নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
১৮৫ রানের দুরূহ লক্ষ্য। সেই ম্যাচও বৃষ্টি নামার আগে উড়ন্ত বাংলাদেশের ঝুলিতে ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৬! ডিএলএসে তখনও এগিয়ে ১৭ রানে। তবে অ্যাডিলেডের বৃষ্টি এক লহমায় কেড়ে নিল সেই সুখ। ফের খেলা মাঠে গড়ালে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬ ওভারে ১৫১ রান। যার ব্যাটে ভর করে অসম্ভব জয়ের স্বপ্ন দেখছিল সেই লিটন রানআউট হলেন ২৭ বলে ৬০ রান করে, তার সাথে সাথে যেন মুখ থুবড়ে পরল বাংলাদেশও। শান্ত, সাকিব, আফিফের পর ইয়াসির ফিরে যান ‘কিছু না করেই’। শেষ চেষ্টা করেছিলেন নুরুল ও তাসকিন। তবে তাদের লড়াই ব্যবধান কমিয়ে বাড়াল শুধু হাহাকার-ই। শেষ বল পর্যন্ত অন্তত ম্যাচ টাই করার আশা ছিল বাংলাদেশের, সেটিও হলোনা। বৃষ্টি আইনে খুব কাছে গিয়েও ৫ রানে হারল সাকিবের দল। ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুর পর ২০২২ সালে অ্যাডিলেডে ভারতের বিপক্ষে আরেকটি হৃদয় ভঙ্গের কাব্যই লেখা হল তাতে।
তবে ট্র্যাজেডির বদলে এদিন রুপকথাই লেখা হতে পারতো অ্যাডিলেডে। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কয়েকবারই প্রশ্নটা করা হলো সাকিব আল হাসানকে। বৃষ্টির পর যখন আবার খেলা শুরু হলো, বাংলাদেশের মাঠে নামতে কোনো আপত্তি ছিল কি না। ডিএলএসের নতুন লক্ষ্য, অ্যাডিলেড ওভালের ভেজা মাঠ- কোনো কিছু নিয়ে আপত্তি তুলে ওই সময়েই মাঠ নামতে আদৌ রাজি ছিলেন কি না তিনি। নাকি অনেকটা জোর করেই বাংলাদেশকে মাঠে নামতে বাধ্য করা হয়েছে!
আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলতে নেই। খেলায় তাঁদের সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত। বিশেষ করে একবার সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার পর এ নিয়ে চুপ থাকাই নিয়ম। সাকিবও এ কারণেই মুখ খুললেন না। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবারই কৌশলে এড়িয়ে গেলেন প্রসঙ্গটা। একবার তো এমনও বললেন, ‘আমার কি ক্ষমতা আছে আম্পায়ারদের কোনো কিছুতে রাজি করানোর!’ সঙ্গে বলেছেন, আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযোগ করার কিছু নেই। অভিযোগ না করার আরেকটা কারণও থাকত পারে। ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের সামনে যে নতুন লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল, সেটি বরং ম‚ল লক্ষ্যের চেয়ে তুলনাম‚লক সহজই ছিল। বেশির ভাগ দলই এমন ম্যাচ জিতে যেত। কিন্তু বাংলাদেশ সেটা পারেননি।
