নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্বপ্নের মতো এক ম্যাচই এদিন খেলেছে আর্জেন্টিনা। রাস আবু আবুদের মাঠে নিখুঁত লম্বা পাস, বাতাসে ভাসানো ক্রস, বল কন্ট্রোল, প্ল্যানড অ্যাটাক ও কনিফেডেন্ট ডিফেন্স- সবকিছুতেই আর্জেন্টিনার মুন্সিয়ানা ছিল এক চেটিয়া। লিওনেল মেসি-ডি মারিয়াদের অপূর্ব ফুটবল শৈলী দেখে এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল যেন এটা বাস্তবের মাঠের কোনো ফুটবল নয়, নতুন প্রজন্ম যেন কম্পিউটারে ভিডিও গেমসের ফুটবল খেলছিল। আর্জেন্টাইন ফুটবলে একসময় এমন পাসের ফুলই ফোটানো হতো। পাসের পর পাস খেলে খোলা হতো প্রতিপক্ষের গোলমুখ। সেই ধাঁচ আর্জেন্টাইন ফুটবল বেশ আগেই পেছনে ফেলে এসেছে।
লাতিন দেশটি এখন অনেক বেশি ‘ডিরেক্ট ফুটবল’ খেলে। তবে স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ যে খাঁদের কিনারে দাঁড়িয়ে দল, দিতে হবে মরন কামড়! এমন সময় সেই পুরনো চালেই বাড়ল ভাত। শঙ্কা কাটিয়ে ২-০ ব্যবধানে পোল্যান্ডকে হারিয়েই আর্জেন্টিনা নিশ্চিত করল শেষ ষোলর মঞ্চ। তবে ম্যাচে চাঁদের কলঙ্ক হয়ে থাকল অধিনায়ক মেসির পেনাল্টি মিস। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে দুটি পেনাল্টি মিস করলেন বিশ্ব ফুটবলের সবচাইতে বড় এই তারকা।
মুহূর্তটা নিশ্চয়ই স্তব্ধ করে দিয়েছিল আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। কর্নার থেকে আসা বল আটকাতে গিয়ে নাগাল পাননি পোলিশ গোলকিপার ভয়চেক শেজনি। বিপদজনক জায়গায় উড়ে আসা বলটি খুঁজে পেয়েছিল মেসির মাথা। বিপদ বুঝে পাঞ্চ করে বসেন শেজনি। তাতেই বাধে বিপত্তি। তার গ্লাভসের কোনা আঘাত হানে মেসির চোখে। লুটিয়ে পড়েন মেসি। পেনাল্টি দেন রেফারি। স্টেডিয়ামজুড়ে উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা। গোলমুখ বুঝি এবার খুলছেন মেসিই। সেজনির বাঁ দিকে শট নিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। সম্ভবত আগে থেকে বুঝতে পেরেই বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ দক্ষতায় শটটি রুখে দেন সেজনি! স্তব্ধ হয়ে যায় ইস্পাতের স্টেডিয়াম-৯৭৪। হতাশায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন গত আসরেই পেনাল্টি মিস করা এই গোলমেশিন। নিজের ওপর রাগও করতে দেখা গেছে। কিন্তু আগের মতো চোখে-মুখে রাজ্যের অন্ধকার নামিয়ে ফেলেননি। বরং ক্ষণিকের জন্য পরিহাসের হাসিই ফুটিয়ে তুললেন মুখে। যে হাসিতে ছিল দ্রুতই নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা।
লিওনেল মেসি নিজেকে সামলেছেন, গোলের সুযোগ নষ্টের হতাশা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আর্জেন্টিনাও। কণ্টকাপূর্ণ পথ পেরিয়ে আর্জেন্টিনা এখন শেষ ষোলয়। তবে ম্যাচের পর মেসির প্রতি অবধারিত প্রশ্ন ছিল সেই পেনাল্টি মিস নিয়েই। ২০১৮ বিশ্বকাপে আইসল্যান্ডের বিপক্ষেও পেনাল্টি মিস করেছিলেন। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের আক্ষেপ, রাশিয়ায় মেসি সেদিন গোল করতে পারলে ১-১ সমতায় থাকতে হতো না আর্জেন্টিনার, গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের সামনে পড়ে বিদায়ও নিতে হতো না।
