পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়েছে রূপপুরের বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রকল্প। নির্মাণ কাজে দৃশ্যমান অগ্রগতি থাকলেও নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে পারছে না রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সঞ্চালন ও গ্রিড লাইন, সাবস্টেশন নির্মাণ, রিভারক্রসিং কার্যক্রম পিছিয়ে যাওয়ায় এ সংশয় দেখা দিয়েছে। ডলার মূল্য এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক লেনদেনে জটিলতাও রূপপুর প্রকল্পের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। নানামুখী এসব জটিলতায় বিলম্ব হবে রূপপুরের কাজ শেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। সরকারের লক্ষ্য ছিল ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা। এখন সেটা ২০২৪ সালের আগে সম্ভব নয় বলেই মনে করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রকল্পের কিছু প্যাকেজের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে, তবে বাকিগুলো ভারতীয় আর্থিক সংস্থার ছাড়পত্র পেতে বিলম্বের কারণে স্থগিত রয়েছে বলে পিজিসিবির অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) থেকে ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালনের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প সময় মতো বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ ভারতীয় আর্থিক সংস্থা দরপত্র প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে অতিরিক্ত সময় নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া ইনকিলাবকে প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া বিলম্বের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি ভারতীয় আর্থিক সংস্থার তরফ থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিজিসিবির এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, ভারতের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রকল্পের নদী পারাপার এবং বে-এক্সটেনশনের দরপত্র কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদনের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের ওপরই সময় মতো আরএনপিপি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি নির্ভর করবে উল্লেখ করে পিজিসিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের অবকাঠামো প্রস্তুত না হলে, রূপপুর কেন্দ্র সময় মতো সম্পন্ন হওয়ার পরেও এর কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে না। আমরা তার জটিলতায় পড়েছি।
এদিকে, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের অগ্রগতি ও করণীয় নিয়ে সম্প্রতি বৈঠক করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। বৈঠকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তারা প্রকল্পের অগ্রগতির সার্বিক তথ্য জানান সাংবাদিকদের।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, রূপপুরের সঞ্চালন ব্যবস্থাপনার কাজ যথাসময়ে শেষ করতে সমন্বিতভাবে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে নিরাপত্তা। তিনি বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলেও কাছাকাছি সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।
অন্যদিকে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, কাজ চলছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না হলেও খুব একটা বিলম্ব হবে না। কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কিছুটা পিছিয়েছে। সাবস্টেশনের কাজ দুপক্ষের কারণে একটু দেরি হয়েছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মালিকানাধীন এ বিদ্যুৎ সংস্থাটি ভারতের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) চুক্তির সহায়তায় দেশের প্রথম নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প আরএনপিপি থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের প্রকল্পগুলো হাতে নেয়। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে আরএনপিপির প্রথম ইউনিটের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে ২০২২ সালের মধ্যে সঞ্চালন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এতে অর্থায়নের জন্য ২০১৭ সালে নয়াদিল্লির সাথে ১.