বৃষ্টিতে ৫২ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর আম্পায়াররা যখন ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিলেন, তখন টেলিভিশন পর্দায়ও দেখা গেছে কৌত‚হলোদ্দীপক একটা দৃশ্য। ড্রেসিংরুমের সামনে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলছেন সাকিব, সেখানে উপস্থিত ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাও। আম্পায়ারদের সঙ্গে কথাবার্তায় কোনো একটা বিষয়ে অসন্তুষ্টই মনে হচ্ছিল সাকিবকে। রোহিত পিঠে হাত দিয়ে তাঁকে সম্ভবত শান্ত করতে চাইলেন। পরে সাকিব ফিরে যান ডাগআউটে। সতীর্থ এবং কোচিং স্টাফের সদস্যরা ঘিরে ধরেন তাঁকে। সাকিব দুই হাতে মাথা চেপে ধরে কিছু একটা বলছিলেন তাঁদের।
সংবাদ সম্মেলনের পর ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকাপ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকরা সাকিবের কাছে আবারও জানতে চান ঠিক নিয়ে তিনি কথা বলছিলেন আম্পায়ারদের সঙ্গে। বাংলাদেশ অধিনায়ক এবারও হেসে এড়িয়ে যান প্রসঙ্গটা। তবে দলীয় স‚ত্র নিশ্চিত করেছে, সাকিব আম্পায়ারদের বোঝাতে চেয়েছেন মাঠ তখনো ভেজা। এই মাঠে খেলা ঝুঁকিপ‚র্ণ। কিন্তু আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত না মেনে উপায় ছিল না তার। সাকিব প্রসঙ্গটি বারবারই এড়িয়ে গেলেও জানা গেছে, মাঠ ভেজা থাকার কারণে ওই সময়ই খেলা আবার শুরু করার পক্ষে ছিলেন না সাকিব। দলের একটি স‚ত্র জানিয়েছে, মাঠ তখনো খেলার উপযোগী ছিল না। সাকিব আম্পায়ারদের সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন। ওই সময় আবার মাঠে নামতে রাজি ছিলেন না তিনি।
বৃষ্টির পর ব্যাটিংয়ে নেমে লিটন দাসের দুবার পা পিছলানোও প্রমাণ করে, মাঠ তখনো ভেজা ছিল। একবার তো রান নিতে গিয়ে পা পিছলে পড়েই গেলেন লিটন! পরে রান আউট হওয়ার সময়ও দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে গতি কমে গিয়েছিল তার। ম্যাচ শেষে সাকিব আনুষ্ঠানিকভাবে এর কোনো কিছুকেই হারের কারণ বলেননি। বলেছেন সবকিছুর পর ম্যাচটা তাঁদের জেতাই উচিত ছিল।
বৃষ্টির পর বাংলাদেশের জয়ের সমীকরণ যায় পাল্টে। পরের নয় ওভারে করতে হতো ৮৫ রান। হাতে ১০ উইকেট থাকায় ম্যাচ জয়ের বড় সুযোগ ছিল টাইগারদের। কিন্তু স্নায়ুচাপ সামলে নিতে পারেননি টাইগার ব্যাটাররা। উল্টো নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ভারতকে জয় এনে দেন তাদের বোলাররা। এমন জয়ে স্বস্তি মিললেও ম্যাচটা যে কেউই জিততে পারতো বলে মনে করেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ‘(বৃষ্টির পর) উভয় দলের জন্যই সুযোগ ছিল। আমি একই সঙ্গে শান্ত এবং নার্ভাস ছিলাম। তবে দল হিসাবে আমাদের জন্য শান্ত থাকা এবং পরিকল্পনাগুলো কার্যকর করা খুব গুরুত্বপ‚র্ণ ছিল। এটি সংক্ষিপ্ত একটি ম্যাচ ছিল এবং এটা যে কোনও দিকেই যেতে পারতো। ১০ উইকেট হাতে থাকলে এটি যে কোনো দিকে যেতে পারে তবে বিরতির পরে ম্যাচ শুরু হলে আমরা আমাদের স্নায়ুকে বেশ ভালোভাবে ধরে রাখতে পেরেছিলাম।’
