২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ২০ অক্টোবর পালিত হল ‘ওয়ার্ল্ড অস্টিওপরোসিস ডে’ বা বিশ্ব হাড়ক্ষয় দিবস। অষ্টিওপোরোসিস বলতে শরীরের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়াকে বুঝায়। অষ্টিওপরোটিক হাড় অনেকটা মৌচাকের মত হয়ে যায়। এতে হাড় ঝাড়রা বা ফুলকো হয়ে যায় বা যাতে অতি দ্রুত ভেঙে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মারাত্নক হাড় ক্ষয়ে হাঁচি বা কাশি দিলেও তা ভেঙে যেতে পারে।
পঞ্চাশ বছর পেরুবার পর থেকে শরীরের হাড় ক্ষয় বা এর লক্ষ্মণ সমূহ প্রতিভাত হতে থাকে। কিন্তু এর শুরু কিন্তু অনেক আগে থেকেই হতে থাকে। এক পুরুষ বা মহিলার দেহের হাড় সাধারনত ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত ঘনত্বে বাড়ে; ৩৪ বছর পর্যন্ত তা বজায় থাকে। এরপর থেকে হাড় ক্ষয় পেতে থাকে।
যাদের ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি তাদের দ্রুত হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। মহিলাদের মাসিক পরবর্তী সময়ে হাড় ক্ষয়ের গতি খুব বেগ বান হয়। এ ছাড়াও অনেকগুলো কারণ বা ঝুঁকি হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে (পরে আলোচিত হল)।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০% রজঃনিবৃত মহিলা হাড়ক্ষয়ে আক্রান্ত। ইউরোপের চিত্রও অনেকটা তেমনই। অন্ততপক্ষে ৪০% মহিলা ও ১৫%-৩০% পুরুষ তাদের জীবদ্দশার বাকি সময়ে স্বল্প আঘাতে হাড় ভাঙার শিকার হবেন (যা হাড় ক্ষয়ের কারণেই হয়ে থাকবে)। আর যাদের একাবার হাড় ভাঙার ঘটনা ঘটে, তাদের পরবর্তী হাড় ভাঙার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। একাবার পাঁজরের হাড় ভাঙলে কোমরের হাড় ভাঙার সম্ভাবনা ২-৩ গুন বৃদ্ধি পায় এবং উরুর হাড় ভাঙার সম্ভাবনা ১-৪ বাড়ে। তবে, বাংলাদেশের মহিলা- পুরুষদের মধ্যে হাড় ক্ষয়ের হার ও ঝুঁকির উপস্থিতির তথ্য অপ্রতুল।
হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি সমূহঃ
অসংশোধনযোগ্য ঝুঁকিঃ
১। বয়োবৃদ্ধি। ২। স্ত্রী লিঙ্গ। ৩। জীনগত ত্রুটি। ৪। অপারেশনের কারণে ডিম্বাশয় না থাকা। ৫। হায়পোগোনাডিজম (পুরুষ ও মহিলার)। ৬। অতি খর্বাকৃতি
সংশোধনযোগ্য ঝুঁকিঃ
১। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি। ২। ধূমপান। ৩। অপুষ্টি [ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, কে ইত্যাদি]। ৪। ক্ষীনকায় দৈহিক আকার। ৫। আমিষ নির্ভর খাদ্যাভ্যাস। ৬। বেশি বয়সে অতিরিক্ত চা/কফি/ চকোলেট গ্রহণের অভ্যাস। ৭। খাদ্যে বা বাতাসে ভারী ধাতু ৮। কোমল পানীয় ও মদ্যপান
মেডিক্যাল ঝুঁকি সমূহঃ
১। দীর্ঘ দিনের অচলাবস্থা বা বেড রিডেন, ২। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন [বাংলাদেশের রোগীদের মধ্যে এটি খুব ব্যাপক; বিশেষ করে অস্বীকৃত/ আস্বীকৃতদের দ্বারা নির্দেশিত হয়ে যারা ওষুধ সেবন করছেন, প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির (কবিরাজি, আয়ুর্বেদী, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ইত্যাদি) মাধ্যে স্টেরয়েডের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি] ৩। অন্যান্য হরমোন জনিত রোগঃ হাইপারথাইরয়িডিজম, হাইপারপ্যারাথাইরয়িডিজম, কুসিং সিংড্রম, ডায়াবেটিস, এক্রমেগালি, অ্যাডিসন রোগ, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, এসএলই, কিডনি অকার্যকারিতা ইত্যাদি।
উপসর্গঃ
প্রথমত কোন শারীরিক লক্ষ্মণ নাও থাকতে পারে। তবে কোমরে বা পিঠে বা অন্য কোথাও ব্যথা, বিশেষ করে তা ব্যথা নাশকে কমেেছ না, এমন চরিত্রের। কারো কারো দৈহিক উচ্চতা কমে থাকবে, কুঁজো হয়ে যাওয়া বা সামনে ঝুঁকে থাকা। তবে সংগোপনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মারাত্বক ব্যাপার হল, মেরদন্ডে ফাটল বা চিড় ধরা এবং ঠুনকো আঘাতেই হাড় ভাঙা।
সনাক্তকরণঃ
অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হতে পারেঃ কিছু ঘনত্ব পরিমাপের জন্যে, কিছু আবার ঝুঁকিসমুহ চিহ্নিত করার জন্যে। বি এম ডি পরীক্ষাটি এ কাজে সবচেয়ে ভালো।
চিকিৎসাঃ
এ রোগে প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হবে ঝুঁকি শনাক্তকরণ, সম্ভব হলে তা রহিত করা।
এরপর বেশ কিছু ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলোর কোন একটি নির্দিষ্ট রোগিণী বা রোগীর জন্যে প্রযোজ্য হতে পারে।
যেহেতু, হাড়ক্ষয় (অস্টিওপোরোসিস) একবার হলে আর পেছন দিকে ফিরে যাওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ, তাই একে আগে ভাগেই রোধ করার জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচী নিতে হবে। এর অংশ হিসেবে কারা কতটুকু ঝুঁকিতে আছেন বা কারা ইতোমধ্যেই হাড় ক্ষয়ে ভুগছেন, তা নির্ধারণ করতে হবে এবং উপযোগী চিকিৎসা নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে।
আর হাড় ক্ষয় রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলোর বিবেচনা করা যেতে পারেঃ
*নিয়মিত ব্যায়াম,
*স্টেরয়েডসহ ক্ষতিকারক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা,
*পুষ্টি নিশ্চিতকরণ,
*ধূমপান ত্যাগ,
* প্রয়োজনে পরিমিত ক্যালসিয়াম সেবন।
ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
Email: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।