০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে ঢাকা। পাঁচটি সঞ্চালন প্রকল্প মধ্যে রয়েছেÑ ১৩ কিলোমিটার নদী পারাপারসহ ৪৬৪ কিলোমিটারের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন, সাত কিলোমিটার নদী পারাপারসহ ২০৫ কিলোমিটারের ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন, ৪০০ কেভির পাঁচটি বে-এক্সটেনশন, ২৩০ কেভির চারটি বে-এক্সটেনশন এবং ফিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার গুণগত উন্নয়ন, জরুরি নিয়ন্ত্রণ ও এ সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজ। ৪৬৪ কিলোমিটারের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্পটি সহজে ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য চারটি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো- ১০২ কিলোমিটার রূপপুর-বগুড়া লাইন, ১৪৪ কিলোমিটার রূপপুর- গোপালগঞ্জ লাইন, ১৪৭ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা লাইন এবং ৫১ কিলোমিটার আমিনবাজার-কালিয়াকৈর লাইন। নদী পারাপারের ১৩ কিলোমিটার কাজটিও কয়েকটি প্যাকেজ নিয়ে গঠিত- ছয় কিলোমিটার পদ্মা নদী পারাপার লাইন এবং সাত কিলোমিটার যমুনা নদী পারাপার লাইন। একইভাবে ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে বিভক্ত- ৬০ কিলোমিটার রূপপুর-বাঘাবাড়ী লাইন, ১৪৫ কিলোমিটার রূপপুর-ধামরাই লাইন এবং সাত কিলোমিটার যমুনা নদী পারাপার লাইন।
প্রকল্পের তথ্য অনুসারে গ্রিডলাইন নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে বিভিন্ন প্যাকেজের কাজের মেয়াদ ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে সেটা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সালের মধ্যে সবগুলো সঞ্চালন লাইন বাস্তবায়ন করা যাবে না। কারণ প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৪৫.০৫ শতাংশ।
প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সাতটি প্যাকেজের আওতায় গ্রিড ও সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজ চলছে রূপুপর প্রকল্পে। এরমধ্যে প্যাকেজ ১-এ রয়েছে রূপপুর থেকে বাঘাবাড়ী ২৩০ কেভির ৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজ। এ প্রকল্পে ভৌত অগ্রগতি হয়েছে প্রায় শতভাগ, আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৯ শতাংশ। এটির ব্যয় ২৪৫ দশমিক ৮২ কোটি টাকা। এছাড়া রয়েছে আমিন বাজার থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ। এ প্রকল্পে ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ শতাংশ। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৬ কোটি টাকা। প্যাকেজ ২-এ রয়েছে রূপপুর থেকে ঢাকা (আমিনবাজার-কালিয়াকৈর) পর্যন্ত ১৪৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং রূপপুর থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত ৪০০ কেভি ১৪৬ কিলোমিটারের সিঙ্গেল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ। দুটো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২শ কোটি টাকা। এ দুটো প্রকল্পের আর্থিক এবং ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশের মতো। প্যাকেজ ৩-এর আওতায় রয়েছে রূপপুর থেকে ধামরাই পর্যন্ত ১৪৫ কিলোমিটার ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং রূপপুর থেকে বগুড়া পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সিঙ্গেল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ। দুটো সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ব্যয় হতে পারে এক হাজার ৮২১ কোটি টাকা। এ দুটো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে পর্যায়ক্রমে ৪৪ শতাংশ এবং ৬০ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৩ শতাংশ ও ৫৬ শতাংশ।
এছাড়া অন্য প্যাকেজের অধীনে যমুনা ও পদ্মা নদীতে ১৬ কিলোমিটার রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, ৪০০ কেভি বে-সম্প্রসারণ এবং ২৩০ কেভি বে-সম্প্রসারণের কথা রয়েছে। রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) ঋণ থেকে অবমুক্ত করে গত আগস্টে চুক্তি করা হয়। এটির অগ্রগতি মাত্র দুই শতাংশ। আর বে-সম্প্রসারণ কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২৩ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৩ শতাংশ।
গ্রিড ও সঞ্চালন লাইনের পাশাপাশি আছে যন্ত্রাংশ সরবরাহ জটিলতাও। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, চুক্তি অনুযায়ী রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ রাশিয়ার সরবরাহের কথা ছিল। এসব উপকরণ ও যন্ত্রাংশ রাশিয়া নিজে উৎপাদন করে না। তারা বিভিন্ন দেশের বহুজাতিক কোম্পানি থেকে সংগ্রহ করে সরবরাহ করত। কিন্তু যুদ্ধের কারণে সরবরাহকারী বিভিন্ন দেশের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এছাড়া অর্থ লেনদেনে জটিলতাও রয়েছে। তাই রাশিয়া অন্যদেশ থেকে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে উপকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করার অনুরোধ করেছে। চুক্তি অনুযায়ী সেসবের মূল্য পরিশোধ করতে সম্মতিও জানিয়েছে রাশিয়াই। এছাড়া প্রকল্পে রাশিয়ার যেসব পরার্মশক কাজ করতেন তাদের অর্থ পরিশোধে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. সৌকত আকবরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের করে তাকে পাওয়া যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।