এবার শেষ ষোলোয় ওঠার জন্য পোল্যান্ডের বিপক্ষে গোল যখন খুব প্রয়োজন, তখন মেসির আরেকটি পেনাল্টি মিস আবারও বিপদ ডেকে আনল কি না- এমন আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল টুইটার-ফেসবুকে। বিশেষ করে দলের বাকিরা যদি মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়তেন? মেসি জানালেন, ঘটনা উল্টোটা ঘটেছে। পেনাল্টি মিসের পরই বরং গোলের জন্য দল আরও বেশি করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, ‘পেনাল্টিটা মিস করে আমার এখনো রাগ হচ্ছে। তবে ওই ভুলের পরই কিন্তু দলের মনোবল বেড়েছে। সবার মনে এই বিশ্বাস জন্মেছে যে আমরা জিততে পারব। যে কোনো মুহূর্তে গোল চলে আসবে। আর প্রথম গোলটা চলে আসার ম্যাচটা আমরা যেভাবে চেয়েছি সেভাবেই এগিয়েছে।’
পেনাল্টি মিস করলেও ম্যাচটিতে অবশ্য ভালো অবদানই রেখেছেন মেসি। ৭০টির মধ্যে ৫৯টি পাস পৌঁছেছে জায়গামতো, শট নিয়েছেন ৭টি, সুযোগ তৈরি করেছেন ৫টি আর ড্রিবলও করেছেন ৬ বার। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ফুটবল পরিসংখ্যান হালনাগাদ করা অপটার তথ্য বলছে, ৩৫ বছর ১৫৯ দিন বয়সী মেসিই বিশ্বকাপের এক ম্যাচে ৫+ সুযোগ তৈরি এবং ৫+ ড্রিবল করা সবচেয়ে বেশি বয়সের খেলোয়াড়। এর আগের রেকর্ডটা ১৯৯৪ বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে খেলা ডিয়াগো ম্যারাডোনার।
মেসির গোল বা গোলে সরাসরি সহায়তা না থাকা ম্যাচটিতে দুটি গোলই করেছেন দুই তরুণ। ম্যাক আলিস্টার এবং আলভারেস দুজনের এটি ছিল বিশ্বকাপে প্রথম গোল। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসি জানান, তরুণদের দায়িত্ব নিতে পারাই তার দলের মূল শক্তি, ‘শুরু থেকেই বলে আসছি, যারা দলে আসছে তারা জানে কী করতে হবে। সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়েই আসে ওরা। এটিই এই দলটির শক্তির জায়গা। ঐক্যবদ্ধ থাকা আর দরকারের সময় সাড়া দেওয়া।’
এমন এক দিনে একজন ঠিকই ফের জড়িয়ে থাকলেন মেসিদের ম্যাচে। এই ম্যাচ খেলে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ম্যারাডোনার (২১) রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছেন মেসি (২২)। ম্যারাডোনার রেকর্ডটি সম্পর্কে কিছুদিন আগে জেনেছেন মেসি। চারটি বিশ্বকাপ খেলা কিংবদন্তিকে স্মরণ করে মেসি বলেছেন, ‘এটা কিছুদিন আগে জেনেছি। এমন সব রেকর্ড ভেঙে এগিয়ে চলা আনন্দের বিষয়। আমার মনে হয় ডিয়েগো খুব খুশি হতেন। তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। আমার সবকিছু ভালোমতো এগোলে খুশি হতেন।’
দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় আগামীকালই রাত ১টায়। এএফসিতে খেলা দলটি র্যাঙ্কিংয়ে সামনের দিকে (৩৮তম) না থাকলেও আর্জেন্টিনাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে বলে মনে করেন মেসি তাইতো পোল্যান্ড ম্যাচ শেষেই ‘ফ্যামিলি রিইউনিয়ন’ শেষে গতকালই অনুশীলন করেছে দল।, ‘ম্যাচটি খুবই কঠিন হবে। যে কেউ অপর দলকে হারিয়ে দিতে পারে। সবাই এ ক্ষেত্রে সমান। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের জন্য আমাদের ভালো প্রস্তুতি দরকার।’ সউদীর কাছে হারের পরও যেভাবে পাশে থেকে উৎসাহ জুগিয়েছে, নকআউট পর্বেও আর্জেন্টিনার প্রতি ভক্তদের প্রতি এভাবেই আস্থা রাখার অনুরোধ জানিয়ে মেসি মেসি বলেছেন, ‘ভক্তদের সেই একই কথা বলছি, যেটা আমরা হার দিয়ে শুরুর পর বলেছিলাম। আমরা শান্তই আছি। দল এভাবেই খেলবে এবং আশা করি এমন খেলাটা ধরে রাখতে পারব।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।