এক ব্যাতিক্রমী ফুটবল বিশ্বকাপের উদ্বোধন দেখল বিশ্ব। যেখানে বিশ্বকাপ শুরু হলো পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে। এছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও কোনো নারী শিল্পীকে দেখা যায়নি। সম্ভবত প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপের সূচনা হলো কুরআনের আয়াত দিয়ে।
গতকাল রোববার রাতে ফিফা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাতারের বেদুইন শিকড় প্রদর্শন করা হয়েছিল। দেশটির আমির যখন বিশ্বকাপের উদ্বোধন করেন, তিনি তার বাবার হাতে চুম্বন করেন এবং বিশ্বকে ফুটবলের সবচেয়ে বড় ইভেন্টে স্বাগত জানান। প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে মঞ্চস্থ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই আসর।
শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেন, 'কাতার বা আরব বিশ্ব থেকে আমি সবাইকে ২০২২ সালের বিশ্বকাপে স্বাগত জানাই। এটি কত সুন্দর যে লোকেরা তাদের বৈচিত্র উদযাপনের জন্য তাদের বিভক্ত করে এবং কী তাদের একত্রিত করে তা একপাশে রাখতে পারে।'
এরপর আল বায়ত স্টেডিয়ামের ছাদ থেকে আতশবাজি বিস্ফোরিত হয়। তবে যা বিশ্বকে আকর্ষণ করেছিল এবং দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল তা হলো ২০ বছর বয়সী কুরআন তেলাওয়াতকারী ঘানিম আল মুফতাহ। তিনি ফিফা বিশ্বকাপের রাষ্ট্রদূতও।
ঘানিম যে আয়াত তেলাওয়াত করেন তার অর্থ হলো- 'হে মানবজাতি, সত্যিই আমি তোমাদেরকে পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে জাতি ও গোত্রে পরিণত করেছি। যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো।'
ঘানিম একটি বিরল রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যা নিম্ন মেরুদণ্ডের বিকাশকে ব্যাহত করে। অস্কার বিজয়ী অভিনেতা মরগান ফ্রিম্যানের সঙ্গে তিনি মঞ্চে উপস্থিত হন। এরপরই নেটিজনরা সোস্যাল মিডিয়ায় কাতারের প্রশংসা করছেন। এছাড়া অনেকেই ইসলামের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন।
সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট মেহেদী হাসান পলাশ নামে একজন লিখেছেন, বিশ্বকাপ ফুটবল- ২০২২ উদ্বোধনের মাধ্যমে কাতার এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করেছে। এই প্রথম মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ, এই প্রথম কোনো আরব দেশে এবং এই প্রথম কোনো মুসলিম দেশে বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে কাতার ইসলামিক সংস্কৃতি ও ইতিহাস এবং ইসলামের বাণী প্রচার করার যে অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা ইতোমধ্যেই সমগ্র মুসলিম বিশ্বে প্রশংসিত হতে শুরু করেছে। মুসলিম বিশ্বের নেট দুনিয়ায় কাতারের এই আয়োজন ইতোমধ্যেই ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামিক তাহজিব- তমুদ্দুন ও আকিদার ক্ষেত্রে নিরাপোস অবস্থান গ্রহণ করায় পাশ্চাত্য দুনিয়ার ব্যাপক সমালোচনা এবং অনেক শিল্পী ও কলাকুশলীদের বয়কট সত্ত্বেও কাতারের দৃঢ় অবস্থান মুসলিম বিশ্বের কাছে তার নতুন ভাবমর্যাদা ও জনপ্রিয়তা তুলে ধরতে সহায়তা করেছে।
তিনি আরও লেখেন, এই বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষে কাতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু করেছে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে। এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্নভাবে ইসলামী আকিদা ও আল্লাহর বাণী এবং মহত্ত্বকে তুলে ধরা হয়েছে।
রিয়াজ উদ্দিন নামে একজন লিখেছেন, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুরআন তেলাওয়াত এ যেন এক নতুন ইতিহাস, আলহামদুলিল্লাহ্। এখন থেকে সবকিছু শুরু করার আগে যেন কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়।
আরাফাত হোসাইন সাব্বির নামে একজন লিখেছেন, ফুটবলের এই মহাআসরে পুরো বিশ্বের কাছে ইসলামকে বিভিন্ন কৌশলে সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য কাতারকে ধন্যবাদ।
হাবিবুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, কাতার বিশ্ববাসীদের জানিয়ে দিলো যে এটাই ইসলামের সৌন্দর্য।
সিরাজুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, মুসলিম দেশগুলো হয়তো এ থেকে শিক্ষা নিবে, তাদের জন্য শুভ কামনা।
মেহেদী হাসান নামে একজন লিখেছেন, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক ইসলামের শান্তির বানি।
ডা. আবুল হাসেম নামে একজন লিখেছেন, আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ নেয়ামত বাড়িয়ে দেন। এটাই তার একটি উদাহরণ। আমরা যারা সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গ থাকার পরেও হতাশ, তারা সত্যি অভাগা।