পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এ অর্থবছরে ৫৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিচ্ছে চট্টগ্রাম। এটি একক বৃহৎ রাজস্বের যোগান। তা সত্ত্বেও চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়ন ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে। পদে পদে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ী বিনিয়োগকারিরা। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম থেকে যেন দিনে দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে যাচ্ছে।
আমদানি-রফতানির প্রায় পুরোটাই হয় চট্টগ্রাম তথা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। অথচ আমদানি-রফতানিকারকদের নানা অনুমোদনের জন্য ছুটতে হয় ঢাকায়। ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের প্রাতিষ্ঠানিক সেবা নিশ্চিত করা যায়নি। চট্টগ্রামকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়াও থেমে আছে। আমদানি-রফতানি দ্রুত বাড়ছে অথচ সে তুলনায় বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে না।
চট্টগ্রামে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও তার সমান্তরালে বিনিয়োগ বাড়ছে না। দেশি-বিদেশী বিনিয়োগের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জমি ও গ্যাস, বিদ্যুতের সংকট। ইপিজেডের সুতিকাগার চট্টগ্রামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশের প্রথম এসব সর্ববৃহৎ ইপিজেড চট্টগ্রাম ইডিপজেড। এরপর কর্ণফুলী ইপিজেড প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রধান আকর্ষণ এই দুটি ইপিজেড। অথচ দুটি ইপিজেডে কোন শিল্পপ্লট খালি নেই।
ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ থাকলে তাদের বিমুখ হতে হচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর ওপারে আড়াই হাজার একর জমিতে কোরিয়ান ইপিজেডকে শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হলেও নানা জটিলতায় সেখানে বিনিয়োগ আসছে না। বিনিয়োগের জন্য জমি সংকট নিরসনে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও আনোয়ারাতে তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এসব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। বিনিয়োগের পথে অপর বাধা গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও গ্যাস উৎপাদন দিনে দিনে কমছে। চালু কারখানাগুলোতেও পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ দেয়া যাচ্ছে না। এ সংকট নিরসনে এলএনজি আমদানির কথা বলা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ এ গ্যাস পাওয়া যাবে তাও এখনও নিশ্চিত নয়। এর ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা অব্যাহত আছে।
ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান ইনকিলাবকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে যেহারে রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাচ্ছে সে অনুপাতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন বরাদ্দ পাচ্ছে না। এতে করে এখানে উন্নয়ন-বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ দিনে দিনে আরও সংকুচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, যে অঞ্চল থেকে বেশি রাজস্ব আদায় হয় সে অঞ্চলে আরও বেশি করে উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হলে জাতীয় উন্নয়নই ত্বরান্বিত হয়। চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে এমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। দিনে দিনে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ শিল্পায়নের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন তাদের একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ দিতে হবে। আমদানি-রফতানি ও শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগের জন্য যেসব প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা জরুরি তা নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দর। এর সক্ষমতা বাড়ানোর সাথে সাথে আধুনিকায়ন করতে হবে। তা না হলে রাজস্ব আদায়ের এ ধারা একসময় হোঁচট খাবে। জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে চট্টগ্রামের উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, চট্টগ্রামকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা গেলে দেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করানো সম্ভব হবে।
এনবিআর খাতে দেশের সিংগভাগ রাজস্ব আদায়কারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস চলতি অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৬২২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। আর এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নানামুখি তৎপরতা চলছে। চট্টগ্রামের চারটি কর অঞ্চল এবার ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কাষ্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রাম ৮ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে তা আদায় শুরু করেছে। এই তিনটি বিভাগ থেকে গেল অর্থবছরে প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব জমা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম থেকে এতে বেশি রাজস্ব যোগান দেওয়ার পরও পদে পদে বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। লোকবল সংকটসহ কাস্টম ও কর বিভাগেও রয়েছে নানা সমস্যা। ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানিবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হলে রাজস্ব আদায়ের হার আরও বাড়াবে বলে মনে করেন তারা।
দেশের মোট আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯৩ শতাংশ চট্টগাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। এই বন্দরের মাধ্যমে নৌ-বাণিজ্যের ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার এবং ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। তবে আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির সাথে বন্দরে সক্ষমতা বাড়ছে না। এতে করে আমদানি-রফতানিতে সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজের গড় অবস্থানকাল বাড়ছে। ব্যবসায়ী ও আমদানি-রফতানিকারকদের মতে বিগত ২০০৭ সালে যেখানে একটি কন্টেইনার জাহাজের গড় অবস্থানকাল ছিল ১৬ ঘণ্টা সেখানে এখন তা ১০৬ ঘণ্টায় এসে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ পণ্যবাহী এক একটি জাহাজ জেটিতে ভিড়তে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এরফলে আমদানি ব্যয় বাড়ছে, যার বড় খেসারত দিতে হচ্ছে ভোক্তা সাধারণকে।
আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ যে হারে আমদানি-রফতানি বাড়ছে সে হারে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। যদিও বন্দর কর্র্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা দাবি করেন বন্দরের সক্ষমতা দ্রুত বাড়ছে। আমদানি-রফতানি অনুমোদন, আমদানি পণ্যের পরীক্ষাসহ নানা কাজে ব্যবসায়ীদের হয়রানীর শিকার হতে হয়। বেশিরভাগ অমুমোদন ও পণ্যের পরিক্ষা হয় ঢাকায়। ফলে ব্যবসায়ীদের ঢাকায় দৌঁড়াতে হয়। শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত ও আমদানি পণ্যের মান যাছাইয়ে সনদ দেয় বিএসটিআই। চট্টগ্রামে বিএসটিআইয়ের শাখা থাকলে এখান থেকে সবকটি পণ্যের সনদ দেয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। বিএসটিআই ১৫৪টি পণ্যের মান যাছাই করে সনদ দিয়ে থাকে। চট্টগ্রাম থেকে দেওয়া হয় ৮৫টি পণ্যের সনদ। বকি পণ্যের সনদের জন্য উৎপাদনকারি ও আমদানিকারকদের ঢাকায় যেতে হয়।
প্রধান আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে ৫৫টি সেবা দেওয়ার তালিকা প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় সম্প্রতি। এতে বলা হয় মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ ২৮ ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানির অনুমোতি নিতে হবে ঢাকা থেকে। এতে তুলা, খাদ্যশস্যসহ উদ্ভিদ ও উদ্ভিজ্জাত পণ্য আমদানি করতে হলে ব্যাংকে ঋণপত্র খোলার আগে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের আমদানির অনুমতি নিতে হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঢাকা কার্যালয় থেকে। ১৫-২০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি পণ্য আমদানির আগে ব্যবসায়ীদের আমদানির অনুমতিপত্র জোগাড় করতে দৌড়াতে হয় ঢাকায়। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনে দাবির মুখে পূর্ণাঙ্গ বন্ড কমিশনারেট অফিস চালু হয়েছে বিগত ২০১১ সালে।
রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামের চারটি কর অঞ্চল ও কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে লোকবল সংকট চরমে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেক পদশূন্য দীর্ঘদিন থেকে। একজন কর্মকর্তাকে একাধিক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এ কারণে রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি চলছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি নিয়েও নানা জটিলতা রয়েছে। এ নিয়ে কর বিভাগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষও আছে। কর অঞ্চলের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গত দুই বছর ধরে কর আদায়ে প্রণোদনা ও প্রচার-প্রচারণাখাতে বরাদ্দও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। শূন্যপদ পূরণ প্রণোদনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং প্রচার-প্রচারণাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলে রাজস্ব ও কর আদায় আরও বাড়বে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।