নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
এক বলে দরকার ৫ রান। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বল এগিয়ে এসে উড়াতে গিয়ে পারলেন না ব্লেসিং মুজারাবানি। স্টাম্পিং করে ম্যাচ শেষ করার আনন্দে মাতল বাংলাদেশ। দুদলের খেলোয়াড়রা হাত মিলিয়েও বিদায় নিলেন মাঠ থেকে। কিন্তু নাটকের যে তখনো বাকি! টিভি স্ক্রিনে উঠে গেছে বাংলাদেশ খেলা জিতেছে ৪ রানে। কিন্তু জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটার কি আশায় ক্রিজেই দাঁড়িয়েছিলেন, নিয়েছিলেন রিভিউ। রিপ্লেতে দেখা স্টাম্পিং করার আগে বল ধরার সময় বড় ভুল করে ফেলেন সোহান। স্টাম্পের থেকে গ্লাভস সামনে নিয়ে বল ধরেছিলেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী হয় নো বল। আবার খেলোয়াড়রা ফেরেন মাঠে। নাহ! এক বলে ৪ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেননি মুজারাবানি। ৩ রানেই রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ।
এমন জয়ের পর আলোচনায় এসেছে সোহানের ওই ভুল। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিব জানান, রিচার্ড এনগারাভার স্টাম্পিংয়ের সময়ও সোহানকে একটু বেশি এগিয়ে আসতে দেখে সতর্ক করেছিলেন তিনি, ‘আগের বলে (এনগারাভার আউটের সময়) আমি ওকে বলেছিলাম সতর্ক থাকতে, কারণ ওর হাত স্টাম্পের কাছাকাছি চলে এসেছিল। আম্পায়ার কিন্তু পরেরবার চেকজ করবে। বিশ্বাস করতে পারছি না (হাসি)। আমি বলব দারুণ এক ম্যাচ হয়েছে। যারা খেলা দেখতে এসেছেন তাদের জন্যও দারুণ ছিল।’ রান তাড়ায় জিম্বাবুয়েকে ম্যাচে রেখেছিলেন শন উইলিয়ামস। ১৯তম ওভারে সাকিবের সরাসরি থ্রোতে রান আউটের আগে করেন ৪২ বলে ৬৪ রান। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে এসে তিনি জানান, তারা বেরিয়ে যাওয়ার সময় আম্পায়ারদের ডাকে টের পান নো বলের কথা, ‘মাঠ ছাড়ার সময়ই আমরা টের পাই। আম্পায়াররা আমাদেরকে থামান যে নো বল হয়েছে কিনা দেখার জন্য। পরে বড় স্ক্রিনে দেখলাম।’
মোসাদ্দেকের বলটা স্টাম্প অতিক্রম করার আগেই সেটি ধরে স্টাম্প ভেঙেছেন নুরুল। ক্রিকেটের নিয়মে বলটা তাই ‘নো’। জিম্বাবুয়ে পেল ‘ফ্রি হিট’। সেই ‘নো’ আর ‘ফ্রি হিটে’ও অবশ্য শেষ পর্যন্ত জয়ের শিকে ছেঁড়েনি জিম্বাবুয়ের। আর বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররাও খুব দ্রুতই মানিয়ে নিয়েছেন পরিস্থিতির সঙ্গে। এক সেকেন্ড আগেও যাঁরা জানতেন- ম্যাচ জিতে গেছেন, এক সেকেন্ড পর তাঁদেরই আবার মাঠে নামতে হয়েছে শেষ বলটা আরেকবার খেলতে! কিন্তু এতে হতচকিত না হয়ে পড়ে বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন সাকিব-মোসাদ্দেকরা। আবার মাঠে নেমে আবারও শেষ বলটা করলেন মোসাদ্দেক। বাকিটা তো সবারই জানা। শেষ বল পর্যন্ত খেলেও ৩ রানে হেরে গেছে জিম্বাবুয়ে। শেষ বলের ওই নাটক বাংলাদেশের জয়ের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। তবে ম্যাচের মোমেন্টাম কিন্তু অন্য জায়গায়! আগে থেকেই পরিকল্পনা করেই শেষ ওভারে এই ঝুঁকি নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক! ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন মোসাদ্দেক নিজেই। এমনিতেও মোসাদ্দেক অনিয়মিত বোলার। স্নায়ুর চাপটা তাই বেশি থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে এখানেও মোসাদ্দেকের মুক্তি মিলেছে সাকিবের সঙ্গে কথা বলে, ‘ক্রিকেট খেলায় যেকোনো কিছুই হতে পারে। স্নায়ুর চাপের ব্যাপারে আমি সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম। ওনার সঙ্গে আমার কথা হওয়ার পর চাপ নিয়ন্ত্রণে ছিল।’ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল আথারটনের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমি মোসাদ্দেকের সঙ্গে কথা বলেছি। সে আমাকে বলেছে, “উদ্বেগের কিছু নেই। আমি ঠিক আছি এবং সবকিছু সামলে নেব।” তার কথায় আমি শান্ত হয়েছি, স্বস্তি পেয়েছি।’
এদিন ব্রিসবেনে টস জিতে নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটিতে ১৫০ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। বেশ ভালো উইকেটে এই পুঁজিই যথেষ্ট ছিল না। তবে তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের দারুণ বোলিং পাওয়ার প্লের মধ্যেই ম্যাচে নিয়ে আসে নিয়ন্ত্রণ। ৩৫ রানে ৪ উইকেট পড়ে ব্যাকফুটে চলে যায় জিম্বাবুয়ে। পরে ঘুরে দাঁড়ালেও পেরে উঠেনি ক্রেইগ আরভিনের দল। খাদের কিনার থেকে দলকে টেনে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাচ্ছিলেন উইলিয়ামস। তার দারুণ ইনিংস যখন পূর্ণতার দ্বারে তখন মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এক ক্ষিপ্র থ্রোতে ছবি বদলে দেন সাকিব। আক্ষেপ সঙ্গী করা উইলিয়ামস বলছেন, একটু বেশিই ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
শেষ ২ ওভারে ম্যাচ জিততে তখন ২৬ রান দরকার জিম্বাবুয়ের। ক্রিজে দুই থিতু ব্যাটার উইলিয়ামস ও বার্ল। সাকিবের প্রথম তিন বল থেকে এক বাউন্ডারিতে চলে আসে ৭ রান। চতুর্থ বলটা অফ সাইডে ঠেলে প্রান্ত বদল করতে গিয়েছিলেন উইলিয়ামস। বোলার সাকিব দৌঁড়ে ক্ষিপ্র থ্রোতে ঘুরে ভেঙে দেন নন স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্টাম্প। ৪২ বলে ৬৪ করা উইলিয়ামস তখন বেশ দূরে। ভীষণ চাপের সময়ে ওই রান আউট বদলে দেয় ম্যাচের ছবি। শেষ ওভারের নাটকীয়তা শেষ বল পর্যন্ত গেলেও ৩ রানে ম্যাচ হারে জিম্বাবুয়ে। ম্যাচ শেষে অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটারের কন্ঠে বিস্তর আক্ষেপ, ‘যখন রানআউটের ব্যাপারটা এলো... ভাবুন এটা যেকোনো দিকে যেতে পারত। ওর জন্য এক স্টাম্পের নিশানা ছিল। যদি সে মিস করত আমি দুই রান নিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু সেটা হলো না। আমি ভুল ধারণা করেছিলাম এবং রান আউট হয়েছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা আমাদের জন্য কাল হলো।’
১৫১ রান তাড়ায় ছন্দে থাকা সিকান্দার রাজাসহ ৩৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে। এরপর রেজিস চাকাভার সঙ্গে ৩৫ ও বার্লের সঙ্গে ৪৩ বলে ৬৩ রানের জুটিতে ম্যাচ নিয়ে এসেছিলেন উইলিয়ামস। শেষ ওভারের আগে তার ওই রান আউটে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। সেখান থেকেই রোমাঞ্চকর এজ জয় উদযাপন করে সাকিবরে দল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।