Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট বেচাকেনায় ব্যস্ত ভোটার ও প্রার্থীরা

| প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক ও আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে নীরব ভোট বেচা-কেনায় ব্যস্ত ভোটার ও প্রার্থীরা। জনপ্রতিনিধি ভোটারদের চাহিদা সাধারণ জনগণের চেয়ে বেশ উচ্চাবিলাসী। মর্যাদার লড়াইয়ে জিততে ভোটারদের সে চাহিদা পূরণ করা প্রার্থীদের জন্য ‘ওপেন সিক্রেট’। নগদ ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, টিভি, ফ্রিজ, শাড়ি-কাপড়সহ নানা উপহার সামগ্রী গোপনে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে ভোটারদের কাছে। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায় এড়াতে প্রার্থীরা এবং সাধারণ জনগণের কাছে প্রকাশের ভয়ে (স্থানীয় জনপ্রতিনিধি) ভোটাররা ভোট কেনা-বেচার বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দু’নেতার মতানৈক্যের ফলে ভোট কেনাবেচার এ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য ভোটারদের। উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার প্রতীক পেয়েছেন প্রার্থীরা। নির্বাচন আগামী ২৮ ডিসেম্বর।
রিটার্নিং অফিসার খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান জানান, গতকাল সোমবার সকালে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ ‘আনারস’, রূপসা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আলী আকবর শেখ ‘কাপ পিরিচ’ এবং আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়দানকারী অজয় সরকার পেয়েছেন ‘চিংড়ি মাছ’ প্রতীক। এছাড়া ১৫টি সদস্য পদে ৫৯ জন সাধারণ সদস্য এবং ৫টি সংরক্ষিত সদস্য পদে ১২ জন মহিলা প্রার্থী প্রতীক পেয়েছেন।
খুলনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ করতে প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৫টি ওয়ার্ডে ১৫টি ভোট কেন্দ্র থাকবে। নির্বাচনে মোট ভোটার ৯৭০ জন। তাদেও মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৪১ জন এবং মহিলা ভোটার ২৩১ জন।
খুলনা জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শফিকুল আলম মনা বলেন, খুলনায় সরকার বিরোধী দল-মতের তিন শতাধিক ভোটার রয়েছেন। কেন্দ্রে থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। স্থানীয়ভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ সম্পাদক এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপি’র অনুসারীরা বিদ্রোহী প্রার্থীর দিকেই অগ্রসর হচ্ছেন। এ সুযোগেই বিদ্রোহী প্রার্থীরাই বেশি অর্থ ছড়িয়ে ভোটারদের বাগে আনার চেষ্টায়রত।
ভোটারদের একাধিক সূত্র জানান, নির্বাচন ঘিরে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থকদের অফার দেয়া হয় টিভি-ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ নানা সামগ্রীর। নারী ভোটারদের জন্য বাহারি শাড়ী, দেশি-বিদেশি শাল, গয়নাসহ নানা আকর্ষণীয় উপহার। উপঢৌকন দেবার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই। শুরুতেই প্রার্থীরা একজন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিকে সমর্থক ও একজন প্রস্তাবককে টাকার বিনিময়ে ‘ম্যানেজ’ করেছেন। পরে বাকি ভোটারদের বাগে আনতে নানা প্রলোভন দেখানো হচ্ছে।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থীরা সরাসরি যোগাযোগ করছেন কম। তাদের অনুসারীরাই বেশি যোগাযোগ করছেন। ইউপি চেয়ারম্যানরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলেও; ইউপি মেম্বররা চাইছেন নগদ কিছুই। কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপের ভোটারদের প্রথম পছন্দ নগদ অর্থ। নগদ ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রæতি পেয়েছেন অনেকেই। সংরক্ষিত ইউপি সদস্যদের (নারী ভোটার) নগদ অর্থের সাথে শাড়ি ও শীতের শাল-চাদরও দেয়া হবে। তবে বটিয়াঘাটা, ডুমরিয়া, রূপসা, দিঘলিয়া, তেরখাদা ও ফুলতলার ভোটারদের নগদ অর্থের সাথে চাহিদা তালিকায় রয়েছে-টিভি, ফ্রিজসহ নানা উপহার সামগ্রী। ভোটারদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- উপহার সামগ্রী দেবার প্রতিশ্রæতিতে এগিয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী অজয় সরকার ও আলী আকবর শেখ।
ক্ষমতাসীন দল মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, সতন্ত্র প্রার্থী ভোটারদের বিভিন্ন প্রলোভন দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ আমার কানেও আসছে। আর্থিক প্রলোভনে বিক্রি না হতে ভোটারদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন তিনি। এব্যাপারে জানতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী আকবর শেখ ও অজয় সরকারের ব্যবহৃত মোবাইলে কয়েকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