নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ব্রিজবেনের মাঠে আসা হাজার হাজার প্রবসী বাংলাদেশীদের চোখে-মুখে তখন শংকার ছাপ। টিভি সেটের সামনে বসে খেলা দেখা কোটি বাংলাদেশীদের অবস্থাও একই। স্নায়ুচাপ জয় করা, মোসাদ্দেক হোসেনের জোরের উপর করা বলটি মিস করলেন জিম্বাবুয়ের ব্লেসিং মুজারাবানি। উল্লাসে ফেটে পড়লো টাইগার ক্রিকেটারসহ গ্যালারির সমর্থকরা। দুই দলের করমর্দন শেষ হবার পর মাঠ ছেড়ে বের হয়ে গেল সবাই। কিন্তু দুই আম্পায়ার তখনও মাঠে দাঁড়িয়ে! সবাইকে অবাক করে দিয়ে থার্ড আম্পায়ার জায়ান্ট স্ক্রিনে ঘোষণা করলো নো বল! এ যেন ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’! গ্যাবায় উপস্থিত গুটি কয়েক জিম্বাবুইয়ান সমর্থক ছাড়া গোটা মাঠই তখন স্তব্ধ। শেষ বলে ম্যাচ নির্ধারণ সব সময়ই রোমাঞ্চ ও উত্তেজনার পারদ যোগ করে। তাই বলে এতো দূর? পুনঃরায় বল করতে নেমে আবারও প্রতিপক্ষ মুজারাবানিকে পরাস্ত করলেন মোসাদ্দেক। তাতে নানা নাটকীয়তা পার করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার সুপার টুয়েলভের এই দ্বৈরথে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় সাকিব আল হাসানের দলই। এ যেন, এক জয়ে দুবার জয়ের আনন্দে মাতল বাংলাদেশ।
খেলাটা যখন গ্যাবায় তখন নাটকীয়তা হবেই। ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ড্র হয়েছিল ১৯৬০ সালে এই অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ম্যাচে। সেটাও এই মাঠেই। গতকালের প্রেক্ষাপট ও সংস্করণ ভিন্ন। তবে উত্তেজনা ছড়িয়েছে প্রতি মুহূর্তেই। বাংলাদেশের ছোঁড়া ১৫১ রানের চ্যালেঞ্জ তাড়া করতে নেমে, পাওয়ার-প্লের নির্ধারিত ৬ ওভারে ৩৬ রানতুলতেই ৪ উইকেট খুইয়ে বসে জিম্বাবুয়ে। তাসকিন আহমেদ তার প্রথম দুই ওভারেই তুলে নেন প্রতিপক্ষ দুই ওপেনার মাধেভেরে ও কাপ্তান আরভিনকে। ঢাকা এক্সপ্রেসের সৌজন্যে সাকিব বাহিনী সেখানে কিছুটা এগিয়ে গেলেও, রানের চাকা চলতে থাকে জিম্বাবুইয়ানদের। মুস্তাফিজুর রহমান যখন ষষ্ঠ ওভারে এসে মিল্টন শুম্ভা ও সিকান্দার রাজাকে ফিরিয়ে দেন, তখন মনে হচ্ছিল জয়টা সময়ের ব্যাপার মাত্র বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু চাকাভাকে নিয়ে রানের চাকা চালাতে থাকেন শেন উইলিয়ামস। দ্বাদশ ওভারে এসে আবারও হানা দেন তাসকিন, তাতে ফিরে যায় ১৫ রান করা চাকাভা। তবে থেমে থাকেননি উইলিয়ামস। রায়ান বার্লকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান এই বাঁহাতি ব্যাটার।
জিম্বাবুয়ের সামনে সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ ১৮ বলে ৪০ রান। কিছুটা দুরূহ এই সমীকরণও কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ ফেলে সাকিবের জন্য। ততক্ষণে তাসকিন ও ফিজের বোলিং কোটা শেষ। হাসান মাহমুদ ১৮তম ওভারে এসে ১৪ রান দিলে, জিম্বাবুয়েনরা সম্পূর্ণভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তবে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্টটা আসে সাকিবের করা ১৯তম ওভারে। প্রথম ৩ বলে ৭ রান বের করে নেওয়া উইলিয়ামস চতুর্থ বল আলতো করে ঠেলে সিঙ্গেল নিতে চান। বোলার সাকিব দৌড়ে গিয়ে ভারসাম্যহীন অবস্থায় করা থ্রোতে নন স্ট্রাইক স্টাম্প উপড়ে ফেলেন। শেষ হয় উইলিয়ামসের ৪২ বলে ৬৪ রানের ঝলমলে লড়াকু ইনিংসটি। সেই সাথে সাকিবের এই ‘ব্রিলিয়ান্সে’ই জিম্ববুয়ের জয়ের সম্ভাবনাও ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
