Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মরক্কোর জার্সি কেনার হিড়িক

স্পোর্টস ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কাতার বিশ্বকাপে একের এক চমক সৃষ্টি করেছে মরক্কো। প্রথম আফ্রিকান হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়ে নতুন ইতিহাস গড়েছে দলটি। মরক্কো প্রথম আরব দেশ হিসেবেও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলছে তারা। তাদের এই সাফল্যে প্রশংসার বন্যা বয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। শুধু তাই নয় মরক্কোর সাফল্যের হাওয়া লেগেছে কাতারের জার্সির বাজারেও।

বিশ্বকাপে মরক্কোর অভূতপূর্ব সাফল্য দোহার সোক ওয়াকিফের দোকানদারদের জন্য সুখবর বয়ে এনেছে। ওয়াকিফের প্রায় সব দোকানেই বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জনকারী ৩২টি দেশের পতাকা টাঙানো তো রয়েছেই। ওইসব দেশের পতাকা, জার্সি, শার্ট, স্কার্ফ, শাল, চাবির রিং, পতাকা সংবলিত সানগ্লাস, ব্রেসলেট ও ক্যাপসহ সবকিছুই বিক্রি হচ্ছে। এবার জানা গেলো সেখানে মরক্কোর জার্সি কেনার হিড়িক পড়েছে।

উত্তর আফ্রিকান দলের রেপ্লিকা শার্ট বিক্রি হচ্ছে এবং দিনে দিনে আরও চাহিদা বাড়ছে। টুর্নামেন্টের আগে থেকেই শহরের কেন্দ্রস্থলে আইকনিক মার্কেটের সরু গলিতে সারিবদ্ধ দোকানগুলোতে শোভা পাওয়া পণ্যগুলো আরও নতুন করে সাজানো হচ্ছে। বিশ্বকাপের প্রথম কয়েক সপ্তাহে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও স্বাগতিক কাতার ছিল ফুটবল ভক্তদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। এখন, মরক্কো, যারা গতকাল রাতেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হয়েছে। কি ঘটেছে ম্যাচের ভাগ্যে তা সকলেরই জানা। এই পথপরিক্রমায় তাদেরও সমর্থন বেড়েছে হু হু করে। ব্যবসায়ী মুহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘গত নভেম্বর মাসে, আমার অর্ডার করা কয়েক ডজন থেকে প্রতিদিন কয়েকটি মরক্কোর শার্ট বিক্রি করতাম। কিন্তু সম্প্রতি পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিফাইনালিস্ট হওয়ার কয়েক ঘন্টা পর বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।’ মরক্কো গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট সংগ্রহ করা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে যদিও দলটির জার্সিসহ অন্যান্য পণ্য চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে যায়। নকআউট পর্বে অ্যাটলাস লায়ন্স স্পেন ও পর্তুগালকে হারানোর পর চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবার মরক্কো জিতলে, আমরা আরও কয়েকশ শার্টের অর্ডার দিতাম এবং পরের ম্যাচের দিন বিকেলের মধ্যে বিক্রি হয়ে যেত।’

দলটি সেমিফাইনালে যোগ্যতা অর্জনের পর থেকে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত দোহায় যেতে শুরু করেন। দোহায় পৌঁছানোর পর, তাদের প্রথম পা রাখা হয় সোক ওয়াকিফে। তাদের কেনাকাটার তালিকায় প্রথম আইটেমটি হয় একটি মরক্কোর জার্সি বা শার্ট বা পতাকা। আবার অনেক সময় দুটোই কেনেন মরক্কোর সমর্থকরা। পর্তুগালের বিপক্ষে মরক্কোর জয়ের একদিন পর আনাস এল করিম বার্লিন থেকে এসেছিলেন। ‘আমাকে বলা হয়েছিল যে আমি এখানে আমার দলের জার্সি খুঁজে পাবো, কিন্তু মনে হচ্ছে সবগুলো বিক্রি হয়ে গেছে,’ হতাশা নিয়ে জানালেন তিনি। তবে সাদিক জার্সির স্তূপের মধ্য থেকে তার নতুন গ্রাহকের জন্য একটি জার্সি টেনে বের করলেন।

কেবল মরোক্কানরাই নয়, বরং দোহায় থাকা অনেক স্থানীয় সমর্থকরাও মরক্কোকে সমর্থন জানানো শুরু করেছেন। সাদিকের দোকানে একটি মরক্কোর জার্সি খুঁজতে গিয়ে ইউসুফ আহমেদ নামের এক ভারতীয় ফুটবল দর্শক আল জাজিরাকে জানালেন, ‘আমি মরক্কো সমর্থন শুরু করিনি যতক্ষণ না দেখলাম তারা বড় ইউরোপীয় দলগুলোকে হারাতে শুরু করেছে। আমি অনেক দিন ধরেই তাদের জার্সি খুঁজছি। কিন্তু যতবারই আমি এখানে আসি, জানতে পারি তা বিক্রি হয়ে গেছে। তাই এখন আমাকে পতাকা দিয়েই কাজ সারতে হবে।’

আয়োজক দেশ কাতারের রাস্তাঘাঁট দখল করেছে মাঝখানে সবুজ তারা খচিত উজ্জ্বল লাল রঙের পতাকাটি। আরব বিশ্বের সমর্থকরা স্টেডিয়াম এবং ফ্যানজোনে গর্বনিয়ে মরক্কোর পতাকা ওড়াচ্ছেন। বড় বড় স্কাইস্ক্র্যাপার থেকে, অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দা থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে লালরঙা পতাকা। কাতারে ফিলিস্তিনের পতাকার পরেই সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে মরক্কোর পতাকা। শরফুদ্দিন নামের এক নেপালি কাপড়ের দোকানদার জানান, ‘এমনকি পাকিস্তানি, ভারতীয় আর বাংলাদেশিরাও মরক্কোর পতাকা কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। একদল পাকিস্তানি আর বাংলাদেশি লোক লাল রঙের কাপড় কিনে নিয়ে গিয়ে বাসায় গিয়ে এই পতাকা বানিয়েছেন। মাঝখানের সবুজ তারকাটি খুব একটা ভালো হয়নি। কিন্তু তারপরও ক্রেতারা এটাই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’

কাতার আর ফিলিস্তিনের পতাকার পাশে থাকা মরক্কোর পতাকাগুলোর দিকে নির্দেশ করে ফলেন শরফুদ্দিন। সাদিক, যিনি ৩০ রিয়াল বা ৮ ডলারের বিনিময়ে একেকটি মরক্কোর জার্সি বিক্রি শুরু করেছিলেন, জানান যে, এখন বাজে কোয়ালিটির জার্সিও তিনি অনায়াসে ৫০ রিয়াল বা ১৪ ডলারে বিক্রি করতে পারছেন, ‘আমাদের সাপ্লাইয়াররা জানিয়েছেন বাংলাদেশ আর চীনে কোনো জার্সি আর বাকি নেই। তাই আমাদের হাতে যা আছে, তা-ই দিয়েই লাভ করতে হচ্ছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাতারবিশ্বকাপ২০২২

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