Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ গিলে খাবে

কানায় কানায় পূর্ণ সম্মেলনের মাঠ ঢাকা জেলা আ. লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

হাজার হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে মুখরিত ছিল শেরেবাংলা নগরের পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠ। কানায় কানায় পূর্ণ ছিল সম্মেলনের মাঠ। নেতাকর্মীরা নানা রঙের পোশাকে উৎসব মুখর পরিবেশে অংশ নিয়েছেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে। ঘোড়ার গাড়ি আর হাতির উপর চড়ে নেতাকর্মীদের সম্মেলনে যোগদান ভিন্ন সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আগারগাঁও আসেন ঢাকার ৫টি উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে আশপাশের সড়কগুলোতেও নেতাকর্মীরা অবস্থান করেন। নৌকার আদলে বড় আকৃতির মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্মেলন। কেন্দ্রীয় নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তৈরি করা হয় অসংখ্য তোরণ। সম্মেলনকে ঘিরে রাজধানী ছিল সাজ সাজ রব।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, এটি কোন বিভাগীয় সমাবেশ বা মহাসমাবেশ না। এটি একটি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। কত লোক হয়েছে আপনারাই দেখেন। এখানে তিনদিন আগে থেকে কেউ এসে শুয়ে থাকেনি।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা জানানে রংপুরে একটি সমাবেশ হচ্ছে। সেখানে তিন দিন আগে থেকে লোকজন গিয়ে স্টেজে, মাঠে ও রাস্তায় শুয়ে আছেন। আর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল শুয়ে আছেন টাকার বস্তার ওপর। সম্মেলনের নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা আসছে, আর তারা সেই টাকার ওপর শুয়ে আছেন। তিনি বলেন, বিএনপির সম্মেলনে কতজন লোক হয়েছে তা আমরা দেখেছি। আজকে শুধু ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে কত লোক হয়েছে আপনারা দেখে যান। এখানে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা নেই। তারপরও কত লোক।

ক্ষমতায় এলে বিএনপি আবারও লুটপাটের রাজনীতি শুরু করবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলটি থেকে সাবধানে থাকতে দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা মরন কামড় দিয়েছে। মরন কামড় আর জীবন কামড়; যে কামড়ই দেন বলে যাচ্ছি শান্তিপূর্ণভাবে আসুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত মাথা থেকে নামান। তত্ত্বাবধায়ক আর হবে না। আদালত জাদুঘরে পাঠিয়েছে। আমাদের দোষ না। উচ্চ আদালত নিষিদ্ধ করেছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক না হলে নির্বাচনে যাবেন না? যাবেন, যাবেন....গাধা পানি ঘোলা করে খায়। সময় আসলে দেখা যাবে?

ওবায়দুল কাদের বলেন, সাবধান, বিএনপি থেকে সাবধান। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লিখেছিল। এবার ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশশুদ্ধ গিলে খাবে। বড়লোকের বাড়ির সামনে লেখা থাকে কুকুর থেকে সাবধান। আমরা বলি বিএনপি থেকে সাবধান।

আবারও হাওয়া ভবন আনতে তারা ‘টেক ব্যাক’ বাংলাদেশের কথা বলছেন বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপির জন্য দেশের বাইরে থেকে টাকা আসছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির জন্য দুবাই থেকে টাকা আসছে। খোঁজ পেয়েছি। ব্যবস্থা নিচ্ছি। টাকা উড়ে আকাশে, টাকা উড়ে বাতাসে। টাকার খেলা হবে না। খেলা হবে আপনাদের সেই সাম্প্রদায়িক শক্তির পৃষ্ঠপোষক খুনি ডাকার সরকার, যাদের হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়, গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, যাদের হাতে স্বাধীণতা-মুক্তিযুদ্ধের মুল্যবোধ নিরাপদ নয় তাদের সাথে খেলা হবে।

