নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আশি বছরের পুরোনা ক্লাসিক সিনেমা কাসাব্লাঙ্কার বিখ্যাত একটি ডায়ালগ ছিল, ‘আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি।’ এবারের কাতার বিশ্বকাপ শেষে মরোক্কানরা সেই লাইনটি একটু ঘুরিয়ে বলতে পারে, ‘আমি তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছি প্রিয় ফুটবল!’ এর আগে পাঁচবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে একবার কেবল নক আউট পর্ব পর্যন্ত যেতে পেরেছিল মরক্কো। সেটিও ১৯৮৬ সালে। ফলে এবারের আসর শুরুর আগে দলটিকে নিয়ে কোনো মাতামাতি ছিল না। তা ছাড়া গ্রুপে ছিল বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়ার মতো দুই পরাশক্তি দল। তবে খেলা শুরু হওয়ার পর সারা দুনিয়ার ফুটবলপ্রেমীদের চমকে দিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় আফ্রিকান দেশটি।
এবারের আসরে তারা হারায় বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালের মত ফুটবল পরাশক্তিদের। বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য সফলতার মাধ্যমে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমি-ফাইনালে খেলে অ্যাটলাস সিংহরা। আসর শেষ করে চতুর্থ হয়ে। দলটির কোচ ওয়ালিদ রেগরাগি আসর শুরুর আগে দলকে বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের ফেবারিট ভাবছে না তবে আমরা যাচ্ছি আসরের শেষ পর্যন্ত থাকতে।’ এই ৪৭ বছর বয়সী ম্যানেজার এখন দেখছেন আরও বড় স্বপ্ন। পরশু ক্রোয়শিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় স্থান নির্ধারণি খেলায় ২-১ ব্যবধানে হারের পর নতুন লক্ষ্য স্থাপন করেছেন রেগরাগি। একদিন বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছেন তারা! রেগরাগি বলেন, ‘আমরা ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে দুবার খেলেছি, যারা বিশ্বের সেরা তিন দলের একটি। আমরা স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও কানাডার বিপক্ষেও খেলেছি, সত্যি বলতে ব্যাপারটি চমৎকার। আমরা আমাদের ভক্তদের আনন্দ দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমরা এখনও খুশি, আমরা বিশ্বের সেরা চারটি দলের মধ্যে আছি। আমাদের লক্ষ্য একদিন বিশ্বকাপ জেতা। মরক্কো দেখিয়েছে যে, আমরা এই দলগুলোর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে পারি। আমরা সম্মান পাওয়ার যোগ্য। ছেলেরা শেষ অবধি লড়াই করেছে, লড়াকু মানষিকতা দেখিয়েছে। এটাই ফুটবল, কিছু দেশ আমাদের চেয়ে শক্তিশালী। তবে তারা কেবল সামান্য শক্তিশালী ছিল।’
মরক্কোর এমন সাফল্য কেবল সেই দেশটির জন্য নয়, বরং গোটা আফ্রিকার দলগুলোরই বিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন রেগরাগি, ‘আমরা আমাদের সামর্থ্য দেখিয়েছি, আমরা দেখিয়েছি যে, আফ্রিকান ফুটবল দক্ষতার সঙ্গে সর্বোচ্চ স্তরে খেলার এবং বিশ্বের শীর্ষ দলগুলোর মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। আমি নিশ্চিত, ১৫ বছরের মধ্যে একটি আফ্রিকান দল বিশ্বকাপ জিতবে।’
সেমি ফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়া আরেক দল হচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার। গতবার রাশিয়ায় সবাইকে চমকে দিয়ে ফাইনাল খেলে ইউরোপের দলটি। তবে এবারের স্কোয়াড ছিল গুণে ও ভারে পূর্বের তুলনায় অনেক অনভিজ্ঞ। এরপরও শেষ চার পর্যন্ত পৌঁছে জøাতকো দালিচের দল। পরশু মরোক্কোরকে ২-১ ব্যবধান হারিয়ে তৃতীয় হয়ে কাতার আসর শেষ করেছে ক্রোয়েটরা। দলের পারফরম্যান্সে গর্বিত কোচ দালিচের দাবি তাদের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল।
সেমিতে যাওয়ার পথে ক্রোয়শিয়া শেষ ষোলতে হারায় এশিয়ার পরাশক্তি জাপানকে, ম্যাচটা সামুরাই ব্লুজরাই ভালো খেলেছিল তবে ক্রোয়শিয়া এগিয়ে ছিল কৌশলে। ঠিক একইভাবে কোয়ার্টার-ফাইনালে তারা বিদায় করে দেয় আসরের সবচেয়ে ফেবারিট দল ব্রাজিলকে। ধরা হচ্ছিল ২০০৬ সালের পর এটিই ছিল সেলেসাওদের সবচেয়ে শক্তিশালী দল। তবে স্নায়ু ও কৌশলের মারপ্যাঁচে আবারও ছিটকে গেল ব্রাজিল। আসলে বলা উচিত ক্রোয়েটদের পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত ফুটবলের কাছেই হারটা হয়েছিল পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নদের।
টানা দুই আসরে সেমি-ফাইনালে ওঠে দালিচের দল আর পেরে ওঠেনি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। পরশুর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিপক্ষের প্রশংসা করার পাশাপাশি নিজেদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্টির কথাও বলেন দালিচ, ‘আমরা এই আসরে শেষ ম্যাচ খেলেছি। আপনাদের মনে থাকার কথা, আমি বলেছিলাম যে আমরা যদি হেরে যাই তাহলে এটা হবে খুবই বাজে। ম্যাচটি কঠিন ও দারুণ ছিল। আমি মরক্কোকে অভিনন্দন জানাতে চাই। ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও তারা দুর্দান্ত লড়াই করেছে। মরোক্কো যেভাবে খেলেছে তাতে গর্বিত হতে পারে। তারা আমাকে চার বছর আগের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।’
বিশ্বকাপ পথচলা শেষ হলে সামনে নেশন্স লিগের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ম্যাচ অপেক্ষা করছে ক্রোয়েটদের জন্য। আগামী জুনে ইতালি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসকে নিয়ে হবে সেই প্রতিযোগিতা। তবে দালিচ তাকাচ্ছেন আরও সামনে। তার মতে, আরও ভালো কিছু উপহার দেবে ক্রোয়েশিয়া। দালিচ যোগ করেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটি পথচলার শেষ। আজ রাতের ম্যাচ ও জয় আমাদের জন্য টুর্নামেন্টের সেরা মুহূর্ত।’ এরপর মদ্রিচ ও ব্রজোভিচকে উদ্দেশ কিরে বলেন, ‘হ্যাঁ, বয়সের কারণে আমার কিছু খেলোয়াড়ের এটাই শেষ বিশ্বকাপ। তবে দলে তরুণ খেলোয়াড় রয়েছে এবং ক্রোয়েশিয়ার জন্য এটা দারুণ। অনেক খেলোয়াড় বেঞ্চেও আছে। আমাদের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা না থাকলে আমরা এতদূর আসতে পারতাম না। দারুণ ভবিষ্যৎ রয়েছে আমাদের, ক্রোয়েশিয়ার ভয়ের কিছু নেই।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।