নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য সমতায় শেষ হওয়া স্পেন-মরক্কো লড়াইয়ে তখন অতিরিক্ত সময়ও শেষ হওয়ার পথে। ম্যাচ টাইব্রেকারে যাওয়ার আগেই শেষ করতে স্পেন কোচ এনরিকে মাঠ থেকে ক্লান্ত ফুটবলার উঠিয়ে নামালেন সতেজ ফরোয়ার্ড পাবলো সার্বিয়াকে।নেমেই তিনি স্পেনকে প্রায় জয় এনে দিয়েছিলেন।অতিরিক্ত সময়ের একেবারে শেষ মিনিটে তার নেওয়া জোরালো শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে।সেই শট আর ইঞ্চি এদিক-ওদিক হলেই কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যেত পারত '১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা!
সেটি হয়নি। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।স্পেনের হয়ে প্রথম শট নিতে এলেন সেই সার্বিয়াই। মাঠে উপস্থিত হাজারো স্পেন সমর্থককে স্তব্ধ করে সেই শটও ফিরে এল গোলপোস্টে লেগে।পরের দুই শটেও আর মরক্কোর গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেননি স্পেনের খেলোয়াড়রা। উল্টো স্পেনকে পুরো ১২০ মিনিট ঠেকিয়ে রাখা মরোক্কো প্রথম চারশটের তিনটিই জালে জড়িয়ে লিখে ফেলে নতুন ইতিহাস।টাইব্রেকারে ৩-০ ব্যবধানে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের স্বপ্নযাত্রা অব্যহত রাখল আফ্রিকান দেশটি। ফুটবল বিশ্বকাপে এবারই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে মরোক্কো।
২০১০ এর বিশ্বকাপে টিকিটাকা ফুটবল খেলেই বিশ্বজয় করেছিল স্পেন।মাঝমাঠে জাভি-ইনিয়েস্তাদের সাথে আক্রমণভাগের ভিয়া-তোরেসদের দারুণ রসায়নে স্পেন হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য।ম্যাচের পুরোটা সময় বলের উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে তারকা মিডফিল্ডারদের সময়মতো বানিয়ে দেওয়া সুযোগ স্ট্রাইকাররা ঠিকঠাক কাজে লাগিয়ে দলকে জয় এনে দিতেন নিয়মিত।নিজেদের কাজটা মাঠে সব খেলোয়াড় ভালোভাবে করার ফলে সেই সময় স্পেনের টিকিটাকা ফুটবল হয়ে উঠে সুপারহিট।
তবে বর্তমান যুগের টোটাল ফুটবলের সাথে স্পেনের এই কৌশল কেমন যেন পেরে উঠছিলনা।বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে ফুটবল যে গোলের খেলা স্পেন ইদানীং কালে ব্যাপারটা প্রায় ভুলতে বসেছিল।
গতকাল কাতারের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে মরক্কোর বিপক্ষে দুই ঘন্টার অধিক সময় ধরে চলা সেকেন্ড রাউন্ডের লড়াইয়ে গাভি-মোরাতারা প্রায় ৮০ শতাংশ সময় বল নিজেদের দখলে রেখেছিল। মিনিটের হিসেবে যেটি প্রায় ৯০ মিনিট,অর্থাৎ একটি পূর্ণ ম্যাচের সমান।এত লম্বা সময় বল দখলে রেখেও স্পেন গোল দেওয়া তো দূরের কথা অন টার্গেট শট নিতে পেরেছে কেবলমাত্র একটি!
ম্যাচের ৫৫তম মিনিটে আসে সেই শটটি। বক্সের বাইরে বাঁ দিকে ফ্রি-কিকে ছোট করে পাস দেন আসেনসিও, আর ওলমোর সোজাসুজি শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক ইয়াসিন বোন।
পুরো ম্যাচের রক্ষণ সামলানোর কাজে ব্যস্ত মরক্কোও থেকে থেকে যায় আক্রমণে।তবে সফল হয়নি।আর এরপর মাচে ভাগ্য নির্ধারণে চলা টাইব্রেকারের অনবদ্য পারফরমম্যান্সে রূপকথার জন্ম দেয় বিশ্বকাপের টিকে থাকা একমাত্র মুসলিম দেশটি।