গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ভুয়া প্রটোকল অফিসারের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআাই) ও র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সোমবার রাতে গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও এলিট ফোর্স র্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর বনানী এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, এ চক্রের মূলহোতা বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার উথলী বাজার গ্রামের গোপীনাথের পুত্র হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস ওরফে তাওহীদ (৩৪) ও তার সহযোগি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার নওদার গ্রামের মো. সাইফুল ইসলামের পুত্র মো. ইমরান মেহেদী হাসান (৩৮)।
র্যাব বলছে, এ চক্রটি বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে ২০১৪ সাল থেকে শতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মূখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এসময় তাদের কাছ থেকে ৪ টি মোবাইল, জালিয়াতিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ডকুমেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে এডিট করা ভুয়া ছবি জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত হরিদাস ওরফে তাওহীদ প্রতারক চক্রের মূলহোতা। হরিদাস চন্দ্র ওরফে মো. তাওহীদ ইসলামের প্রকৃত নাম হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস।
তার ৫ থেকে ৬ জন সহযোগি রয়েছে। ২০১০ সালে পাশ্ববর্তী দেশ থেকে দেশে ফিরে রাজধানীর উত্তরায় পুরাতন এসি ক্রয় -বিক্রির কাজ শুরু করে তিনি। এসময় উত্তরার একটি হাসপাতালের এসি মেরামত বা এসি প্রদানের বিষয়ে তার সাথে চুক্তি হয়। অতপর তিনি ২০১৮ সালে একজন সবজী বিক্রেতার সাথে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া নেয়। বাসা ভাড়া থাকা অবস্থায় তার মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য ২০১৯ সালে তিনি ধর্মান্তরিত হয়। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তিনি তার নাম হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস পরিবর্তন করে তাওহীদ ইসলাম ধারণ করে।
গ্রেফতারকৃত হরিদাস জানায়, তার শ্বশুরের পরিচয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকায় তিনি কিছু জমি ক্রয় করেন। তার শ্বশুরের মাধ্যমে এলাকার লোকের সাথে নিজেকে একজন বিত্তশালী লোক হিসেবে পরিচিত দিতেন। পাশাপাশি তিনি এটাও প্রচার করতে থাকেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের প্রটোকল অফিসার। তখন তিনি দামী গাড়ি এবং দামী পোশাক পরে মাঝে মাঝে এলাকায় গিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদ, গণ্যমান্য বিত্তশালী ব্যক্তিদের সাথে পরিচিত হতেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়ের সহায়তায় প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রজেক্টের প্রস্তাব দিতেন।
প্রতারণায় প্রলুব্ধ হয়ে অনেকেই চাকুরী, বদলি, টেন্ডারসহ বিভিন্ন বিষয়ে তদবীর করার জন্য তার সহায়তা চান। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি চাকুরী প্রত্যাশী, পছন্দমত জায়গায় বদলি প্রত্যাশী সরকারী চাকুরীজীবি, বিভিন্ন ক্রয় বিক্রয় ও উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নিকট থেকে টাকার বিনিময়ে কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করতেন।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, হরিদাস প্রতারণার মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ২০১৯ সালে ফুলবাড়িয়া এলাকায় প্রায় এক বিঘা জমি ক্রয় করে প্যারিস সুইমিংপুল এন্টারটেইনমেন্ট পার্ক নামে রিসোর্টের কাজ শুরু করেন। এরপর তার প্রলোভনে পড়ে আরও অনেকেই টাকা লেনদেনের রসিদ ছাড়া তাকে লাখ লাখ টাকা প্রদান করে। ২০২০ সাল প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে রিসোর্টের কাজ শেষ হলে পরবর্তীতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। রিসোর্টে প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা, সুইমিংপুলে গোসল ১শ’ টাকা এবং এর ভিতরে ঘোরাঘুরির জন্য ৫০ টাকা করে টিকেট ক্রয় করতে হয়। দলে দলে পর্যটক তার রিসোর্টে ভিড় করতে থাকে।
অনেকে বিবাহ, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য তার রিসোর্ট ভাড়া নিতে থাকে। তখন তিনি বিভিন্ন বিত্তশালী ব্যক্তিদের তার রিসোর্টে আমন্ত্রণ জানায় এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে এডিট করা ছবি প্রদর্শন করে তার প্রজেক্টসহ অন্যান্য প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে। এর মাধ্যমে তিনি অনেকের নিকট থেকে বিভিন্ন কৌশলে বিপুল পরিমান অর্থ আদায় করতেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এছাড়াও একাধিক ব্যাংকে তার নামে বেনামে বিভিন্ন একাউন্ট রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে ওই সব একাউন্ট গুলোতে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের প্রমান পাওয়া গেছে। তিনি কখনো নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা বা তাঁর পরিবারের প্রটোকল অফিসার, বৈমানিক কর্মকর্তাসহ ভুয়া পরিচয় দিয়ে নানাবিধ প্রতারণা করে আসছিলন।
তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।