নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিগত ১৬ বছর ধরেই একটি বিশাল হতাশা ছিল আর্জেন্টিনা দলের ফুটবল সমর্থক এবং লিওনেল মেসির। বিশ্বকাপের নকআউটে যে গোল ছিল না ৭ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর। অবশেষে সেই আক্ষেপের সুন্দর পরিসমাপ্তি ঘটল কাতারের আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়ামে। পরশু মধ্যরাতে বিশ্বকাপের শেষ ষোলর ম্যাচে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের আগে বহু আত্মবিশ্বাসের ফুলঝুড়ি উড়িয়েছিলেন সকারু ম্যানেজার গ্রাহাম আরনল্ড। সেই কথাগুলোই ম্যাচে ‘চাপের বারুদ’ হয়ে ধাওয়া করছিল স্বয়ং অস্ট্রেলিয়া দলকেই। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হবার ১০ মিনিট আগে, বাঁ পায়ের বাঁকানো মাটি কামড়ানো শটে দুই দলের ব্যবধান গড়েন মেসি। নকাউটের আরাধ্য গোলের জন্য ‘এলএম১০’ বেঁছে নিয়েছিলেন দু’টি বিশেষ মালফলকের ম্যাচকে! প্রথমমত ম্যাচটি ছিল এই ৩৫ বছর বয়সির বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের হাজারতম, এবং একই সঙ্গে অধিনায়ক হিসেবে আলবিসেলেস্তা জার্সিতে শততম। এমন একটা বিশেষ রাতে মেসিকে থামাতে পারে সাধ্য কার! ব্যর্থ অস্ট্রেলিয়াও। ‘ম্যাচের আগে বড় কথা বলা’ সকারুরা খেলায় করল হাস্যকর সব ভুল। তাতেই তারা ম্যাচটা হেরে বসে ২-১ গোলে।
ম্যাচ শেষে সকারু বস আরনল্ডের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হতেই পারে। একেতো ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনাকে হারানোর হুমকি দিয়েছিলেন এই কোচ। অন্যদিকে ম্যাচে তার দলের গোলরক্ষক খেললেন পাড়ার বৈকালিক ফুটবল। প্রতিপক্ষে যখন মেসি-আলভারেজ-ফার্নান্দেজের মত ফুটবলারা খেলেন, তখন অন্তত গোলবারের নিচে নিম্নমানের হতজোড়া দিয়ে ম্যাচ জেতার স্বপ্ন দেখা যুক্তিহীন। স্টেডিয়াম ভরা ৪৫ হাজার দর্শক প্রথমার্ধে দেখলেন কেবল মেসি ম্যাজিক ও সকারু গোলরক্ষক ম্যাথিও রায়ানের হাস্যকর কৌশল। সকারু ফুলব্যাক আজিজ বেহিচ ৩৩তম মিনিটের দিকে সাইডলাইনে মেসির কাছ থেকে বল কেড়ে নিতে গিয়ে একটু বাড়াবাড়িই করলেন। জার্সি টেনে ধরলেন, করলেন দুর্ব্যবহার। আবেগ নিয়ন্ত্রণে পটু মেসি সেই বাজে আচরণের পর তেতে গেলেন। মিনিটখানেক পরই বাঁ পায়ের সেই জাদু।
ডান প্রান্তে, কর্নার ফ্ল্যাগ আর সাইড লাইনের খানিক সামনের জায়গায় ফ্রি-কিক নেন মেসি। অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণের খেলোয়াড় হেডে বলটা ফেরালেও ক্লিয়ার করতে পারেননি, বল চলে যায় আলেক্সিস ম্যাক আলিস্টারের কাছে, তিনি দ্রুত বল দিয়ে দেন মেসির কাছে। তার সঙ্গে ওয়ান-টু পাসে ততক্ষণে মেসি ঢুকে পড়েছেন বক্সের ভেতর। ১৫ গজ দূর থেকে মেসির জাদুকরী বাম পায়ের শট তিন জন অস্ট্রেলিয়ান রক্ষণ প্রহরীর ফাঁক দিয়েও ঠিকই খুঁজে নেয় কাক্সিক্ষত গন্তব্য। ম্যাথু রায়ান ডান দিকে ঝাঁপিয়েও বাঁচাতে পারেননি গোল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মেসির প্রথম গোলপোস্টে শট, প্রথম শটেই গোলের দেখা। যে গোলটা বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে মেসির প্রথম ও সব মিলিয়ে নবম গোল। এই গোলে ডিয়াগো ম্যারাডোনাকে বিশ্বকাপের গোল সংখ্যায় ছাড়িয়ে গেলেন মেসি, ১০ গোল নিয়ে সামনে কেবলই গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। একই সঙ্গে পেশাদার ক্যারিয়ারেও এটা মেসির ৭৮৯তম গোল।