ম্যাচ শেষে
ভারতের সঙ্গে খেললেই এমন হয় আমাদের। অনেক কাছে গিয়েছিলাম, কিন্তু পার হতে পারলাম না। দারুণ ম্যাচ, দর্শকেরা উপভোগ করেছে, দুই দলই উপভোগ করেছে। দিনশেষে কাউকে জিততে হবে, কাউকে হারতে হবে। এটা ক্রিকেটের সৌন্দর্য।
-সাকিব আল হাসান
বাংলাদেশ অধিনায়ক
অনেক ক্লোজ ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ হচ্ছে শোনার পর থেকেই রোমাঞ্চিত ছিলাম। এখানে অনেক খেলেছি, এখানে ভালো ক্রিকেটীয় শটই মূল। শেষ ম্যাচেও ভালো টাইমিং হচ্ছিল। আজও ইন্টেন্ট ছিল। দলের জন্য অবদান রাখতে পেরে খুশি।
-বিরাট কোহলি
ভারতীয় ব্যাটসম্যান
স্কোর কার্ড
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সুপার টুয়েলভ
বাংলাদেশ-ভারত, টস : বাংলাদেশ
ভারত ইনিংস রান বল ৪ ৬
রাহুল ক মুস্তাফিজ ব সাকিব ৫০ ৩২ ৩ ৪
রোহিত ক ইয়াসির ব হাসান ২ ৮ ০ ০
কোহলি অপরাজিত ৬৪ ৪৪ ৮ ১
সূর্যকুমার বোল্ড সাকিব ৩০ ১৬ ৫ ০
হার্দিক ক ইয়াসির ব হাসান ৫ ৬ ০ ০
কার্তিক রানআউট (সাকিব/হাসান) ৭ ৫ ১ ০
আক্সার ক সাকিব ব হাসান ৭ ৬ ১ ০
অশ্বিন অপরাজিত ১৩ ৬ ১ ১
অতিরিক্ত (লেবা ১, নো ৩, ও ২) ৬
মোট (২০ ওভার, ৬ উইকেটে) ১৮৪
উইকেট পতন : ১-১১ (রোহিত), ২-৭৮ (রাহুল), ৩-১১৬ (সূর্যকুমার), ৪-১৩০ (হার্দিক), ৫-১৫০ (কার্তিক), ৬-১৫৭ (আক্সার)।
বোলিং : তাসকিন ৪-০-১৫-০, শরিফুল ৪-০-৫৭-০, হাসান ৪-০-৪৭-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-০, সাকিব ৪-০-৩৩-২।
বাংলাদেশ (১৬ ওভারে লক্ষ্য ১৫১) রান বল ৪ ৬
শান্ত ক সূর্যকুমার ব শামি ২১ ২৫ ১ ১
লিটন রানআউট (রাহুল) ৬০ ২৭ ৭ ৩
সাকিব ক হুদা ব আর্শদ্বীপ ১৩ ১২ ০ ০
আফিফ সূর্যকুমার আর্শদ্বীপ ৩ ৫ ০ ০
ইয়াসির ক আর্শদ্বীপ ব হার্দিক ১ ৩ ০ ০
সোহান অপরাজিত ২৫ ১৪ ২ ১
মোসাদ্দেক বোল্ড হার্দিক ৬ ৩ ০ ১
তাসকিন অপরাজিত ১২ ৭ ১ ১
অতিরিক্ত (লেবা ২, ও ২) ৪
মোট (১৬ ওভর, ৬ উইকেটে) ১৪৫
উইকেট পতন : ১-৬৮ (লিটন), ২-৮৪ (শান্ত), ৩-৯৯ (আফিফ), ৪-১০০ (সাকিব), ৫-১০২ (ইয়াসির), ৬-১০৮ (মোসাদ্দেক)।
বোলিং : ভুমনেশ্বর ৩-০-২৭-০, আর্শদ্বীপ ৪-০-৩৮-২, শামি ৩-০-২৫-১, আক্সার ১-০-৬-০, অশ্বিন ২-০-১৯-০, পান্ডিয়া ৩-০-২৮-২।
ফল : বাংলাদেশ ৫ রানে পরাজিত (ডি/এল)।
ম্যাচসেরা : বিরাট কোহলি (ভারত)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।