নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
গ্রুপে বেলজিয়ামের মতো দলকে পেছনে ফেলে মরক্কোর ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় খেলাই ছিল অনেক বড় ব্যাপার। তবে স্বপ্নের পথচলায় তাতে সন্তুষ্ট নয় দলটি। আরেক ফেভারিট স্পেনকে হারিয়ে উঠে গেছে কোয়ার্টার-ফাইনালে। জিয়াশ-হাকিমিদের অভাবনীয় এই অর্জন আনন্দের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে আফ্রিকা ও আরব দেশগুলোতে।
নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় শেষে ফলাফল ছিল গোলশূন্য। পেনাল্টি শুটআউটের রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত। শট নেওয়ার পালা এবার আশরাফ হাকিমির। প্রথমবারের মতো মরক্কোকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তোলার সুযোগ স্পেনে জন্ম নেওয়া এই আটলাস সিংহের সামনে। সেটা আবার জন্মভূমি স্পেনকে হারিয়ে। কাতারের এডুকেশন স্টেডিয়ামে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজটি সেরেছেন হাকিমি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচা মরক্কোর সমর্থকেরা মুহূর্তে গর্জন তোলেন স্টেডিয়ামজুড়ে। মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কার বাসিন্দা ৩৯ বছর বয়সী সাফা। এই ফুটবলপ্রেমী বলেন, মরক্কো এত দূর যাবে, তা ‘আশা করেননি’ তিনি। আল-জাজিরাকে সাফা বলেন, ‘আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত... পরের ম্যাচ আমরা ১-০ গোলে জিতব, ইনশাআল্লাহ।’ গত ১ ডিসেম্বর কানাডার বিপক্ষে মরক্কোর খেলায়ও স্টেডিয়ামে ছিলেন সাফা। এদিনও ঐতিহাসিক ম্যাচটি শুরু হতেই উল্লাসধ্বনি, গান আর ঢোলের শব্দ স্টেডিয়ামের সবকিছু ছাড়িয়ে যায়। মরক্কোর কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা ছিল অসাধারণ এক কীর্তি। সমর্থকদের উল্লাসধ্বনিতে তাই কান ঝালাপালা অবস্থা সবার। সাফা যোগ করেন, ‘স্টেডিয়াম থেকে সমর্থকদের দেওয়া উৎসাহ সম্ভবত খেলোয়াড়দের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের মুখোমুখি হবে মরক্কো।
স্টেডিয়ামের বাইরেও মরক্কান ভক্তদের তীব্র গর্জন তাদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছিল। সেখানে পুরুষদের বাজানো ড্রামের তালে নারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সুর মেলাতে থাকে, যা তৈরি করে এক উৎসবমুখর পরিবেশের। দোহায় বাস করা মরক্কোর নাগরিক তাহার চোখে স্পেনের মতো পরাশক্তির বিপক্ষে তাদের এই জয় বিশেষ কিছু, ‘আমি দুই স্প্যানিশ বড় ক্লাব বার্সেলোনা ও (রিয়াল) মাদ্রিদের খেলা দেখে বড় হয়েছি। তাই স্পেনের মতো একটি শক্তিশালী দলকে হারানো মরক্কোর জন্য অনেক বড় অর্জন।’
মরক্কো তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছে। এর আগে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছিল আটলাসের সিংহরা। এ ছাড়া মরক্কো চতুর্থ আফ্রিকান দেশ ও প্রথম আরব দেশ হিসেবে শেষ আটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। কাতার বিশ্বকাপে ভালো খেলেছে আরও দুই আরব দেশ- সউদী আরব ও তিউনিসিয়া। আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চলতি বিশ্বকাপে প্রথম অঘটন ঘটায় সউদী আরব। আর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে আরেক ‘অঘটনের’ জন্ম দেয় তিউনিসিয়া। তবে দুই দলই শেষ পর্যন্ত প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিলে কাতার বিশ্বকাপে আরব ফুটবলপ্রেমীদের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে টিকে রয়েছে মরক্কো। তাইতো এই উৎসবের আনন্দ কাতার থেকে ছড়িয়ে যায় মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা থেকে শুরু করে ইরাকের বাগদাদ, কায়রো, বৈরুত, তিউনিস, আম্মান, রামাল্লাসহ আরব বিশে^র অসংখ্য শহরে।
মরক্কোর রাজধানী রাবায় ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই ক্যাফেগুলোতে ভিড় জমিয়েছিল ভক্তরা। জয় নিশ্চিত হতেই শহরের কেন্দ্রস্থলের একটি স্কয়ারের দিকে যেতে থাকে মানুষ, ঠিক যেখানে আগের ম্যাচগুলোর পর তারা উদযাপন করেছিল। আনন্দ উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো শহর, আশেপাশের বাড়ির জানালা থেকে পতাকা নেড়ে যোগ দেন অন্যরা। উদযাপনে যোগ দিতে যাওয়ার পথে রয়টার্সকে ফাহাদ বেলবাছির নামের এক ভক্ত বলেন, ‘এই প্রথম এমন অনুভূতি হচ্ছে! আমরা গর্বিত।’ আরব বিশ্বের নেতারা মরক্কোকে তাদের সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। জর্ডানের রানী রানিয়া টুইটারে লিখেছেন, ‘অ্যাটলাস সিংহদের অভিনন্দন, আপনারা আমাদের আনন্দিত করেছেন। ওয়াও মরক্কো, আপনারা আবারও ইতিহাস গড়েছেন!’ ব্রাহিম বেলখিত নামের রাবাতের এক নাগরিকের কাছে এই আনন্দের মাহাত্ম্য এতটাই যে, পুরনো এক শত্রু যাকে অনেক বছর এড়িয়ে চলেছেন তার সঙ্গে সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছেন তিনি। ব্রাহিম বলেন, ‘এই জয় আমাদের পুরনো ঝগড়া ভুলিয়ে দিয়েছে।’ এমন আনন্দের দিনে কোন ঝগড়ার কথা বলছেন ব্রাহিম? উত্তারটা হচ্ছে, মরোক্কোর মূল ভূখন্ডের সেউটা, ম্যালিলিয়া, প্যারোজিল নামে বিশাল কিছু শহর ও অঞ্চল দখল করে রেখেছে স্পেন। সেই আগুনে কিছুটা হলেও যে পানি ঢালা হবে এই জয়ে!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।