Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোগ প্রতিরোধে টমেটো

প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৭ এএম, ২০ জানুয়ারি, ২০১৬

শীতকালীন সবজির মধ্যে টমেটো সবার নিকট অতি পরিচিত, জনপ্রিয়। খাদ্যগুণে ও পুষ্টিকর। বাংলাদেশে শীতকালে ব্যাপকভাবে চাষ হয় এবং বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। টমেটোর বৈজ্ঞানিক নাম খুপড়ঢ়বৎংরপড়হ বংপঁষবহঃঁস উদ্ভিদ জগতের ঝড়ষবহধপবধব গোত্রের বর্ষজীবী বীরুদ জাতীয় উদ্ভিদ।
রাসায়নিক উপাদান : ফলে থাকে ট্রিপ্টোফ্যান ছাড়া সবগুলো অত্যাবশ্যক অ্যামাইনো এসিড এবং জৈবএসিড সাইট্রিক এসিড, অক্সালিক ও ম্যালিক এসিড। রঞ্জক পদার্থ ক্যারোটিনয়েড, বিটা- ক্যারোটিন ও লাইকোপেন। তাছাড়া ফলে প্রচুর প্ররিমাণ ভিটামিন এ, সি ক্যালসিয়াম থাকে। পরিপক্ব পলে থাকে গøকোজ, ফ্রুকটোজ। পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী পাকা টমেটোতে পুষ্টি উপাদান নিম্নরূপ-
খাদ্য শক্তি ২০ কিলোক্যালরি, আমিষ ০.৯ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, ফসফরাস ৩৬ মি.গ্রাম, পটাশিয়াম ১১৪ মি.গ্রাম, আঁশ ০.৭ গ্রাম, শর্করা ৩.৬ গ্রাম আয়রন ১.৮ মি.গ্রাম, নিকোটিনিক এসিড .০৪ মি.গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৮ মি. গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৫গ্রাম, বি-১ (থায়ামিন) ০.১২ মি.গ্রাম, বি-২ (রিবোফ্লবিন) ০.৩৬ মিলিগ্রাম, সি ৩১ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ ৩৫১ মাইক্রোগ্রাম। কাঁচা টমেটোতে পাকা টমেটোর চেয়ে প্রোটিন, ভিটামিন সি, খনিজ লবণ, লৌহ, খাদ্যশক্তি বেশি থাকে। অপর দিকে পাকা টমোটোতে কাঁচা টমেটোর চেয়ে ভিটামিন এ, বি-১ বি-২, ক্যালসিয়াম বেশি থাকে। ভিটামিন এ আমাদের চোখের সবচেয়ে বেশি কাজ করে। দৃষ্টি শক্তিকে সবল রাখে। রোডপসিন নামক এক ধরনের দর্শন সংক্রান্ত রঞ্জক পদার্থ তৈরি করে। যা অন্ধকারে দেখতে সাহায্য করে। ভিটামিন ‘এ’ অভাবে শিশুদের মধ্যে রাতকানা রোগ দেয়া দেয়। এতে শিশু রাতের বেলায় দেখতে পায় না। মারাত্মক অভাবে অন্ধ হয়ে যায়। ভিটামিন ‘এ’ অভাবে মাথার চুল ঝরে যায় এবং মুখের উজ্জ্বলতা কমে যায়। মহিলাদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা কমে যায়। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ভিটামিন ‘সি’র অভাবে সর্দি, কাশি ঘন ঘন দেখা দেয়। দাঁত ও মাড়িতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। চামড়ার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। মুখে ঘা হয় শরীর দুর্বল ও সংক্রমণের প্রবণতা বেড়ে যায়। শরীরে আয়রণ শোষণে অসুবিধা হয়। ফলে রক্তের হিমোগেøাবিন তৈরিতে বিঘœ ঘটে। টমেটোতে খুবই পটাশিয়াম পাওয়া যায় উচ্চ রক্ত চাপ ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী। রক্তের উচ্চ চাপ কমিয়ে আনে। টমেটো সেবনে মানব দেহে নানা রোগের হাত থেকে রক্ষা পায়। টমেটোতে লাইকোপেন নামক একটি রঞ্জক পদার্থ থাকে। যে কারণে টমেটো পাকলে টকটকে লাল হয়। এই লাইকোপেন মানব দেহের