বিরতির পর ডি মারিয়ার জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া পাপু গোমেজও চোটের কারণে উঠে যান। বদলি হিসেবে আর্জেন্টাইন বস নামালেন বাড়তি ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্তিনেসকে। রোমেরো আর ওতামেন্দির পাশে লিসান্দ্রো । তাতেই আর্জেন্টিনার রক্ষণ অটুট। বাকি সাতজন নিয়ে আক্রমণের ধার আরো বাড়ালো আর্জেন্টিনা। এক গোলে এগিয়ে থাকা নিশ্চিন্ত ফরোয়ার্ড লাইন প্রেস করা শুরু করল পূর্বের তুলনায় বেশি। অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপার ম্যাট রায়ান ওতেই কাবু। রদ্রিগো দি পল আর আলভারেসের প্রেসের ফলে আরো একবার ভুল করলেন গোলরক্ষক রায়ান। আলভারেজ তুলে নিলেন আসরের দ্বিতীয় গোল।
এরপরই অস্ট্রেলিয়া নড়েচড়ে বসে। ডিফেন্ডাররা সাহসী ফুটবল খেলা শুরু করে। আক্রমণের ধারা থাকে অটুট। বক্সের বাইরে থেকে আচমকা শটও নিচ্ছিল অনেকে। এমন এক আক্রমণে গুডউইনের এক শট ফার্নান্দেসের গায়ে লেগে দিক বদলে ঢুকে গেল জালে! ব্যস, আবারও আর্জেন্টাইন সমর্থকদের বুক ধরফর শুরু হলো! তবে ম্যাচে ফিরতে পারেনি সকারুরা।কারণ ম্যাচের শেষ পর্যন্ত মেসি প্রতি আক্রমণ বহাল রাখেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যেকটা খেলোয়াড়কে নাচিয়ে ছেড়েছেন শেষ মিনিটগুলোয়। বল বানিয়ে দিচ্ছিলেন লাওতারো মার্টিনেজকে। ইন্টার স্ট্রাইকার দুই-একবার গোলের কাছাকাছি গিয়ে ব্যর্থ হলেন। তাতেই বেরিয়ে আসল প্রথাগত আর্জেন্টাইন সমর্থকদের রূপ। পূর্বসূরি হিগুয়েন ও আগুয়েরর পর এবার মার্টিনেজ রোষালনে পড়লো আলবিসেলেস্তা সমর্থকদের। তাতে অবশ্য ফলাফলে বদল আসেনি। মেসি যে ডি পল, আলভারেজ, ফার্নান্দেজ ও লিসান্দ্রোর সহায়তায় সবুজ মাঠকে বানিয়ে ফেলেছেন ছবি আঁকার ক্যানভাসে। স্কালোনির টোটাল ফুটবল মন্ত্রে আর্জেন্টিনা উঠে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে। লুই ফন গালের নেদারল্যান্ডস অপেক্ষায় আছে তাঁদের।
ম্যাচ শেষে হবার সঙ্গে সঙ্গে মেসি জড়িয়ে ধরলেন ডি পল ও লিসান্দ্রোকে। কারণ ম্যাচটা তারা জিতেছে এক গোলের ব্যবধানে। আর তাতে ডি পলের অসামান্য অবদান দ্বিতীয় গোলে। অন্যদিকে সব আয়োজনই তো বৃথা হয়ে যেত। যদি লিয়াসান্দ্রো ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে ট্যাকেল করে, বেহিসের বল না থামাতেন, তবে নিশ্চিতভাবে সেই বল চুমু খেতো জালে।
আজকের খেলা
জাপান-ক্রোয়েশিয়া, রাত ৯টা
ব্রাজিল-দ.কোরিয়া, রাত ১টা
সরাসরি : বিটিভি/জিটিভি/টি স্পোর্টস
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।