বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আবু হেনা মুক্তি : উপকূলীয় অঞ্চল বঙ্গোপসাগর, সুন্দরবন ও কয়েকটি বড় নদ-নদীর অববাহিকায় হওয়ায় প্রতি বছর এখানে মেলে অতিথি পাখির মিলনমেলা। খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন জলাশয়ে ও মৎস্য ঘেরে শুরু হয়েছে অতিথি পাখি শিকারের মহোৎসব। প্রতি বছর শীত এলেই হাজার হাজার মাইল থেকে উড়ে আসা এই মেহমানদের নির্দয়ভাবে সুযোগ সন্ধানীরা শিকার করে কেউ আর্থিকভাবে লাভবান হয় আবার কেউ রসনার তৃপ্তি মিটায়। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, তালা, পাইকগাছা, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, রূপসা, তেরখাদা, মোড়লগঞ্জ, কচুয়া কয়রা এবং কালিগঞ্জ, কুশলিয়া, শ্যামনগর, আশাশুনি, তালা প্রভৃতি উপজেলার শিকারিরা পাখি নিধনে তৎপর হয়ে উঠেছে। নৌকা, জাল, বড়শী বিভিন্ন ফাঁদ, বন্দুক, অচেতন ঔষধসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে পাখি শিকারে। প্রশাসনের কতিপয় সদস্যদের পরোক্ষ সহযোগিতায় স্থানীয় হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্পটে অতিথি পাখি বেচা-কেনা হচ্ছে। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের ঘের ধান ক্ষেত খাল, বিল, নদী নালাসহ বিভিন্ন জলাশয়ে শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় সুদূর সাইবেরিয়া, কাজাকাস্তান হিমালয়সহ বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখি এসে থাকে। প্রকৃতির ভারসাম্য ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় অতিথি পাখির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। পাখিপ্রেমিকরা অতিথি পাখি আগমনের অধির অপেক্ষায় থাকেন। অথচ এক শ্রেণির মানুষ অতিথি পাখিদের হত্যা করছে। যা সভ্য সমাজের জন্য কাম্য নয়। আমাদের দেশে রাজহংস, চখাচখি, মানিকজোড়, বিভিন্ন জাতের হাঁসপাখি, কাচিচোরা, নানান প্রজাতির বাটান, ধলবগনি, শেতকাক, পেলিকেন, পানকৌড়ি, কাদা খোচা, বালিহাঁস বকসহ প্রায় দেড় শত প্রজাতির হাজার হাজার পাখির আগমন ঘটে। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এদের শিকার ও হত্যা করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশ-বান্ধব এসব পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এসব অতিথি পাখি বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারে। পাখি শিকার ও নিধন বন্ধে আইন থাকলেও এর কার্যকরী ভূমিকা না থাকায় শিকারিদের তৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে সাধারণ মানুষদের অভিযোগ। কালিগঞ্জের তরুণ সমাজসেবী ও বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির কালিগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল কাশেম ইনকিলাবকে বলেন, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখি শিকার বন্ধে সামাজিক আন্দোলন আজ বেশি প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের অঞ্চলের মৎস্য ঘেরগুলোতে অতিথি পাখি বিচরণের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছি।
এদিকে, বাগেরহাটের ফকিরহাট, মোলাহাট, খুলনার রূপসা, ডুমুরিয়ার চুকনগর ও খর্নিয়ায় এবং তালায় রীতিমত নির্দিষ্ট দিনে সকাল-সন্ধ্যায় পাখির হাট বসে। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাখি বিক্রেতারা বিভিন্ন কৌশলে লুকিয়ে পাখি এনে শহরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে চড়া দামে বিক্রি করছে। এসব পাখি বিক্রেতাদের কাছ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও পাখি কিনছে বলে এক পাখি বিক্রেতা জানান। ফলে অতিথি পাখি কেনা-বেচা এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। বেসরকারি সংস্থা কেএমএসএস এর এক বিশেষ জরিপ থেকে জানা যায়, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের মৎস্য ঘেরগুলো মূলত পাখি বিচরণের বিশেষ ক্ষেত্র। এ অঞ্চলে রয়েছে হাজার হাজার মাছের ঘের। যেখানে নতুন পানি তুললে পাখির আনাগোনা বাড়ে। আর শীতের শুরুতেই বিদেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসে। এছাড়া এ অঞ্চলের মরা নদীগুলো এবং বিভিন্ন নদীর জেগে ওঠা চরে প্রতি বছর এ রকম সময় পাখি আসে। আর চোরা শিকারদের হাতে শত শত হাজার পাখি ধরা পড়ে। পাখি শিকার বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও কোনো ভূমিকা রাখছে না। রাজনৈতিক নেতারা খবর রাখে না। প্রশাসন দেখেও দেখেনা। বরং সমাজের এই বিবেকরাই সুযোগ পেলে পাখি কিনে রসনার তৃপ্তি মেটায়। বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির মহাসচিব মো: আজগর হোসেন ইনকিলাবকে জানান, জনসচেতনতা ছাড়া অতিথি পাখি নিধন রোধ করা সম্ভব নয়। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও তা প্রয়োগ করছে না। তিনি এ ব্যাপারে সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সুন্দরবন বিভাগের বন্যপ্রাণী দফতরের সূত্র জানায়, প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের মার্চ পর্যন্ত ধানসহ অন্যান্য ফসলও উত্তোলন শেষ এবং পানি কমে যাওয়ায় বিলগুলোতে অতিথি পাখির বিচরণ বেশি থাকে। এ সুযোগে চোরা শিকারিরা তৎপর হয়ে ওঠে। তারা পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্র এবং স্থানগুলোতে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে। পরে তা প্রকাশ্য ও গোপনে মোটা অঙ্কের অর্থে বিক্রি করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।