তিনি বলেন, খেলা হবে। নির্বাচনে খেলা হবে। ভোটচুরির বিরুদ্ধে খেলা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে যারা ছিনিবিনি খেলে, তাদের সাথে খেলা হবে। খেলা হবে ভুয়া ভোটার তালিকা করার বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনও শক্তি হারাতে পারবে না, ইনশাল্লাহ।

এ সময় বিএনপি নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, নেতাটা কে? মুচলেকা দিয়ে গোপনে জীবনে আর রাজনীতি করবো না। লন্ডনে চলে গিয়েছে কে? সেই তারেক হচ্ছে ফখরুরেল নেতা। ফখরুলকে ফরমায়েশ দেয় ফখরুল সেভাবে পুতুলের মতো নাচে। বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতিতে, ক্ষমতায় শেখ হাসিনার মতো সৎ লোক, পরিশ্রমী লোক চায়। মানুষের কষ্টে যার রাতের ঘুম নষ্ট হয় সেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গত ৪৭ বছরে দেশের সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে।

বিএনপি নির্বাচনে আসলে আসবে, না আসলে নাই: সালমান এফ রহমান
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বিএনপি এখন বড় বড় কথা বলছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে নাকি তারা নির্বাচনে আসবে না। আমরা বলে দিতে চাই, সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। কোনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। তারা নির্বাচনে আসলে আসবে, না আসলে নাই।

বিগত এক-এগারোর সরকারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় আওয়ামী লীগ নেত্রীকে জেলে রেখে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তা সফল হয়নি। আগামীতে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর পেছনে থেকে জেলার পাঁচটি আসনে এমপি উপহার দেবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি দেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র বানাতে চায়। আমরা বেঁচে থাকতে সেটি হতে দেবো না, দেবো না। জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধু, শেখ কামাল, শেখ রাসেলকে হত্যার দায়ে তার ফাঁসি হতো।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ঢাকা জেলার সম্মেলন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। বিএনপিকে সাম্প্রদায়িক শক্তি। তারা সংবিধানকে পদদলিত করেছে। সাম্প্রদায়িক সংঘাত করেছে বিএনপি-জামায়াত। তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করতে চায়। কোনও যড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না। সব সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আমরা প্রতিহত করবো।

শুনেছি বিএনপি নাকি মন্ত্রিপরিষদও গঠন করেছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ক্ষমতা দখল করে নেবে বলে শুনেছি। তারা নাকি মন্ত্রিপরিষদও গঠন করেছে। বিএনপি এটি কীভাবে করতে পারে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের কাতারে থাকে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে চলে। এ সমাবেশে লাখো জনতার উপস্থিতি বলে দিচ্ছে আমরা আবারও সরকার গঠন করবো। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নৌকার জয় নিশ্চিত করতে হবে, ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম। অতিথি হিসেবে ছিলেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কামরুল ইসলাম; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম; বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বেনজির আহমেদ আর সঞ্চালনা করেন মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান। এর আগে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। ওই সম্মেলনে বেনজির আহমেদ সভাপতি এবং মাহবুবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাদের নেতৃত্বে ৭১ সদস্যের ঢাকা জেলা কমিটি গঠিত হয়।



 

Show all comments
  • hassan ৩০ অক্টোবর, ২০২২, ৫:০২ পিএম says : 0
    তোমরাতো দেশ পুরা গিলে খেয়েছ আর তো কিছু বাকি রাখো নাই >>আমাদের দেশ আল্লাহর দেশ আল্লাহর আইন চলবে >>কোন কাফেরের আইন চলবে না>> ও মুসলিম তোমরা কি মারা গেছে নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও চার খলিফা কি কাফের আইনের শাসন করেছিলেনছিলেন??? উনি যুদ্ধ করেছিলেন কাফেরদের বিরুদ্ধে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য আর আজকে আমাদের দেশে চলে কাফেরের আইন দিয়ে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