প্রোস্টেট, ফুসফুস ও পাকস্থলীর ক্যান্সার কমিয়ে দেয়। টমেটোর এই লাইকোপেন পুরুষের শুক্রানু বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করে। ফলে বাবা হওয়ার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তবে জানার ব্যাপার যে কোন সবজি রান্না করলে তার খাদ্য উপাদান বা পুষ্টিগুণ কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু টমেটো রান্না করলে তার মধ্যে থাকা লাইকোপেনের পরিমাণ প্রায় চার গুণ বেড়ে যায়। এর কারণ হলো লাইকোপেন পানিতে অদ্রবনীয় এবং তা সবজি আঁশের সাথে শক্তভাবে যুক্ত থাকে। তাই রান্না করে খেলে ও আমরা প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান পেতে পারি। তাছাড়া টমেটোর নানা ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে যা নি¤েœ বর্ণনা করা হলো : * টমেটোর লাইকোপনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এটি উচ্চরক্ত চাপ কমিয়ে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
* যারা সবসময় রোগা অবস্থায় থাকেন বা দুর্বল লাগে তারা সকাল-বিকাল পাকা টমেটো সালাদ করে খান বা রস খান উপকার পাবেন।
* যাদের চামড়ায় নানা রোগ আছে বা মসৃণতা কমে গেছে। তারা টমেটো সালাদ করে অথবা রস খান উপকার পাবেন। * যাদের পায়খানা কম হয় বা শক্ত হয় তারা সকাল-বিকাল দুই/এক টা টমেটো কামড়িয়ে খান। সমস্যা কমে আসবেন।
* যাদের বুকের ব্যথা ও হার্টের সমস্যা আছে তারা অর্জুন গাছের ছালের রস ও টমেটোর রস নিয়ে তাতে সামান্য চিনিমিশিয়ে খান বেশ উপকার পাবেন।
* যাদের মুখে অরুচি ও খিদে কম পায় তারা টমেটো টুকরো টুকরো করে কেটে তাতে শুকনো আদার গুঁড়ো ও সামান্য মিশিয়ে খান বেশ উপকার পাবেন। * নিয়মিত টমেটো খেলে পাকস্থলি ও অন্ত্র সুস্থ ও সবল থাকে।
* টমেটো মূত্রথলির অমøতাকে নিরপেক্ষ রাখতে সাহায্য করে। ফলে মূত্রাশয়ের সংক্রামণ ও পাথর তৈরি হয় না।
* ফ্যাকাশে চেহারার লোকেরা বা যাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ কম তারা প্রতিদিন বড় মাপের একটি পাকা টমেটো নিয়মিত খান বেশ উপকার পাবেন। * গর্ভবতী মা ও যাদের বাচ্চা হয়েছে তারা নিয়মিত টমেটো খান শারীরিক ও মানসিক শক্তি বাড়বে। যা মা ও বাচ্চার খুবই উপকার হবে।
* যাদের শরীরের ওজন খুবই কম আর যাদের বেশি তারা নিয়মিত টমেটো খান ওজন বাড়বে এবং বেশি ওজন কমবে। * যাদের অর্শ্ব, জন্ডিস, পুরনো জ্বর আছে তারা নিয়মিত টমেটো খান উপকার পাবেন।
* যাদের পেটে গ্যাস জমা হয়, হজম কম হয় তারা টমেটো খান সমস্যা কমে আসবে।
* যাদের বারবার পিপাসা লাগে বা গলা শুকিয়ে যায় তারা টমেটোর রস লবঙ্গ চ‚র্ণ (লং)-এর সাথে চিনিমিশিয়ে খান উপকার পাবেন। * ছোট বাচ্চাদের দিনে তিনবার অল্প করে টমেটোর রস খাওয়ালে বাচ্চা নিরোগ ও সবল দেহ নিয়ে গড়ে ওঠে।
ষ মো. জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিয়ষক লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ,
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোগ প্রতিরোধে টমেটো

২০ জানুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন