Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মির্জা ফখরুল-আব্বাস কারাগারে

শুক্রবার রাজধানীতে ৯৩ গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৪ এএম

গভীর রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে তুলে নেয়ার পর গ্রেফতার দেখিয়ে পল্টন থানার মামলায় আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম এ আদেশ দেন। এর আগে, গত শুক্রবার ভোররাত ৩টার দিকে ডিবি পুলিশ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

মির্জা ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম বলেন, ডিবির চারজনের একটি দল বাসায় প্রবেশ করেছিল। বাকিরা নিচে ছিল। যখন তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন জানতে চেয়েছিলাম ওনাকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওরা বলেছে, দুই-তিনটা মামলা হয়েছে। তাই ‘ওপরের নির্দেশে’ তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
রাহাত আরা বেগম বলেন, আমার স্বামী রাতেই বাসায় ফিরেছিলেন। তার শরীরও বেশ খারাপ ছিল। বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পুলিশ সদস্যরা রাত ৩টার দিকে বাসায় ঢুকে সাড়ে ৩টার মধ্যে তাকে নিয়ে যায়। আটকের সময় আমাদের বাসার সামনের রাস্তার বাতি নিভিয়ে ফেলা হয়েছিল।
মির্জা ফখরুলের স্ত্রী বলেন, চার থেকে পাঁচটি গাড়ি নিয়ে রাত ১০টা থেকেই এলাকায় পুলিশের টহল ছিল। পরে রাত ৩টার দিকে তারা দরজা খুলতে বলে। এ সময় প্রহরীরা খুলতে চাচ্ছিল না। তখন তাদেরকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়।
শায়রুল কবির খান বলেন, কাছাকাছি সময় ঢাকার শাহজাহানপুরের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা মির্জা আব্বাসকে তুলে নিয়ে যায়।
এরপর তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে বলে সকালে জানিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ডিবি প্রধান বলেন, বুধবার রাতে বিএনপি কার্যালয়ের ভেতর থেকে ককটেল ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া শনিবার বিএনপির সমাবেশ। এই সমাবেশকে সামনে রেখে কোনো নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে কি না জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে নিয়ে আসা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
১০ ঘণ্টার বেশি সময় পর বেলা আড়াইটার দিকে তাদের দু’জনকেই বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার পল্টন থানায় করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর বিকেলে ৪ টা ১০ মিনিটের দিকে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে সিএমএম আদালতে নেয়া হয়। সেখানে তাঁদেরকে রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। মির্জা ফখরুল ও আব্বাসের আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে জামিনের আবেদন নাকচ করে দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তায় কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপির এই দুই নেতাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৯৩জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর মধ্যে সকাল থেকেই নয়াপল্টন সড়কের নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ¯েøাগান দিলে কয়েকজনকে আটক করা হয়। এছাড়া নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদল নেতা রবিন ¯েøাগান দিলে তাকেও আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
চট্টগ্রাম বিএনপি নেতাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান।
গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশ পরিচালনায় সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী সরকার ফ্যাসিবাদী আচরণের আশ্রয় নিয়েছে। মানুষের ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে ধ্বংসের মাধ্যমে সমগ্র দেশটাকে কারাগারে পরিণত করেছে। নেতা কর্মীদের গ্রেফতার এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কাল্পনিক কাহিনী তৈরী করে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। বর্তমানে সরকারের দুঃশাসনের মাত্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তারা রাতের অন্ধকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে তুলে নিয়ে গেছে। তারা দুইজনই বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা। দেশের এই সম্মানিত দুইজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা ৭১ সালের পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার সংবিধান স্বীকৃত জনগণের অধিকার বাস্তবায়নের পরিবর্তে হুমকি ধমকি ও উস্কানীমূলক যে সব ভাষায় বক্তব্য রাখছেন, তা নিন্দনীয়। তারা দেশকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের জনগণ আজ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। জনগণের এই ঐক্যকে কিছুতেই রুখে দেয়া যাবে না। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার ও হয়রানি করে জনগণকে নেতৃত্ব শূন্য করার কোনো পদক্ষেপই সফল হবে না। জনগণ সম্মিলিতভাবে রাজপথে নেমে তাদের কাঙ্খিত বিজয় ছিনিয়ে আনবে। নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার, জুলুম নির্যাতন বন্ধ করে এবং উস্কানীমূলক বক্তব্য পরিহার করে গ্রেফতারকৃত সকল বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহবান জানান।
ফখরুল ইসলামকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল
ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা জানায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের আমতলী মোড় থেকে শুরু হয়ে বিএনপি অফিসে এসে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে বিএনপি নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন তুহিন বলেন, বিএনপি মহাসচিব ও ঠাকুরগাঁওয়ের কৃতি সন্তান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁকে ছেড়ে না দিলে আরও কঠিন আন্দোলন করা হবে।
এ সময় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নুরুজ্জামান নুর, সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি কায়েসসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