Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামের এশিয়াটিক কটন মিলস চালুর দাবি

৩৩ কোটি টাকা বকেয়া ১২শ’ শ্রমিক-কর্মচারীর মানবেতর জীবন-যাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামের ‘দি এশিয়াটিক কটন মিল্স লিমিটেড পুনরায় চালুর দাবি উঠেছে। মিলটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের প্রায় ৩৩ কোটি টাকা দীর্ঘ ২৯ বছরেও পরিশোধ করেনি মিল কর্তৃপক্ষ। ফলে ১২শ’ শ্রমিক-কর্মচারী অর্থাভাবে অনাহারে, অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ইতোমধ্যে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় ৩শ’র অধিক শ্রমিক-কর্মচারী মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকেই মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। এ অবস্থায় মিলটি চালু এবং বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধে শ্রমিক কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার প্রেরণ করেছেন।
জানা যায়, মহানগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় ১৯৬২ সালে ব্যক্তি মালিকানায় মিলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের প্রেসিডেন্টের আদেশ মূলে মিলটি জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর উক্ত মিলের শেয়ার হোল্ডার ও মালিকদের সাথে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি মূলে মিলটি তাদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে পূবালী ব্যাংক কর্তৃক অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে কারখানা কর্তৃপক্ষ বিগত ১৯৯৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর মিলটি লে-অফ ঘোষণা করে, যা এখনো বলবৎ রয়েছে। আইনগত জটিলতায় দীর্ঘ অনেক বছর মিলটি বন্ধ আছে।
মিলটি পুনরায় চালু করার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে সংশ্লিষ্ট কারখানার সিবিএ নেতারা আবেদন করেন। আবেদনের একটি অনুলিপি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক বরাবরে প্রেরণ করা হয়। অনুলিপির প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় থেকে উপমহাপরিদর্শকের কার্যালয়, চট্টগ্রামকে অনুরোধ করা হয়। অতঃপর উপমহাপরিদর্শকের কার্যালয়, চট্টগ্রাম থেকে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়। প্রাপ্ত প্রতিবেদনের সার্বিক বিবেচনায় বলা হয় দি এশিয়াটিক কটন মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের সাথে সরকার কর্তৃক মিলটির দায়িত্ব গ্রহণ, শ্রম আইন লঙ্ঘনসহ সঠিক পাওনা নির্ধারণ এবং তা প্রদানের দায়িত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিটিএমসি, প্রাক্তন মালিক ও শ্রমিক পক্ষ জড়িত যা স্পর্শকাতর।
এদিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় মিলটি পুনঃ অধিগ্রহণ করার পর বিটিএমসি মিলের খালি জায়গা, উইভিং, স্পিনিং মিলসহ গুদাম ভাড়া দিয়ে এ যাবত প্রায় দশ কোটি টাকার অধিক আয় করে এক টাকাও শ্রমিকদের প্রদান করেননি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ও বিটিএমসি’র কার্যকলাপের কারণে বর্তমানে কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে জানান শ্রমিক নেতারা। এতে যে কোন সময় অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে সিটি মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বরাবরে প্রেরিত এক পত্রে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত এশিয়াটিক কটন মিল্সের ১২০০ শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া ৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে মিলটি পুনরায় চালুর আহ্বান জানিয়েছেন। অপর এক পত্রে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ মহাপরিদর্শক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের সুপারিশ অনুযায়ী মালিক ও শ্রমিকপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যৌথসভা আহ্বানের মাধ্যমে পুনঃ অধিগ্রহণকৃত ‘দি এশিয়াটিক কটন মিলস্ লিঃ’র শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা আদায় এবং মিলটি চালুর ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র প্রেরিত পত্রটি শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করলে তিনি বিটিএমসি’র চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদনের প্রেরণের নির্দেশনা দিলেও এখনও প্রতিবেদন প্রেরণ করেননি বলে জানান মিলের শ্রমিক নেতারা।
এশিয়াটিক কটন মিল্স শ্রমিক লীগ সভাপতি যদু মোহন দাশ বলেন, ১৯৯৩ সাল থেকে মিলটি লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে- যা এখনও বলবৎ রয়েছে। ১২০০ শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তার বকেয়া পরিশোধ না করায় তারা অর্ধাহারে, অনাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বিগত ২০২১ সালের ১৪ মার্চ প্রেসিডেন্ট বরাবরে আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার কর্তৃক পুনঃ অধিগ্রহণকৃত দি এশিয়াটিক কটন মিল্স লিমিটেডের মরণাপন্ন ১২শ’ শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের প্রাপ্য পরিশোধ ও মিল পুনরায় চালুর বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর। অথচ অদ্যাবধি বকেয়া টাকা পরিশোধ ও মিলটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বর্তমান সরকার শ্রমিকবান্ধব সরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি মিলটি পুনরায় চালু করলে শ্রমিক-কর্মচারীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হবে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন শ্রমিক দরদী। যার কারণে তিনি শ্রমিকদের শোষণের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য ১৯৭২ সালে সমস্ত মিলকারখানা জাতীয়করণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিটিএমসি কর্তৃপক্ষ লোকসানের খাতায় নাম লিখে পুনরায় ১৯৮২ সালে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করে। আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে উক্ত মিলের সব সমস্যার সমাধান হবে।
এশিয়াটিক কটন মিল্স ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ বলেন, মিলটি লে-অফ ঘোষণার ২৯ বছর পরও বকেয়া পাওনা না পেয়ে মিলটির শ্রমিক-কর্মচারীরা চরম অর্থাভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। বকেয়া পাওনা পরিশোধ করে মিলটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিয়ে আসলেও বাস্তবমুখী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন তিনি যেন বকেয়া পাওনা পরিশোধসহ মিলটি পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেন। মিলটি চালু হলে শ্রমিক-কর্মচারীদের মুখে হাসি ফুটবে। তাদের পরিবার-পরিজনের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