তবে ঐ যে, ‘শেষ হইয়াও যেন হইলো না শেষ’! মোসদ্দেকের সেই নাটকে ভরা শেষ ওভার। এই ৬ বলে থেকে ১৬ রান প্রয়োজন ছিল জিম্বাবুয়ের। প্রথম বলে ১ রানের পর দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়ে যান ব্র্যাড ইভান্স। তৃতীয় বলে লেগ বাই থেকে চার পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। পরের বলে রিচার্ড এনগারাভা ফ্লিক করলে ফাইন লেগের উপর দিয়ে তা ছক্কায় পরিণত হয়। ম্যাচে আবারও হাতের মুঠো ফসকে বের হয়ে যাচ্ছিল টাইগারদের। তবে মোসাদ্দেক ছিলেন দারুণ আত্মবিশ্বাসী। পঞ্চম বলে ক্রিজ ছেড়ে মারতে আসলে স্টাম্পড হন এনগারাভা। এই সময় আম্পায়ার বার কয়েক চেক করে সোহানের স্টামপিং। যদিও পরিষ্কারভাবে ব্যাটসম্যান ক্রিজের বাহিরে ছিলেন! তাহলে কেন এতো রিপ্লে দেখা? কারণ বাংলাদেশ কিপার সোহানের গ্লাভস ছিল বিপদসীমার কাছাকাছি। ক্রিকেটের রুলস হচ্ছে ব্যাটার বল মারার আগে এবং স্টাম্প অতিক্রম করার আগে কিপার সেই বল ধরলে তা ‘নো’ হিসিবে গণ্য হবে। ম্যাচ পরিবর্তী সময়ে সাকিব বলেন, ‘আমি সোহানকে বারবার সতর্ক করেছিলাম শেষ বলের আগে। বলেছিলাম মাথা ঠান্ডা রেখে বল তালুবদ্ধ করতে।’ তবে কাপ্তানের সতর্কবানী সত্ত্বেও সোহান ভুল করলেন। যার জেরে ডুবতে বসেছিল তাসকিন-ফিজের বীরোচিত বোলিং প্রোচেষ্টা। তবে মোসাদ্দেকের বুদ্ধিদীপ্ত শেষ বলে মুজারাবানি রান নিতে ব্যর্থ হলে ৮ উইকেটে ১৪৭ রানে থামে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। বিপদের ঘনঘটা থেকে মুক্তি পায় বাংলাদেশ।
এর আগে গ্যাবায় টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করা সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার ও লিটন দাসের দ্রুত বিদায়ের পর কাপ্তান সাকিবের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি গড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে প্রথম দিকে শান্ত ব্যাটিং ছিল অসম্ভব শান্ত। চাপে পড়ে সাকিব চালিয়ে খেলতে গিয়ে আউট হন ২৩ রান করে। শান্ত ৪৫ বল খেলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক পাওয়ার হাত খুলেন। আফিফ হোসেন এসে স্বচ্ছন্দে খেলতে থাকায় বড় পুঁজির পথেই হাটতে থাকে টাইগাররা। ৫৫ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৭১ রান করে শান্ত ফিরে গেলে বাংলাদেশের রানের চাকা থেমে যায়। ৬ নাম্বারে নামা মোসাদ্দেকের ১০ বলে ৭ রানের ইনিংসটি আসলে এই সংস্করণের চেতনা বিরোধী। তবে আফিফের ১৯ বল ২৯ রানের ইনিংসে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ১৫০ রান পর্যন্ত যায় বাংলাদেশ। শেষ ৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করতে পেরেছিল মাত্র ৩০ রান।
মুস্তাফিজ ১৫ রান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট নিলেও, ১৯ রান খরচায় ৩ উইকেট নেওয়া তাসকিনই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরষ্কার। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ঢাকা এক্সপ্রেসের উইকেট সংখ্যা ৮টি। ম্যাচের পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় তাসকিন জানান, ‘আমরা সবাই নার্ভাস ছিলাম। আমাদের জন্য জয়টা খুব একটা সহজ ছিল না। দেশে আমাদের পিচগুলি ধীরগতির, এখানে আমরা দারুণ সাহায্য পাচ্ছি পিচ থেকে। আমাদের এখন ভালো পেস বোলিং দল।‘ ম্যাচের শেষ মুহূর্তের উত্তেজনায় বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিবকে নাকি ঠাণ্ডা রেখেছিল মোসাদ্দেক, ‘আমি মোসাদ্দেকের সঙ্গে কথা বলেছি। সে আমাকে বলেছে, “উদ্বেগের কিছু নেই। আমি ঠিক আছি এবং সবকিছু সামলে নেব।” তার কথায় আমি শান্ত হয়েছি, স্বস্তি পেয়েছি।’ আর পরাজিত দলনেতা আরভিন জানান, ‘ম্যাচটা জেতার ভালো সুযোগ ছিল আমাদের। তবে বাংলাদেশ খুবই ভালো ফিল্ডিং করেছে। বোলিংটাও ভালো ছিল তাদের।’
অসংখ্য নেতিবাচকতা নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা বাংলাদেশ, বর্তমানে ৪ পয়েন্ট আছে টেবিলের দুই নম্বারে। সামনের দুই ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি ভারত ও পাকিস্তান। গতকালের ম্যাচে জয় পেলেও তা দিচ্ছে না সেভাবে আত্মবিশ্বাস। বিশেষ করে শেষদিকে ব্যাটসম্যানদের বড় রান তুলতে ব্যর্থ হওয়াটা ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। একই সঙ্গে আগামীপরশু ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে সাকিবের চিন্তার বিষয় দলের পঞ্চম বোলার। আট জন ব্যাটার খেলিয়েও যখন বড় রান আসছে না, তখন একজন অতিরিক্ত বোলার খেলানোটা ট্যাকটিক্যালি সঠিক। যদি সেই পথেই হাঁটে বাংলাদেশ, ভারতের বিপক্ষে শরীফুল বা ইবাদতকে একাদশে দেখা যেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।