। প্লাজা দে মায়ো স্কয়ারে এ স্মৃতিস্তম্ভের অবস্থান। প্লাজা মায়ো স্কয়ারে উপস্থিত ছিলেন ৫০ বছর বয়সী হোটেল অভ্যর্থনাকারী জুলিও বেরদুন। তিনি বলেন, এসব মানুষের প্রত্যেকের কাছে বিষয়টি আনন্দের। আজ আমাদের দিন, আনন্দটাও আমাদের।’ জোয়েল সিয়ারালো নামের ৩১ বছর বয়সী এক তরুণ আনন্দে আত্মহারা হয়ে বারবার বলছিলেন, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না।’
বুয়েন্স আয়ার্সের সেন্তেনারিও পার্কে বিশাল পর্দায় খেলা দেখছিলেন বিয়ার বিক্রেতা ম্যানুয়েল ইরাজো। তিনি বলেন, ‘আমরা আর্জেন্টাইনদের জন্মই হয়েছে দুর্ভোগ পোহানোর জন্য। এরপরও আমরা পথ চলছি। এটাই এ দেশের ধরণ।’
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্জেন্টিনায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষই দরিদ্র। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে সঞ্চয় ও মোট আয়ের ওপর প্রভাব পড়ছে। বছরের পর বছর ধরে আর্জেন্টিনা অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে আছে। দেশটির জনগণের অনেকে বিশ্বকাপ জয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে এ দুর্দশা ভুলে থাকার চেষ্টা করে থাকে। ২৫ বছর বয়সী নির্মাণশ্রমিক আগুস্তিন আচেভেদো বলেন, ‘আর্জেন্টিনা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সমস্যার মধ্যে আছে। খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এই বিজয়ে এখান থেকে মনোযোগ সরানোর ক্ষেত্রটি ভালোভাবে অর্জিত হয়েছে।’
রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে ওবেলিস্ক চত্বরে আলো জ্বালানো হয়। শুধু স্কয়ারের কেন্দ্রস্থলেই নয়, আশপাশের রাস্তার আনাচকানাচে যত দূর চোখ যাচ্ছিল, শুধু মানুষ আর মানুষ, উল্লাস আর আনন্দ। বুয়েন্স আয়ার্সে লা মোস্কা ব্যান্ডের পক্ষ থেকে একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল। এখানে বিশ্বকাপ উপলক্ষে আর্জেন্টিনা দলের অফিশিয়াল গানের সংস্করণটি পরিবেশন করা হয়।
আর্জেন্টিনা সর্বশেষ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ৩৬ বছর আগে। রোববারের এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে ৩৬ বছরের শূন্যতা পূরণ হওয়ায় অনেকে স্বস্তি বোধ করছেন এখন। সোলেদাদ পালাসিয়োস বলেন, ‘৩৫ বছরের জীবনে এ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। এ স্বপ্ন পূরণের জন্য ৩৫ বছর ধরে অপেক্ষা। বিশ্বকাপ উপভোগ করবো বলে জীবনভর অপেক্ষা করছি।’ এ প্রতিবেদন লেখার সময় গতকাল (রাত ৯টা) নিজেদের দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছে আর্জেন্টিনা ফুটবল দল। স্থানীয় মানুষের এখন একটাই চাওয়া, আজ তাদের ছাদখোলা বাসে করে সংবর্ধনা দেওয়া হোক।
এবার কাতার বিশ্বকাপে এই লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামটি যেন আর্জেন্টিনার হোম ভেন্যুতে পরিণত হয়েছিল। নিজেদের সাত ম্যাচের মধ্যে চারটিই এখানে খেলেছেন মেসিরা। শেষ ম্যাচ ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে লুসাইলকে স্মরণীয় করে রাখে আলবিসেলেস্তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।